ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

হলুদের রাজ্যে মৌমাছি-প্রজাপতির মেলা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২০
হলুদের রাজ্যে মৌমাছি-প্রজাপতির মেলা

বগুড়া: কুয়াশায় ঘেরা প্রকৃতি, মাঠে মাঠে শোভা পাচ্ছে হলুদে রঙের ফুলের সমারোহ। নজরকড়া এ দৃশ্য যে কারো চোখের দৃষ্টিসীমাকেও ছাপিয়ে যাবে। হলুদ নিয়ে এতো সব গল্প ও কথা, এসবই যেন কোনো এক রাজ্যের রাজকুমারীর রূপকথার গল্প। রাজকুমারীর গায়ে হলুদ মাখাতে এসেছে সেই রাজ্যের সব প্রজারা।

হুমড়ি খেয়ে প্রজারা পড়ছে হলুদের সাম্রাজ্য ‘সরিষা ক্ষেতে’। রঙ নিচ্ছে আর রাজকুমারীর কাছে ছুটছে ওরা।

কখনো দলবেঁধে আবার কখনো দলছুট হয়ে। সরিষার মনোমুগ্ধকর ঘ্রাণ মাতিয়ে দেবে সবাইকে। দিনের আলোয় সরিষা গাছে থাকে পর্যাপ্ত অক্সিজেন। সবমিলিয়ে সরিষার মৌ-মৌ গন্ধ শহরে জীবনের খিটখিটে ভাব অনেকটা ভুলিয়ে দেবে আপনাকে। একে বায়ু বিশুদ্ধকরণ ঘ্রাণ বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা।
দিগন্ত বিস্তৃত সরিষা ক্ষেত।  ছবি- বাংলানিউজ মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, সরিষাক্ষেতগুলোতে উড়ে বেড়াচ্ছে রং-বেরংয়ের প্রজাপতি-মৌমাছি। ওরা ডানা মেলে বসে আছে হলদে গাছের ডগায়। আবার দেখা যাচ্ছে ঘুড়ির মতন এক গাছ থেকে আরেক গাছে গিয়ে বসছে ও ভেসে বেড়াচ্ছে। মৌমাছি, হলুদিয়া-নীলরঙা পাখিসহ আরও অনেক পোকামাকড়। তাদের বসত সরিষাক্ষেতজুড়ে। ফুলের পাতায় বা গোড়ায় ক্ষণিকের বিশ্রাম নেয় এরা।

প্রজাপতি বা পোকামাকড়ের খাদকরা আশ-পাশে ঘাপটি মেরে বসে থাকে। ফিঙে ও শালিকের মতো শিকারীদের উৎসব চলে ক্ষেতজুড়ে। মাঝেমধ্যেই এসব শিকারীদের পেটে চলে যায় রঙিন প্রজাপতিসহ পোকামাকড়গুলো।
সরিষা ফুলে প্রজাপতি।  ছবি- বাংলানিউজ সরিষা একটি তৈল উৎপাদক দ্বি-বীজপত্রী উদ্ভিদ বা ফসল। প্রত্যেক বছর মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্য নভেম্বর পর্যন্ত মাসব্যাপী এ ফসলের চাষ চলে। প্রাপ্ত বয়স আসতে সময় লাগে প্রায় ৮৫ থেকে ১শ দিন।

বগুড়া জেলার ১২টি উপজেলায় কমবেশি জমিতে সরিষা চাষ করেছেন কৃষকরা। এরমধ্যে সদর, শেরপুর, ধুনট, নন্দীগ্রাম, শাজাহানপুর, সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও গাবতলী উপজেলায় কৃষকরা বেশি পরিমাণ জমিতে সরিষা লাগিয়েছেন।
সরিষা ফুলে মৌমাছি।  ছবি- বাংলানিউজ লাগানো সিংহভাগ ক্ষেতের সরিষা গাছে ফুল এসেছে। আবহাওয়া এ পর্যন্ত অনুকূলে থাকায় আবাদও বেশ ভালো হয়েছে। বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা ক্ষেত পরিচর্যা নিয়ে বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন। মাঠে-প্রান্তরে শোভা পাচ্ছে হলুদের অপরূপ দৃশ্য।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে এ জেলায় প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সরিষা চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে বারি-৯, ১৪ ও ১৫, টোরি-৭ ও সেতি জাতের সরিষা অন্যতম।

সায়েদ, আজহার আলী, আফছার দেওয়ানসহ একাধিক সরিষা চাষি বাংলানিউজকে জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার সরিষার আবাদ ভালো হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে ফলনও বেশ ভালো হবে বলেও তারা আশাবাদী।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আব্দুর রহিম বাংলানিউজকে বলেন, জমিতে লাগানো সরিষা এখন তিন ধরনের অবস্থায় রয়েছে। এরমধ্যে ফুল, ফুল ঝড়া ও দানা গঠন।
ছবি- বাংলানিউজ এক সপ্তাহ পর থেকে কিছু কিছু জমিতে সরিষা কাটা মাড়াই শুরু হবে। চলতি বছর সরিষার বাম্পার ফলন হবে বলেও আশাবাদী ওই কর্মকর্তা।

সরিষা গাছের শুকনো গাছ পাতা জ্বালানি, খৈল, গবাদি পশুর খাদ্য ও সার হিসেবে ব্যবহার করা যায় বলেও জানান কৃষি বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুর রহিম।

সরিষা ক্ষেতের বুক ছহিরে ছুড়ে চলেছে দূরন্ত শিশুরা।  ছবি- বাংলানিউজ বাংলাদেশ সময়: ১০০৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২০
কেইউএ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।