ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

করোনাকালে বেড়েছে ডিজিটাল লেনদেন

শাহেদ ইরশাদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৭ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০২০
করোনাকালে বেড়েছে ডিজিটাল লেনদেন

ঢাকা: করোনা মহামারির কারণে দেশে ডিজিটাল লেনদেন বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ ধারা অব্যাহত থাকলে এ ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন হতে পারে।

ইন্টারনেট ও অ্যাপভিত্তিক ব্যাংকিং অন্যান্য ডিজিটাল লেনদেনের চেয়ে দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাওয়ার ফলে ব্যাংকগুলোও লেনদেনের অ্যাপ চালু করতে উৎসাহী হয়ে উঠেছে।
 
ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার থেকে শুরু করে মুদি দোকানের কেনাকাটা ও ইউটিলিটি বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে এটিএম কার্ড বা মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, ধীরে ধীরে হলেও বাংলাদেশে ডিজিটাল লেনদেন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
 
ব্যাংকারদের মতে, অ্যাপ ও ইন্টারনেটভিত্তিক ব্যাংকিং অন্যান্য ডিজিটাল পেমেন্ট সার্ভিসের চেয়ে দ্রুত গতিতে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এই সাফল্য ব্যাংকগুলোকে অ্যাপ চালু করতে উৎসাহ দিয়েছে। কারণ অ্যাপের মাধ্যমে গ্রাহক কেবল একটি স্মার্টফোন ব্যবহার করেই লেনদেন করতে পারছেন।
 
প্রথম প্রজন্মের বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে দি সিটি ব্যাংক সাত বছর আগে ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা সিটিটাচ অ্যাপ চালু করে। দুই লাখ ২৫ হাজার গ্রাহক সিটিটাচ ব্যবহার করে লেনদেন সম্পন্ন করছেন। তারাই এখন অ্যাপভিত্তিক লেনদেনে সবার শীর্ষে।
 
আগে সিটিটাচ অ্যাপ ব্যবহার করে মাসে গড়ে ৫৫০ কোটি টাকা লেনদেন হতো। করোনার কারণে তা বেড়েছে। চলতি বছরের জুন মাসে অ্যাপ ব্যবহার করে লেনদেন হয়েছে প্রায় ৭৫০ কোটি টাকা।

করোনা ভাইরাসের কারণে আগের মাসগুলোর তুলনায় স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক ও মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ইন্টারনেটভিত্তিক লেনদেন জুন মাসে বেড়েছে।
 
গত তিন বছরের তুলনায় গত তিন মাসে ইস্টার্ন ব্যাংকের অ্যাপ ব্যবহার বেড়েছে। জুন মাসে মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ইন্টারনেট লেনদেন বেড়েছে ৩০ শতাংশ, এপ্রিল ও মে মাসের তুলনায় লেনদেনের পরিমানও বেড়েছে।
 
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যও বলছে, ডিজিটাল লেনদেনের উর্ধমুখী ধারা রয়েছে। মার্চ মাসের তুলনায় এপ্রিল মাসে ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার ৮০ দশমিক ৪৩ শতাংশ বা ২৮ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা বেড়েছে।
 
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের অংশ হিসেবে লকডাউনের সময় বা মার্চ মাসের তুলনায় এপ্রিল মাসে ডেবিট কার্ড ৭৭ হাজার ৬৬৪টি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৯৮ লাখে। ক্রেডিট কার্ড বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৬ লাখ।
 
এপ্রিল শেষে কার্ডভিত্তিক অনলাইনে কেনাকাটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫৪ কোটি টাকায়। আগের মাসে লেনদেনের পরিমান ছিল ২২৪ কোটি টাকা।
 
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, এপ্রিল মাসে ৩৮ হাজার ৬২৩ জন নতুন গ্রাহক ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ে যুক্ত হয়েছেন। এতে মোট ইন্টারনেট ব্যাংকিং গ্রাহকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭ লাখের কাছাকাছি।
 
এ বিষয়ে মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, গ্রাহক যাতে শাখায় না এসেও সেবা গ্রহণ করতে পারেন, সে জন্য প্রযুক্তিভিত্তিক শাখা পরিচালনার কাজ উন্নত করার চেষ্টা চলছে।
 
২৬ মার্চ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটির সময় সীমিত আকারে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালিত হলেও প্রযুক্তিভিত্তিক লেনদেন ছিল সন্তোষজনক বলেও মনে করেন মাহবুবুর রহমান।
 
এপ্রিল ও মে মাসে মানুষ বাইরে যেতে পারেনি। ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ ছিল। ফলে মার্চ মাসের তুলনায় এপ্রিল মাসে কার্ডের লেনদেন ৫০ শতাংশ কমেছিল। একইভাবে পয়েন্ট অব সেলস মেশিনে লেনদেন এক তৃতীয়াংশে নেমে এসেছিল। এপ্রিল মাসে পয়েন্ট অব সেলস মেশিনে লেনদেন হয়েছে ৪৫৪ কোটি টাকা, যা একমাস আগেও ছিল ১৪৩৮ কোটি টাকা। তবে জুন মাসে কার্ডে যে লেনদেন বেড়েছে তা এখনো অব্যহত রয়েছে।
 
একটি বেসরকারি ব্যাংকের কার্ড ডিভিশনের প্রধান বলেন, মে মাসের তুলনায় জুন মাসে কার্ডের ব্যবহার বেশি হয়েছে। তবে জুন মাসের সমপরিমান ব্যবহার জুলাই মানের ১৫ দিনেই হয়েছে।  এই লেনদেনও অনেক ব্যাংকারকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি।
 
ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবুল কাশেম মো. শিরীন বলেন, করোনা ভাইরাসের সময় আমাদের ই-কর্মাস লেনদেন ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা আশা করেছিলাম এটা দ্বিগুণ হবে।
 
তিনি আরও বলেন, জুন মাসে এটিএম লেনদেন হয়েছে ৮ হাজার কোটি টাকা। আগের মাসে লেনদেনের পরিমান ছিল ৫ হাজার কোটি টাকা।  
 
গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এই মনসুর বলেন, প্রযুক্তি বাস্তবায়ন অনেক ব্যয়বহুল হলেও ব্যাংকগুলোর জন্য পরিচালন ব্যয় কমাবে। যারা প্রযুক্তি ব্যবস্থার বাস্তবায়ন করতে পারবে না তারা বাদ পড়ে যাবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৬ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০২০
এসই/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।