ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সবজির বাজারে আগুন, বাজার ভেদে দাম

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৩ ঘণ্টা, জুলাই ২, ২০১৯
সবজির বাজারে আগুন, বাজার ভেদে দাম বাজার।

ঢাকা: রাজধানীর বাজারগুলোতে হু হু করে বাড়ছে সবজির দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সব সবজির দাম কেজিতে গড়ে ১০ টাকা বাড়লেও সপ্তাহ পেরুনোর আগেই দাম কেজিতে গড়ে আরও ৫ টাকা বেড়েছে। তবে বাজারভেদে ভিন্ন ভিন্ন দাম লক্ষ্য করা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। এছাড়া মাছ, মাংসসহ মসলা ও চাল ডালের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

মঙ্গলবার (০২ জুলাই) রাজধানীর মিরপুর-১, ১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, তালতলা, বৌবাজার এলাকা ঘুরে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহের শুরুতে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে শসা বিক্রি হলেও এক বিক্রেতাকে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় তা বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে।

৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে গাজর। এর আগে দেশি পাকা টমেটো ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া গেলেও এখন তার দাম ৪৫ থেকে ৫৫ এবং আমদানি করা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। যা গত সপ্তাহে ছিলো ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। দাম কমেছে আবার ঢেঁড়সের। আবারও গত সপ্তাহের মতো ৩০ থেকে ৪০ টাকায় কেজিপ্রতি তা বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহের শুরুতে তা ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজিপ্রতি ঝিঙ্গা বিক্রি হলেও ৭ টাকা বেড়েছে। দাম বেড়ে স্থিতিশীল রয়েছে পেঁপের দাম। বর্তমানে পিস প্রতি পেঁপে ৫০ টাকা হলেও আগের সপ্তাহে ছিলো ৩০ থেকে ৪০ টাকা। ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া বরবটির ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া উস্তা বাজারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫৫ টাকার মধ্যে। ৫ টাকা বেড়ে সপ্তাহের মধ্যেই একই দামে বিক্রি হচ্ছে করলা, কাকরোল ও বেগুন। তবে বাজারভেদে আরও ৫ টাকা কম দামেও বিক্রি হতে দেখা গেছে। দু’তিন দিনের ব্যবধানে ১০ টাকা দাম বেড়ে কেজিপ্রতি পটল বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়।

রাজধানীর মিরপুর-১ এর পাইকারি বাজারে সবজির দাম গড়ে ৫ টাকা হারে কম দেখা গেলেও মিরপুর-১০, শেওড়াপাড়া, তালতলা ও কাজীপাড়া এলাকায় উল্লেখিত দামে দেখা গেছে।

এদিকে আবার বউবাজার এলাকায় মিরপুর-১ এর কাচাবাজেরর দামের সঙ্গে মিল দেখা গেছে।

ক্রেতাদের মতে, মূলত ক্রেতা বুঝে সম্মিলিতভাবে বাজারে দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়ার ফলাফল এটি। বিক্রেতারা পাইকারি বাজার থেকে পরিবহন খরচের কারণে দাম একটু বাড়ার কথা বললেও বউবাজার এলাকায় দাম না বাড়া সেটাকে মিথ্যা প্রমাণিত করে।

বর্ষায় সবজির দাম বাড়ে উল্লেখ করে শেওড়াপাড়া এলাকায় রিপন নামে এক সবজিবিক্রেতা বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কিছু সবজি যেমন বেগুন, কাকরোল, করলা, উস্তা এগুলো কারওয়ান বাজার থেকে আনতে হয় আর বাকিগুলো মিরপুর-১ থেকে। এখানেও একটা পরিবহন খরচ আছে। এর ভাড়াও দিনকে দিন বাড়ছে। আর বর্ষার শুরুতে সবসময় সবজির দাম বাড়ে এবং বর্ষাকালের মাঝামাঝি সময় থেকে শেষ পর্যন্ত সবজির দাম আবার ব্যাপক কমবে।

বউবাজার এলাকায় আজিজ নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, আমাদেরও একই। কারওয়ান বাজার আর মিরপুর-১ নম্বরের পাইকারি বাজার থেকেই সব সবজি এলেও আমাদেরও ট্রান্সপোর্ট খরচ যোগ করেই বিক্রি করা হয়। কিন্তু এ বাজারে অন্যান্য বাজারের মতো বেশি রেটের চাঁদাবাজি নেই। সেখানে বিক্রি বেশি চাঁদাবাজিও বেশি। তাছাড়া এই এলাকায় যারা থাকেন তাদের বেশিরভাগই কম আয়ের মানুষজন। তারা বেশি দাম হলে না কিনেই বাড়ি ফিরে যায়। তাই দাম অন্যান্য জায়গার চেয়ে কম থাকে। তবে মাঝে সব বাজারেই একই দাম রাখতে হয় বাজার কমিটির নির্দেশনা অনুসারে।

অপরিবর্তিত রয়েছে পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচের দাম। পেঁয়াজ আগের মতো খুচরা বাজারে ৩০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আর পাইকারিতে পেঁয়াজের পাল্লা (৫ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। আগের মতোই কাঁচা মরিচের পোয়া (২৫০ গ্রাম) বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। আমদানি করা আদা বিক্রি হচ্ছে দ্বিগুণ দামে। ১৬০ টাকা কেজি দরে এখন বিক্রি হলেও আগে তা বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকায়। আবার দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা। আগে ছিলো ৯০ টাকা। রসুন চায়না ১৬০ টাকা, দেশি ১২০ টাকা।

তবে হুট করে আদার দাম কেন এত বেড়েছে তা জানে না বেশিরভাগ ক্রেতা-বিক্রেতারা।

সবজির দামে অস্বস্তির পর স্বস্তি দিচ্ছে কেজিতে ২০ টাকা কমা ব্রয়লার মুরগির দাম। বাজারে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগির বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি, যা আগে ছিলো ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি। একইসঙ্গে কমেছে দেশি ও কক ও লেয়ার মুরগির দাম। বর্তমানে প্রতিকেজি লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহেও বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকা দরে। পাশাপাশি প্রতি পিসে কমেছে দেশি ও ককের দাম।

দেশি প্রতি পিস মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ খেকে ৪০০ টাকায়, যা ছিলো ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। কক প্রতি পিস ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা। মুরগির দাম কিছুটা কমলেও অপরিবর্তিত রয়েছে গরু ও খাসির মাংস ও ডিমের দাম। গরুর মাংস বাজারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫২৫ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি দরে। আর খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা কেজি। আর ফার্মের মুরগির ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১০৬ টাকা। হাঁসের ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা এবং দেশি মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা ডজন। তবে এক্ষেত্রেও বাজারভেদে ৫ টাকা কম-বেশি দামে এসব পণ্য বিক্রি হতে দেখা গেছে।

একই পরিস্থিতি মাছের বাজারেও। দাম বাড়া কমার কোনো প্রভাব নেই। দাম বেড়ে একই দাম চলছে প্রায় দীর্ঘ এক মাস ধরে। তবে আর সপ্তাহখানিকের ব্যবধানে মাছের দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে মাছ বিক্রেতারা। বাজারে তেলাপিয়া মাছ কেজিপ্রতি ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা, পাঙাশ মাছ ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি, রুই মাছ ২৮০ থেকে ৬০০ টাকা, পাবদা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, টেংরা ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, শিং ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা এবং চিতল মাছ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা দরে।

মিরপুর-১ কাচাবাজারের সুমন নামে এক মাছবিক্রেতা বলেন, মাছের দাম কমবে শুধুমাত্র বিলের মাছের প্রভাবে। বর্ষাকাল শুরু হলে বিলে পানি চলে আসলে মাছ বেশি ধরা পড়ে। তখন দাম কমে। এখনও সেই বেশি পরিমাণ মাছের চালান আসা শুরু করেনি। তাছাড়া এখন মাছের বাজারে কাটতিও কম আবার বিভিন্ন ধরনের মাছও কম।

মিরপুর-১০ এলাকায় মিরাজ মাহবুব নামে এক ক্রেতা বলেন, বাজারে কয়েক ধরনের মাছ আছে। তাও সব বরফ দেওয়া মাছ। দেখেও ভালো লাগে না আবার দামও বেশি। তাই মাছ কেনা হয় না। বর্ষার মাছের আশায় আছি।  

অপরিবর্তিত রয়েছে চাল, ডালসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারদর। বাজারে প্রতিকেজি নাজিরশাইল ৫৮  থেকে ৬০ টাকা, মিনিকেট চাল ৫৫ থেকে ৫২ টাকা, স্বর্ণা ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা, বিআর ২৮ ৩৮ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া প্রতিকেজি খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ২৭ টাকা, প্যাকেট ৩২ টাকা, লবণ ৩০ থেকে ৩৫, পোলাউর চাল ৯০ থেকে ৯৫ টাকা, খোলা ময়দা ২৮ টাকা, প্যাকেট ৩২ টাকা, প্রতি কেজি চিনি ৫২ টাকা, ছোলা ৮০ থেকে ৮৫ টাকা, খেসারি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, মসুর ডাল ১০০ থেকে ১১০ টাকা, বুট ৩৮ থেকে ৪০ টাকা।

সামগ্রিক বাজারদর বিষয়ে তালতলা এলাকার রেশমা চৌধুরী নামে এক ক্রেতা বলেন, বাজারে এসে সবচেয়ে বেশি কেনা হয় সবজি। কিন্তু তাতেই এখন হাত দেওয়া যাচ্ছে না দামের আগুনের জন্য। আর অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যে যে হাত দেওয়া যাচ্ছে তাও না। স্থিতিশীল থাকলেও দাম বেড়েই তা স্থিতিশীল হয়েছে। সবচেয়ে কষ্টের বিষয় সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতেই দাম বেড়েই চলেছে। এটার দিকে কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া উচিত।

বাংলাদেশ সময়: ১১২৩ ঘণ্টা, জুলাই ০২, ২০১৯
এমএএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।