ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

যৌক্তিক মুনাফা ও পরিচালন ব্যয় কমাতে পারে সুদহার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৯
যৌক্তিক মুনাফা ও পরিচালন ব্যয় কমাতে পারে সুদহার গোলটেবিল বৈঠক

ঢাকা: ব্যাংকের পরিচালন ব্যয় কমানো, ঋণের গুণগতমান উন্নয়ন এবং যৌক্তিক মুনাফার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের মতো পদক্ষেপ নিলে সুদহার কমানো সম্ভব হবে।

মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে ‘ইন্টারেস্ট রেট অ্যান্ড এক্সপানশান অব ব্যাংক ক্রেডিট’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
 
প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব পদক্ষেপ নিলে অর্থনৈতিক সূচকের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক হবে।

সুদহার না কমার অন্যতম কারণ খেলাপি ঋণের উচ্চ সুদহার। বিশ্বের অন্যান্য দেশে খেলাপি ঋণ কমানোর জন্য রাষ্ট্রীয় মালিকানায় অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি গঠন করেছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সরকার এ ধরনের উদ্যোগ নিতে পারে। যা খেলাপি ঋণকে নিয়ন্ত্রণ এবং সুদহার কমাতে সহায়তা করবে।  

বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএম’র ড. মোজাফফর আহমদ চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা।  

এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিআইবিএম’র মহাপরিচালক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মহা. নাজিমুদ্দিন।  

স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিআইবিএম’র অধ্যাপক এবং পরিচালক (গবেষণা, উন্নয়ন ও পরামর্শ এবং প্রশাসন ও হিসাব) ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জি। তিনি তার বক্তব্যে সুদহারের বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করেন।

গোলটেবিল বৈঠকে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএম’র অধ্যাপক মো. নেহাল আহমেদ। চার সদস্যের একটি গবেষণা দল এ গবেষণা সম্পন্ন করে।  

মূল প্রবন্ধে বিআইবিএম’র অধ্যাপক মো. নেহাল আহমেদ বলেন, ঋণ গ্রহীতাদের উচ্চ সুদহার ব্যবসার ক্ষেত্রে বড় বাধা। যা ঋণ পরিশোধে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। উপরন্তু উচ্চ সুদের কারণে পণ্য উৎপাদনে খরচ বাড়ার কারণে রপ্তানিমুখী শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সুতরাং ঋণের সুদহার যৌক্তিক পর্যায়ে আসা দরকার।  

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিআইবিএম’র মহাপরিচালক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মহা. নাজিমুদ্দিন বলেন, সরকারের নীতি নির্ধারক পর্যায় থেকে শুরু করে সর্বত্র গত কয়েক বছর ধরে সুদহার কত তা আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে সুদহার কম থাকলে বিনিয়োগে গতি বাড়ে।  ভিশন-২০৪১, এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং ডেল্টা প্ল্যানের লক্ষ্য অর্জন করতে হলে সুদের হার কমিয়ে আনতে হবে। যাতে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে আগ্রহী হয়। সরকার এ লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।

বিআইবিএম’র ড. মোজাফফর আহমদ চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, সরকার উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। বর্তমান সরকার অর্ন্তভুক্তিমূলক ব্যাংকিংয়ে কাজ করে যাচ্ছে। তবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উচ্চ লক্ষ্য অর্জনে সুদহার যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনতে হবে।  

পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএম’র সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অসম প্রতিযোগিতা অনেক সময় বিপদ ডেকে আনছে। এটি দ্রুত বন্ধ করতে হবে। ব্যাংকের পরিচালনা পর্যদকেই বিষয়টি দেখভাল করতে হবে। অনেকে সঞ্চয়পত্রের সুদের হারের কারণে ব্যাংক সুদ কমানো সম্ভব হচ্ছে না দাবি করেন। গবেষণায় প্রমাণিত সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ব্যাংক ঋণের সুদে তেমন কোনো প্রভাব পড়ে না। সামাজিক নিরাপত্তায় সঞ্চয়পত্র খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তিনি বলেন, ব্যাংকের ট্রেজারি ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠু হলে তারল্য সংকটের মধ্যে পড়ে না ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএম’র সাবেক সুপারনিউমারারি অধ্যাপক মো. ইয়াছিন আলি বলেন, ব্যাংকের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে খেলাপি ঋণ কমাতে উদ্যোগ নিতে হবে। পুরো ব্যাংকিংখাতকে খেলাপি সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নেপাল এবং চীনে ঋণ খেলাপিরা ট্রেন এবং প্লেনের টিকেট কিনতে পারেন না। এ ধরনের উদ্যোগ বাংলাদেশেও নেওয়া যেতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৯
এসই/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।