ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বাড়তি কর মোবাইল শিল্পখাতকে আরও দুর্বল করবে: এমটব

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪২ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০২০
বাড়তি কর মোবাইল শিল্পখাতকে আরও দুর্বল করবে: এমটব

ঢাকা: একটা সময় ছিল যখন টেলিকম সেবা ছিল মূলত ভয়েস নির্ভর, স্বাভাবিকভাবেই তার অবদান অর্থনীতিতে ছিল অনেক কম। সেটা মোবাইলের প্রথম জেনারেশন বা প্রজন্ম হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এখন ২০২০ সাল, দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার সময়। আমাদের টেলিকম শিল্প চলমান করোনা ভাইরাস মহামারিকালে ঘরে বসে থাকা লাখ লাখ মানুষের অবলম্বনে পরিণত হয়েছে।

এই বিপুল সংখ্যক মানুষ তাদের সামাজিক ক্রিয়াকর্ম, বাজার-সদাই, বিনোদন, ব্যবসা পরিচালনা ইত্যাদি ঘরে থেকেই করতে পারছেন। মোবাইল শিল্প অর্থনীতির রূপান্তরকে ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি তা করোনা ভাইরাসকে রুখতেও সহায়তা করছে।

দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে মোবাইল টেলিকম শিল্পের অবদান এত বিস্তৃত যে তা শুধু অর্থের মানদণ্ডে পরিমাপ করা সম্ভব না।

এর পটভূমিতে মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (এমটব) মোবাইল টেলিযোগাযোগ খাতের প্রস্তাবিত বাজেটের প্রভাব সম্পর্কে মঙ্গলবার (১৬ জুন) এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানায়।

'এমটব' মহাসচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এসএম ফরহাদ ও মোবাইল অপারেটরদের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলালিংকের চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার তাইমুর রহমান, রবি আজিয়াটার চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম, গ্রামীণফোনের হেড অব পাবলিক অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স হোসেন সাদাত।

'এমটব' সভাপতি মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০২০-২১ এর প্রস্তাবিত বাজেটে টেলিযোগাযোগ খাত আরো একবার ডিজিটাল বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দূরে সরে গেছে, এটা আমাদের ব্যথিত করেছে। যখন আমরা দেশের ডিজিটাল বিভাজন বন্ধ করার প্রাণান্ত চেষ্টা করছি, ঠিক সে সময়ে সম্পূরক শুল্ক আবারও বাড়িয়ে দেওয়া হলো। এটা সীমিত আয়ের লোকজনকে মোবাইল সেবা প্রাপ্তি থেকে আরো দূরে সরিয়ে নেবে যা ডিজিটাল বাংলাদেশের গৌরবময় দর্শনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

তিনি আরও বলেন, শুধু তাই না, প্রস্তাবিত বাজেটে কর ব্যবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা সমস্যা সমাধান করার কোনো চেষ্টা করা হয়নি। উদাহরণস্বরূপ, ৪৫ শতাংশ (অ-তালিকাভুক্ত অপারেটরদের জন্য) কর্পোরেট ট্যাক্স বিশ্বের সর্বোচ্চ, ২ শতাংশ ন্যূনতম টার্নওভার ট্যাক্স লাভের মুখ দেখতে না পারা অপারেটরদের আর্থিকভাবে পঙ্গু করে দিচ্ছে। এছাড়াও, আপিল করার আগেই বিতর্কিত ভ্যাট দাবির ৫০ শতাংশ অগ্রিম অর্থ প্রদানের বিধান বিচার প্রাপ্তির মূলনীতির লঙ্ঘন, যা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে খুব নেতিবাচক বার্তা প্রেরণ করে।

টেলিকম খাতের অর্থনৈতিক অবদানের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে মাহতাব বলেন, বর্তমানে শিল্পটি দেশের জিডিপিতে ৭ শতাংশ অবদান রাখছে, যা সহজেই দুই অংকের ঘরে (ডাবল ডিজিট) নেওয়া সম্ভব হবে যদি এই শিল্পের যথাযথ সদ্ব্যবহার করা যায়। গ্রাহক এবং আমাদের শেয়ারহোল্ডারদের উপর চাপ না দিয়েও সরকারের পক্ষে এই খাত থেকে আরো বেশি রাজস্ব আহরণ করা সম্ভব। আমরা এর উপায় বের করার জন্য সরকারের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।

এমটব মহাসচিব ফরহাদ বলেন, দেশের অর্থনীতিতে মোবাইল টেলিযোগাযোগ খাতের উল্লেখযোগ্য অবদান থাকা সত্ত্বেও সরকার নিয়মিতভাবে আরও বেশি বেশি করে কর আরোপের মাধ্যমে এই খাতকে দুর্বল করে তুলছে। এই নতুন করে কর বৃদ্ধি দরিদ্র মানুষের ওপরে অসহনীয় বোঝা হয়ে পড়বে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ দৃষ্টিভঙ্গির জন্য নেতিবাচক। যা করোনা ভাইরাস সঙ্কটের কারণে আরো ত্বরান্বিত হবে। মোবাইল শিল্প খাতটি আরও ক্ষতিগ্রস্থ হবে ও দুর্বল হবে।

তিনি আরও বলেন, অতিরিক্ত করের বোঝা শেষ পর্যন্ত ব্যবহারকারীদের ওপরেই পড়ে। মোবাইল শিল্পে বাংলাদেশে কর বিশ্বের শীর্ষে। কিন্তু ব্যবহারকারীদের জন্য মোবাইল এবং ইন্টারনেটের দাম সর্বনিম্ন। তাই এখানে বিনিয়োগের তুলনায় অপারেটরদের আয় তুলনামূলকভাবে কম। টেলিযোগাযোগকে জরুরি সেবা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে তাই এই অবস্থা এই খাতের জন্য কোনোভাবেই স্বাস্থ্যকর হতে পারে না।

এমটব সরকারকে চার দফা দিয়ে তা পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করেছে।

মোবাইল সেবায় অতিরিক্ত এসডি: মোবাইল সেবার উপর অতিরিক্ত ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক (এসডি) আরোপ কেবল গ্রাহকদের ব্যয়ই বাড়িয়ে তুলবে না বরং সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্পে সকলের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে ডিজিটাল সেবাদানের স্ববিরোধী।

ভ্যাট আপিলের আগে ৫০% প্রদান: বাজেটে ন্যায়বিচারের লক্ষ্যে আপিল প্রক্রিয়া করার আগেই দাবি করা অর্থের ৫০ শতাংশ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। ভ্যাট কর্তৃপক্ষ বেশিরভাগ সময় নির্বিচারে বিভিন্ন সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা করে যার জন্য তাদের আপিল প্রক্রিয়ায় যেতে হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে হাইকোর্টের রায় পেতে এমন কী দশকেরও বেশি সময় লেগে যায়। এ অবস্থা যে কোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ব্যবসা চালাতে আর্থিকভাবে অক্ষম করে তুলতে পারে। আবার বিধিতে এমন কোনো ধারা নেই যে বিচার বিভাগীয় প্রক্রিয়া শেষে সংস্থা তার পক্ষে রায় পেলে সরকার সুদসহ অর্থ ফেরত দেবে।

ন্যূনতম করের হার: খাত সংলিষ্ট করারোপের ক্ষেত্রে যথাযথ যুক্তির অভাব রয়েছে। মোবাইল যোগাযোগ দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখে। অথচ সমাজে নেতিবাচক প্রভাব রাখে এমন প্রতিষ্ঠানের তুলনায় মোবাইল অপারেটরদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম করের হার দ্বিগুণ। এছাড়া মুনাফা অর্জনের জন্য লড়াই করছে এমন ধরনের কোম্পনির জন্য এই কর প্রতিযোগিতার শক্তি হ্রাস করে, ব্যবসা সম্প্রসারণে বাধা সৃষ্টি করে এবং বৈদেশিক বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

কর্পোরেট করের হার অপরিবর্তিত রয়েছে: তালিকাভুক্ত মোবাইল অপারেটরের জন্য কর্পোরেট আয়কর হার ৪০ শতাংশ এবং অ-তালিকাভুক্ত অপারেটরগুলির জন্য তাদের লাভের ৪৫ শতাংশ কর বিদ্যমান। অ-তালিকাভূক্ত মোবাইল অপারেটরের এই হার দেশের অন্যান্য যে কোনা খাতের চেয়ে বেশি এবং সিগারেট কোম্পানির সঙ্গে তুলনীয়। তদুপরি এই বাজেটে, সরকার কিছু কিছু অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট করের হার কমালেও মোবাইল অপারেটরদের জন্য কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪২ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০২০
এমআইএইচ/এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।