ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

পাট শিল্পের জাগরণ শুরু হয়েছে: পাট মন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০২০
পাট শিল্পের জাগরণ শুরু হয়েছে: পাট মন্ত্রী

ঢাকা: পরিবেশ বিপর্যয় ঠেকাতে বিশ্বজুড়ে পলিথিন ও প্লাস্টিক পণ্য বর্জন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাটশিল্পের ‍জাগরণ শুরু হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী।

শুক্রবার (০৬ মার্চ) সকালে রাজধানীর অফিসার্স ক্লাবে পাট দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।

গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, অনেকে বলতো পাট শিল্প মরে গেছে।

পাট শিল্প মরে যায়নি। পরিবেশ বিপর্যয় ঠেকাতে সারা বিশ্বে পলিথিন ও প্লাস্টিক পণ্য বর্জন শুরু হয়ে গেছে। পাট ও পাটজাত পণ্যের দিকে মানুষ ঝুঁকে পড়ছে। এর মধ্যে দিয়ে পাটের জাগরণ শুরু হয়েছে।

পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে পাট পণ্যের বিস্তার ঘটেছে। আগে অনেকে বলতো পাট মরে গেছে, কিন্তু এখন থেকে মনে করতে হবে পাঠ জেগে উঠেছে। যার বড় প্রমাণ বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরে পাটখাতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন।  

চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশ পাট ও পাটজাত পণ্যে ৬১৬ দশমিক ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের রফতানি আয় করেছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী।  

তিনি বলেন, এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২০ দশমিক ৮২ শতাংশ বেশি।  

বহুমুখী পাটজাত পণ্য উৎপাদন প্রসঙ্গে গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, পরিবেশ রক্ষায় পাটের তৈরি বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদন করছে বাংলাদেশ। আমরা ইতোমধ্যে ২৮২ টি বহুমুখী পণ্য উৎপাদন করছি। যা অনেকেই জানেন না। তাদের কাছে অনুরোধ আপনারা পাট মেলায় যাবেন এবং পাট সম্পর্কে জানবেন। সেখানে গেলে কোনো না কোনো পণ্য আপনাদের পছন্দ হবেই।  

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, অনেকের ধারণা ছিল পাট দিয়ে বস্তা-ছালা এসব হয়। কিন্তু এখন ধারণা পাল্টেছে। এখন পাট দিয়ে বিভিন্ন রকমের গিফট আইটেম তৈরি হয়। চা’য়ের মতো পাট পাতার পানীয় হয়, যা খুবই স্বাস্থ্যকর। পাটের জুতা, ব্যাগ, সুতা, কাপড়, শাড়ি থেকে শুরু করে বহু পাটজাত পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে।

পরিবেশ রক্ষায় পলিথিনের বিকল্প ‘সোনালি ব্যাগ’ ব্যবহারের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বেশিদিন নেই যেখানে বিশ্ববাজারে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, বিশ্ব ফুটবলার রোনালদোর পায়ের সু বাংলাদেশের পাট দিয়ে তৈরি হয়। যেটি আর কোথাও বিক্রি হয় না, উৎপাদনের পর সরাসরি তাদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।  

‘তাই সবার কাছে অনুরোধ আমরা যখন প্রিয়জনকে উপহার দিই এবং বিদেশিদের গিফট আইটেম পাঠাই তখন যেন পাটের পণ্য দেওয়া হয়। এতে পাটের বিস্তার ঘটবে। ’
অন্যান্যের মধ্যে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মির্জা আজম, পাট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) সওদাগর মুস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে বস্ত্র ও পাট খাতে বিশেষ অবদানের জন্য ১১টি ক্যাটাগরিতে ১১ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে পুরস্কৃত করা হয়।  

পাটের সুতা রফতানিকারক সেরা পাটকল হিসেবে আকিজ জুট মিলস্‌ লিমিটেড, পাটের সুতা উৎপাদনকারী সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে করিম জুট স্পিনার্স লিমিটেড, বহুমুখী পাটজাত পণ্য রফতানিকারক সেরা প্রতিষ্ঠান ক্যাটাগরিতে ক্রিয়েশন প্রাইভেট লিমিটেড, বহুমুখী পাটজাত পণ্যের সেরা মহিলা উদ্যোক্তা হিসেবে কোহিনুর ইয়াছমিন, পাটবীজ, পাট ও পাটজাত পণ্যের গবেষণায় সেরা গবেষক/বিজ্ঞানী/উদ্ভাবক ক্যাটাগরিতে ড. মো. শহিদুল ইসলাম, সেরা পাটবীজ উৎপাদনকারী চাষি হিসেবে মো. শাহানুর আলম (সান্টু), সেরা পাট উৎপাদনকারী চাষি হিসেবে মো. আরিফ শেখ, পাটজাত পণ্য উৎপাদনকারী সেরা পাটকল হিসেবে আলীজান জুট মিলস লিমিটেড, পাটজাত পণ্য রপ্তানিকারক সেরা প্রতিষ্ঠান নওয়াপাড়া জুট মিলস লিমিটেড, বহুমুখী পাটজাত পণ্য উৎপাদনকারী সেরা পাটকল হিসেবে জনতা জুট মিলস লিমিটেড এবং বহুমুখী পাটজাত পণ্যের সেরা পুরুষ উদ্যোক্তা হিসেবে পুরস্কার পান মো. তৌহিদ বিন আব্দুস সালাম।

অনুষ্ঠানের শেষে অফিসার্স ক্লাব চত্বরে পাঁচ দিনব্যাপী বহুমুখী পাটপণ্যের মেলার উদ্বোধন ঘোষণা করেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। এ সময় অতিথিদের নিয়ে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখেন তিনি।

এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে 'সোনালি আঁশের সোনার দেশ, মুজিববর্ষে বাংলাদেশ'- স্লোগানে জাতীয় পাট দিবস উপলক্ষে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সচিবালয় প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে শোভাযাত্রাটি জিপিও মোড়, পল্টন ও কাকরাইল সড়ক দিয়ে ঢাকা অফিসার্স ক্লাবে গিয়ে শেষ হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০২০
এমইউএম/এমএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।