ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

প্রবৃদ্ধিতে ঝুঁকি তৈরি করতে পারে খেলাপি ঋণ 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৫৩ ঘণ্টা, জুলাই ৭, ২০১৯
প্রবৃদ্ধিতে ঝুঁকি তৈরি করতে পারে খেলাপি ঋণ  ফাইল ফটো

ঢাকা: অস্বাভাবিক খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি, অভ্যন্তরীণ তারল্য সংকট ও বৈশ্বিক আর্থিক চ্যালেঞ্জ দেশের প্রবৃদ্ধির গতিতে নেতিবাচক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য বিরোধের অনিশ্চয়তা, বৈশ্বিক বাজারে অর্থনৈতিক মন্দা, ব্রেক্সিট চুক্তি বিলম্বিত হওয়া প্রভৃতি দেশের প্রবৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের জানুয়ারি-মার্চের সর্বশেষ ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একটি ভালো অর্থনীতিসহ আর্থিক নীতিমালা ব্যবস্থা প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি ও মূল্য স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারে।  

বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকের প্রতিবেদনে খেলাপি ঋণ, মূলধন ঘাটতি, নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতিসহ ব্যাংকিং খাতের সূচকগুলোর বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

সামগ্রিকভাবে খেলাপি ঋণ পর্যালোচনা করলেও মূলত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের বিষয়টি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের মার্চ শেষে প্রথমবারের মতো দেশের ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথমার্ধে ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা থেকে ১৮ শতাংশ বা ১৬ হাজার ৯৬২ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা।

এছাড়া, ২০১৯ সালের জানুয়ারি-মার্চ শেষে খেলাপি ঋণ মোট বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ৩৭ শতাংশ। ডিসেম্বর শেষে ছিল ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ। একই সময়ে বিতরণ করা উপমান, সন্দেহনজক, মন্দ বা ক্ষতিকর ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৩৩ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা। যা তিন মাস আগে ছিল ৯ লাখ ১১ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা।

জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা দেশের ব্যাংকিং খাতে ক্রমবর্ধমান খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনতে নীতি নির্ধারকদের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

তারা বলেন, শ্রেণিকৃত ঋণের ক্রমবর্ধমান প্রবণতা অব্যাহত থাকলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি ও আর্থিক স্থিতিশীলতা বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাবেক মহাপরিচালক তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, খেলাপি ঋণ ইস্যুটি অবিলম্বে সমাধান করা উচিৎ। এ সমস্যা সমাধানে দেশের ব্যাংকিং খাতের সুশাসন নিশ্চিত করা আবশ্যক।  

তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার জন্য ঋণ অনুমোদন করার আগে ব্যাংকগুলোকে অবশ্যই বিদ্যমান বিধি-নিষেধগুলো মেনে চলতে হবে।

বিশ্লেষকরা নতুন আইন প্রণয়ন করে খারাপ ঋণ সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংস্থাগুলোর কাছে বিক্রি করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। খেলাপিদের কাছ থেকে ব্যাংকের অর্থ পুনরুদ্ধারের জন্য কোম্পানিগুলোর ক্ষমতায়ন করতে হবে বলে মনে করেন তারা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদেশে অর্থপাচার ও খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির কারণে ব্যাংকগুলোতে আমানতের প্রবৃদ্ধি কমেছে।

এতে আরও বলা হয়, জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১ শতাংশ ধরে রাখতে হলে ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশি-বিদেশি অর্থনৈতিক কার্যক্রম জোরালো করতে হবে। এজন্য রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ানো ও সরকারের মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যক্রম আরও ত্বরান্বিত করতে হবে।  
বিদ্যুৎ উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য উন্নতির কারণে শিল্প খাত থেকে প্রবৃদ্ধি বাড়ছে।  

প্রতিবেদন বলা হয়েছে, প্রবৃদ্ধি অর্জনে বাম্পার কৃষি পণ্য উৎপাদন সেবা খাতের কার্যক্রম আরও গতিশীল করেছে। ক্রমবর্ধমান বহিরাগত চাহিদার কারণে রপ্তানি বৃদ্ধিতে একটি প্রবৃদ্ধি বজায় রাখা হয়েছে। এসব সূচকের সঙ্গে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনাটাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৩ ঘণ্টা, জুলাই ০৭, ২০১৯
এসই/একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।