ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

পেঁয়াজের দাম এক দিনে বেড়েছে ৮ টাকা, আরও বাড়ার শঙ্কা

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৯
পেঁয়াজের দাম এক দিনে বেড়েছে ৮ টাকা, আরও বাড়ার শঙ্কা উৎপাদনের ঘাটতি থাকায় দাম বাড়ছে পেঁয়াজের। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজের দাম মাত্র এক দিনের ব্যবধানে আট থেকে ১০ টাকা বেড়েছে, সামনে আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে কৃষকের ঘরে উঠবে মুড়িকাটা পেঁয়াজ। এর আগে দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন পাইকাররা।

দেশি পেঁয়াজ সংরক্ষণের ব্যর্থতা ও ভারত থেকে আমদানি কমায় দাম বাড়ছে।  

শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) নগরীর কয়েকটি পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে এতথ্য পাওয়া গেছে।

মিরপুর-১ নম্বরের অন্যতম পাইকারি পেঁয়াজের আড়ৎ মেসার্স আল-ইমরান বাণিজ্য ভাণ্ডার। শুক্রবার এখানে প্রতি কেজি দেশি ভালো মানের পেঁয়াজ ৭৪ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) এই পেঁয়াজ ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ, পাইকারি বাজারে মাত্র এক দিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে প্রায় ১০ টাকা।

অন্যদিকে, দক্ষিণ ভারতের নতুন জাতের বেলোরি ও ইন্দোর পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বৃহস্পতিবার এই পেঁয়াজ অন্তত আট টাকা কমে বিক্রি হয়েছে।

মেসার্স আল-ইমরান বাণিজ্য ভাণ্ডারের ম্যানেজার নাহিদ হাসান বাংলানিউজকে বলেনে, এক দিনের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিতে আট থেকে ১০ টাকা বাড়তি। শুনেছি, আজ মোকামে দাম আরও চড়া। সুতরাং কালকে (শনিবার) পেঁয়াজের দাম আরও বাড়বে।  

গুলশান-২ নম্বরের খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৭৫ ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৬৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এসব দোকানে বৃহস্পতিবার কেনা পেঁয়াজ বিক্রি হওয়ায় দাম কিছুটা কম।
দেশে পাবনা, ফরিদপুর, রাজবাড়ি, মানিকগঞ্জ, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, ঝিনাইদহ, মাগুরা, মেহেরপুর, মাদারীপুর, শরিয়তপুর, গোপালগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, দিনাজপুর ও রংপুরেই অধিকাংশ পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। পাইকারি পেঁয়াজের বড় মোকাম বসে রাজবাড়ী, ফরিদপুর, দিনাজপুর ও পাবনায়। শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) এসব হাটে দেশি পেঁয়াজ তিন হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে, অর্থাৎ প্রতি কেজির দাম ৭৫ টাকা। গাড়িভাড়া ও শ্রমিক খরচ যোগ হয়ে ঢাকায় এসব পেঁয়াজের দাম আরও বেশি হবে।

দিনাজপুর নেহার ট্রেডার্সের মালিক ও পাইকারি পেঁয়াজ বিক্রেতা আব্দুল কাইয়ুম বাংলানিউজকে বলেন, দেশি ভালো পেঁয়াজের মণ তিন হাজার টাকা, এলসি পেঁয়াজের দামও বেশি। ভারত থেকে আমদানি হচ্ছে কম। একারণে হাটগুলোতে প্রতিদিনই বাড়ছে পেঁয়াজের দাম।

মোকামে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণে এর প্রভাব পড়বে রাজধানী ঢাকার বাজারেও। মিরপুর-১ নম্বরের মোল্লা ট্রেডার্সের মালিক বিধান শিকদার বাংলানিউজকে বলেন, আমরা মোকাম থেকেই পেঁয়াজ কিনি। শুক্রবার সেখানে ৭৫ টাকা দরে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। এর সঙ্গে লেবার ও ট্রাক-খরচা আছে। ফলে, পাইকারি বিক্রিতে দাম আরও বাড়বে।

কৃষি বিপণন অধিদফতর সূত্র জানায়, দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ২৪ থেকে ২৫ লাখ মেট্রিক টন, উৎপাদন হয়েছে ২৪ লাখ ৩০ হাজার টন। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন ঘাটতি থাকে বলে আমদানির মাধ্যমে তা পূরণ করা হয়। চলতি বছর পেঁয়াজ সংরক্ষণ ব্যাহত হয়েছে। পেঁয়াজ সংগ্রহের ১৫ থেকে ২০ দিন আগে গাছের ডগা ভেঙ্গে দিলে ফলন ভালো পাওয়া যায়। এরপর পেঁয়াজ রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করতে হয়। কিন্তু, বৃষ্টির কারণে কৃষকেরা পেঁয়াজ শুকাতে পারেনি। ফলে, শুরুতে কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। অনেক পেঁয়াজ নষ্টও হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ১০ লাখ টন ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ভারত থেকে আমদানি করেই এই ঘাটতি পূরণ করতে হচ্ছে। এছাড়া, ভারতের মহারাষ্ট্রে পেঁয়াজের ফলন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তাদের অভ্যন্তরীণ বাজারেও দর বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

দাম বাড়ছে পেঁয়াজের।  ছবি: বাংলানিউজ

কৃষি বিপণন অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ বাংলানিউজকে বলেন, দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন ভালোই ছিলো। কিন্তু, নানা কারণে ১০ লাখ টন ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এসব ঘাটতি ভারত থেকে এনে পূরণ করতে হচ্ছে। তবে, সে দেশেও পেঁয়াজের দাম বাড়তি। আমাদের পেঁয়াজের বাজার সাধারণত ভারতই নিয়ন্ত্রণ করে।

তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতি এড়াতে সামনে পেঁয়াজের চাষ আরও বাড়াতে হবে, যেন কোনো ঘাটতি না থাকে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৯
এমআইএস/একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।