ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

তবুও সোনালি আঁশে স্বপ্ন দেখছেন কৃষক!

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৫ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১৯
তবুও সোনালি আঁশে স্বপ্ন দেখছেন কৃষক! পাটগাছ, ছবি: বাংলানিউজ

বগুড়া: মাঠে মাঠে দাঁড়িয়ে রয়েছে পাটগাছ। বাতাসের ছোঁয়া পেলেই যেন হেলে-দুলে মাটিতে পড়ে যেতে চায় গাছগুলো। সোনালি আঁশ খ্যাত গাছগুলো চারদিকে ছড়াচ্ছে সবুজের সমারোহ। একেবারে হারিয়ে যায়নি সোনালি আঁশ খ্যাত সেই পাট।

আগের মতো বৃহৎ আকারে চাষ না হলেও কৃষকরা এখনো পাট চাষ অব্যাহত রেখেছেন। তবে নানাবিধ সমস্যার কারণে প্রত্যেক বছরই পাটের আবাদ কমিয়ে আনছেন কৃষকরা।

এছাড়া রয়েছে নানা সমস্যা। খড়ায় পাটের ক্ষেতগুলো খাঁ খাঁ করছে। প্রচণ্ড দাবাদহ ক্ষেতে পাটের রুগ্ন অবস্থা। এবার পাট লাগানোর শুরুতেও পানি সঙ্কট ছিলো। আবহাওয়ার হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে, পাট কাটার পরও হয়তো পানি সঙ্কট কাটবে না। তবু সোনালি আঁশে স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা!

বুধবার (২৬ জুন) বগুড়া জেলার বেশ কয়েকটি এলাকার কৃষকদের সঙ্গে পাট চাষ সম্পর্কে আলোচনাকালে এমন হতাশার চিত্র উঠে আসে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারাও পাট চাষিদের কথার সঙ্গে খুব একটা দ্বিমত করেননি।

জেলার ১২ টি উপজেলায় কমবেশি পাট চাষ হয়েছে। এরমধ্যে যমুনা বেষ্টিত সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, ধুনট, শাজাহানপুর, শেরপুর, নন্দীগ্রাম উপজেলায় তুলনামূলক বেশি পাট চাষ হয়ে থাকে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে এ জেলায় ১২ হাজার ২৮১ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। অথচ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিলো ১৫ হাজার ৫৫০ হেক্টর। তবে গেলো মৌসুমে এ জেলায় ১৩ হাজার হেক্টরেরও অধিক জমিতে পাট চাষ করা হয়েছিলো।  
পাট চাষি ইসমাইল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, যথা সময়ে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় শুরুতেই সেচ দিয়ে পাটের আবাদ করতে হয়েছে। শুরুতেই প্রচণ্ড তাপদাহের প্রভাব পড়ে পাট চাষের ওপর। এতে অনেক সময় চারা গজানোর সমস্যা দেখা দেয়।

আরেক চাষি ফরহাদ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, এবার পাটের জন্য আবহাওয়া ভালো ছিলো না। এখনো নেই। আর এ ধরনের আবহাওয়ার কারণে উৎপাদনে যথেষ্ট প্রভাব পড়বে। ফলন কম হবে। এছাড়া পাটের বাজারদরের কোনো ভরসা নেই। ইচ্ছেমত দাম দিয়ে ব্যাপারীরা পাট কিনে থাকেন। এতে তাদের কষ্টের ফসল বিক্রি করে আবাদ শেষে লোকসান গুণতে হয়।
 
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয়ের উপ-সহকারী ‍কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান জানান, জেলায় ভারতীয় বিভিন্ন জাতের পাট চাষ করা হয়েছে। দেশীয় জাতের মধ্যে রয়েছে ফাল্গুনি জাতের পাট।
 
পাট চাষ কমে যাওয়া সম্পর্কে এ কর্মকর্তা জানান, পানি সঙ্কট ও বীজের বাড়তি দামের কারণে পাটের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। এছাড়া শ্রমিক সঙ্কট তো রয়েছেই। পাটের কীটনাশকও ঠিকমত পাওয়া যায় না।  

সবমিলে প্রতিবিঘা জমির বিপরীতে কমপক্ষে উৎপাদন ব্যয় প্রায় ১৩ থেকে ১৪ হাজার টাকা। সেই জমি থেকে সর্বোচ্চ ৮ থেকে ৯মণ হারে পাট পাওয়া যায়। অনেক ক্ষেত্রে আবার এর চেয়েও কম ফলন পাওয়া যায়।
 
তিনি আরও জানান, পাটের ক্রেতা নির্ধারিত। সাধারণ ভোক্তারা পাট কেনেন না। এ কারণে ব্যাপারী ইচ্ছেমত পাটের দাম নির্ধারণ করে পাট ক্রয় করেন। এ ক্ষেত্রে কৃষকের হাত-পা অনেকটা বাধা।

ফলে অনেক ক্ষেত্রে লোকসান দিয়ে পাট বিক্রি করতে বাধ্য হন কৃষক। এসব কারণে দিনদিন পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষিরা যোগ করেন কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান।  
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১৯
এমবিএইচ/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।