ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

খেলাপি ঋণ ঠেকাতে যত উদ্যোগ

শাহেদ ইরশাদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫১ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৯
খেলাপি ঋণ ঠেকাতে যত উদ্যোগ

ঢাকা: বিশেষজ্ঞ মহল থেকে শুরু করে খেলাপি ঋণ নিয়ে সর্বত্রই চলছে আলোচনা আর সমালোচনা। যা শেষ পর্যন্ত সংসদেও উঠেছে। তবে এই ঋণ আদায় এবং খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খেলাপি ঋণ কমাতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাংলাদেশ ব্যাংক, সরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), বেসরকারি ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবি, এমডিদের সংগঠন এবিবির সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। নীতিমালাও সংশোধন করা হয়েছে।

আশা করা হচ্ছে-এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে খেলাপি ঋণ কমে আসবে।  

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, চলতি বছরের মার্চ শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা। যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এই সময়ে ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে ৯ লাখ ৩৩ হাজার ৭২৭ কোটি টাকার।
 
আর এই খেলাপি ঋণ কমাতে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে অর্থমন্ত্রী আ হ স মুস্তফা কামালের উদ্যোগের অংশ হিসেবে গত ফেব্রুয়ারিতে ঋণ অবলোপন (রাইট অফ) নীতিমালা সংশোধন করা হয়েছে।  

এখন থেকে ৩ বছর হলেই মন্দমানের (কু-ঋণ) খেলাপি ঋণ অবলোপন করতে পারবে ব্যাংকগুলো। আগে মন্দ বা কু-ঋণ ৫ বছর না হলে অবলোপন করা যেত না। এছাড়া আগে মাত্র ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত খেলাপি ঋণ মামলা ছাড়াই অবলোপন করা যেত; এখন মামলা ছাড়াই অবলোপন করা যাবে ২ লাখ টাকার ঋণ।
 
এদিকে খেলাপি ঋণ ব্যাংকখাতের সমস্যা, সেটি কমিয়ে আনতে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে বলে দাবি করেছেন রূপালী ব্যাংকের এমডি আতাউর রহমান প্রধান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের উপদেষ্টা এসকে সুর চৌধুরী।  

তবে খেলাপি ঋণকে ব্যাংকিং খাতের সমস্যা নয় বলে মনে করেন সোনালী ব্যাংকের এমডি ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ। তবে তিনি এও বলেন, খেলাপি ঋণ এখন মহামারী আকার ধারণ করেছে। তাই এই মহামারী সমাধানে একটি বোর্ড গঠন করা উচিৎ।
 
সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার সমাধান বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের উপদেষ্টা এস কে সুর চৌধুরী বলেন, খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে সরকার ইতোমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা আশা করছি খুব শিগগির খেলাপি ঋণ কমে যাবে।
 
একই অনুষ্ঠানে রূপালী ব্যাংকের এমডি আতাউর রহমান প্রধান বলেন, খেলাপি ঋণের জন্য আমরা বরাবরই ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দোষারোপ করছি। ভারত, রাশিয়া, ইউক্রেনের খেলাপি ঋণ বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি।  

‘১৯৯৯ সালে দেশে খেলাপি ঋণ ছিলো মোট ঋণের ৪১ শতাংশ। সেটি এখন কমতে কমতে ১১ শতাংশে নেমে এসেছে। এটি কখনই মহামারী না। আমি এর সঙ্গে একমত না। বর্তমানে খেলাপিদের মধ্যে ৫ শতাংশ ইচ্ছাকৃত খেলাপি। বাকি ৫ শতাংশ অন্যান্য কারণে হয়েছে। ’
 
এদিকে নতুন অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই আ হ ম মুস্তফা কামাল ঘোষণা দেন, ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আর এক টাকাও বাড়বে না। এরপরই বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে খেলাপি ঋণ কমানোর জন্য নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
 
এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক, সরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান, এমডি, বেসরকারি ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবি, এমডিদের সংগঠন এবিবির সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী।  
 
এই উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় এখন ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে সর্বোচ্চ ১০ বছরের জন্য পুনঃতফসিল সুবিধা পাওয়া যাবে। ঋণের ধরণ বিবেচনা করে পরিশোধে এক বছরের জন্য গ্রেস পিরিয়ডও পাওয়া যাবে।  

অর্থাৎ প্রথম এক বছরে খেলাপিদের ঋণের কোনো কিস্তি পরিশোধ করতে হবে না। মওকুফ করা হবে অনারোপিত সুদের পুরোটা ও সুদ সাসপেন্সেস হিসাবে আরোপিত সুদও।
 
এছাড়া গত ১২ জুন খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণ খুঁজতে একটি কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, আল-আরাফাহ, ইসলামী ও ন্যাশনাল ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ে গঠিত এই কমিটিতে বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি রাখা হয়েছে।
 
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের এমডি ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, ঋণ গ্রহীতার সাফল্য নির্ভর করে সাপ্লাই চেইনের ওপর। আমাদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে একজন কারখানা করে পণ্য উৎপাদন ও বিক্রি করে বাকিতে। সেই বাকি টাকা আদায়ের জন্যও আইনের প্রয়োজন।  
 
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, আমি চাকরিকালীন সময়ে বেশ কয়েকটি সরকারি ব্যাংকে অডিট করেছি। সেই অডিট রির্পোটে বিস্তারিত তুলে ধরেছিলাম। কেন ঋণ খেলাপি হয়, কর্মকর্তারা কতটুকু দায়ী, ঋণ গ্রহীতার ব্যাংকের সঙ্গে যোগসাজশগুলো বিস্তারিত উল্লেখ করেছিলাম। সেগুলো বাস্তবায়ন করলে ব্যাংকিং খাতের সমস্যা খেলাপি ঋণ আরও কমে আসবে।
 
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, খেলাপি ঋণের সমস্যা সমাধানে এরই মধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা সরকারি ব্যাংকগুলোর সঙ্গে নিয়মিত আলোচনাও করে যাচ্ছি।

বাংলাদেশ সময়: ১০২৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৯
এসই/এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।