ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

শ্রমিক কল্যাণ ফান্ড: বিতরণ ৩০ কোটি, লভ্যাংশ আদায়ে চিঠি

গৌতম ঘোষ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৪৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৯
শ্রমিক কল্যাণ ফান্ড: বিতরণ ৩০ কোটি, লভ্যাংশ আদায়ে চিঠি

ঢাকা: বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের তহবিলে শ্রম আইন অনুযায়ী দশমিক পাঁচ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়নি এমন কয়েক হাজার প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করে চিঠি দিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।

এছাড়া ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে এ পর্যন্ত নয় হাজার নয়জন শ্রমিক ও তাদের পরিবারকে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের তহবিল থেকে ৩০ কোটি ৬৯ হাজার ২০৫ টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে গোষ্ঠী বীমার অন্তর্ভুক্ত আড়াই হাজার শ্রমিককে প্রিমিয়াম বাবদ ৫৪ লাখ ৫৫ হাজার ৮৫০ টাকা দেওয়া হয়েছে।

 

বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের এই অনুদান মৃত, চিকিৎসা ও শিক্ষাখাত- এ তিন ক্যাটাগরিতে দেওয়া হয়। শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের অনুদান প্রদান সংক্রান্ত সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়।  

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত ৪০০ কোটি টাকারও বেশি অর্থ রয়েছে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের ফান্ডে। দেশি-বিদেশি ও বহুজাতিক কোম্পানি মিলে মোট ১৪০টি প্রতিষ্ঠান শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে প্রায় তিনশ ৭০ কোটি টাকা জমা দিয়েছে। যা ফিক্সড ডিপোজিট রিসিট (এফডিআর) হিসেবে ৩২৮ কোটি টাকা ও সোনালী ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে রয়েছে প্রায় ৪২ কোটি টাকারও বেশি।

অন্যদিকে এ তহবিল থেকে প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের নয় হাজার শ্রমিককে প্রায় ৩০ কোটি টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক এ এম এস আনিসুল আউয়াল বাংলানিউজকে বলেন, আমরা এই ফাউন্ডেশন থেকে শিক্ষা, চিকিৎসা ও মৃত এই তিন ক্যাটাগরিতে নয় হাজার শ্রমিক ও তাদের পরিবারকে ৩০ কোটি টাকার সহায়তা দিয়েছি। ভবিষ্যতে এ সহায়তা আরও বাড়বে। আমরা মূল টাকায় কখনো হাত দেই না। সেটা সোনালী ব্যাংকের রমনা করপোরেট শাখায় এফডিআর করে রাখা আছে। আমরা সেখান থেকে যে মুনাফা পাই, সেটাই সহায়তা হিসেবে দিয়ে থাকি।

তিনি বলেন, আমাদের ফান্ডে সাড়ে ৬ কোটি শ্রমিকের জন্য ৪০০ কোটি টাকারও বেশি অর্থ জমা রয়েছে। আশা করছি আগামী তিন বছরে এই ফান্ড চার হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করছে আমাদের এই ফান্ড। আমরা মাতৃত্ব ও মৃত্যুর জন্য ২৫ হাজার টাকা, চিকিৎসার জন্য ৫০০ থেকে ২ লাখ টাকা ও শিক্ষার ক্ষেত্রে মেডিক্যালে পড়ুয়াদের জন্য ৫০ হাজার,  কৃষি বা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়াদের জন্য ৪০ হাজার ও উচ্চ শিক্ষার জন্য ৩০ হাজার টাকা দিয়ে থাকি।  

‘আমাদের কাছে যথেষ্ট পরিমাণ টাকা আছে, অথচ সহায়তা দেওয়ার লোক পাচ্ছি না। প্রচার-প্রচারণা না থাকায় এখনও অনেকে এই ফান্ড সম্পর্কে জানে না। তাই বেশি করে প্রচার করতে হবে। ’ যে সব শ্রমিক এখন পর্যন্ত সহায়তা পায়নি, তাদের অনলাইনে (www.blwf giv.bd) আবেদন করার আহ্বান জানান তিনি।

মহাপরিচালক বলেন, এপর্যন্ত ১৪০টি প্রতিষ্ঠান ২০০৬ সালের শ্রম আইন অনুযায়ী তাদের মুনাফার দশমিক পাঁচ শতাংশ আমাদের ফান্ডে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর পৃষ্ঠপোষকতায় এটি সম্ভব হয়েছে। তবে এখনও কয়েক হাজার প্রতিষ্ঠান আমাদের ফান্ডে মুনাফার অংশ দিচ্ছে না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সহায়তায় এ পর্যন্ত আমরা এমন কয়েক হাজার প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করতে পেরেছি। আমরা ইতোমধ্যে তাদের চিঠিও দিয়েছি।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, কোনো কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান যদি আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে অর্থ না দিয়ে থাকে, তাহলে আগামী এক মাসের মধ্যেই তাদের লভ্যাংশের অংশ বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক বরাবর পাঠাতে বলা হয়েছে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই আইন বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশের উৎপাদনশীলতা যেমন বাড়বে, তেমনি সেক্টরে শান্তি এবং শৃঙ্খলাও বজায় থাকবে।

বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী দেখা যায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১৫৫ জন শ্রমিককে এক কোটি ১৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১১১ জনকে মৃত ও মাতৃত্বকালীন সহায়তা বাবদ এক কোটি ১১ লাখ টাকা এবং ৪৪ জনকে চিকিৎসা সহায়তা বাবদ আট লাখ ৮০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।  

২০১৩ -১৪ অর্থবছরে ৭০ জন শ্রমিককে ১২ লাখ ৭৮ হাজার ৩৫৫ টাকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে তিনজনকে মৃত ও মাতৃত্বকালীন সহায়তা বাবদ ৬০ হাজার টাকা এবং ৬৭ জনকে চিকিৎসা সহায়তা বাবদ ১২ লাখ ১৮ হাজার ৩৫৫ টাকা দেওয়া হয়েছে।

২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৮৭ জন শ্রমিককে ১৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এর মধ্যে একজনকে মৃত ও মাতৃত্বকালীন সহায়তা বাবদ ১০ হাজার টাকা এবং ৮৬ জনকে চিকিৎসা সহায়তা বাবদ ১৭ লাখ ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।

২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩৭ জন শ্রমিককে ১৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দুইজনকে মৃত ও মাতৃত্বকালীন সহায়তা বাবদ দুই লাখ ২৫ হাজার টাকা এবং ৩৫ জনকে চিকিৎসা সহায়তা বাবদ ১২ লাখ ৪০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৯২১ জন শ্রমিককে পাঁচ কোটি ৫৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৭১ জনকে মৃত ও মাতৃত্বকালীন সহায়তা বাবদ দুই কোটি ৫১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা, ৪৬৯ জনকে চিকিৎসা সহায়তা বাবদ এক কোটি ৯৬ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং ২৮১ জন শ্রমিকের ছেলে-মেয়েদের উচ্চ শিক্ষার জন্য শিক্ষাখাত থেকে এক কোটি পাঁচ লাখ ৯০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে এক হাজার ৪০৬ জন শ্রমিককে সাত কোটি ১২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৬৬ জনকে মৃত ও মাতৃত্বকালীন সহায়তা বাবদ ৬৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকা, এক হাজার ৫২ জনকে চিকিৎসা সহায়তা বাবদ পাঁচ কোটি ১৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা এবং ২৮৯ জন শ্রমিকের ছেলে-মেয়ের উচ্চ শিক্ষার জন্য শিক্ষাখাত থেকে এক কোটি ৩২ লাখ ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত তিন হাজার ৮৩৩ জন শ্রমিককে ১৫ কোটি ১৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১২৬ জনকে মৃত ও মাতৃত্বকালীন সহায়তা বাবদ ৭১ লাখ ১০ হাজার টাকা, তিন হাজার ৪২২ জনকে চিকিৎসা সহায়তা বাবদ ১৩ কোটি ৪৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা এবং ২৮২ জন শ্রমিকের ছেলে-মেয়েদের উচ্চ শিক্ষার জন্য শিক্ষাখাত থেকে এক কোটি এক কোটি ৯৮ লাখ ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের আটটি বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সহায়তা পেয়েছেন ঢাকা বিভাগের শ্রমিকেরা। এ বিভাগের ১৩টি জেলায় দুই হাজার ৭৮০ শ্রমিককে ১১ কোটি ৬৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।  

এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলায় ৫৮৯ জন শ্রমিককে দুই কোটি ৯৫ লাখ ১০ হাজার টাকা, খুলনা বিভাগের ১০টি জেলার ৭৪২ জন শ্রমিককে তিন কোটি ১৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা, রাজশাহী বিভাগের আটটি জেলার ৩৮৪ জন শ্রমিককে এক কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং সিলেট বিভাগের চার জেলার ২০৭ জন শ্রমিককে এক কোটি ২১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলার ৩৬২ জন শ্রমিককে এক কোটি ৬০ লাখ ৬৫ হাজার টাকা, বরিশালের ছয় জেলার ৪৮০ জন শ্রমিককে দুই কোটি ছয় লাখ ৫৫ হাজার টাকা এবং রংপুর বিভাগের আট জেলার ৫৫১ জন শ্রমিককে দুই কোটি ৬২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।

শ্রম আইন অনুযায়ী, কোম্পানির নিট লাভের শতকরা পাঁচ ভাগ বিভিন্ন উপায়ে শ্রমিকদের কল্যাণে ব্যয় করতে হয়। শ্রমিকদের জন্য নির্ধারিত এই অঙ্কের ১০ ভাগের এক ভাগ জমা দিতে হয় শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের তহবিলে। এছাড়া এক ভাগ কোম্পানিগুলোর অভ্যন্তরীণ (নিজস্ব) শ্রমিক কল্যাণ ফান্ডে জমা রাখতে হয়। বাকি আট শতাংশ নগদ লভ্যাংশ হিসেবে শ্রমিকদের মধ্যে বন্টন করতে হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০০৪৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৯
জিসিজি/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।