ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

'মানুষ আসে দাম জিগায়, কিন্তু লয় না'

শেখ জাহাঙ্গীর, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৩ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০২০
'মানুষ আসে দাম জিগায়, কিন্তু লয় না' বিক্রি কম হওয়ায় গরু নিয়ে বিপাকে ব্যবসায়ীরা, ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: 'বাজারের অবস্থা ভালো না, মানুষ আসে দাম জিগায়, কিন্তু লয় (নেয়) না। নেওয়ার মতো দর কইতে হবে, নাইলে ক্যামনে নিবে।

আমরা দেখতাছি, বাজারে গরু আরও ঢুকতাছে। তিনটা গরু আছে, বেচা দিতে পারলে বাড়ি যামু। '

বাংলানিউজকে কথাগুলো বলছিলেন উত্তরার দিয়াবাড়িতে কোরবানির অস্থায়ী পশুর হাটের গরু বিক্রেতা মো. আমিনুল ইসলাম। জামালপুরের ইসলামপুর থানা থেকে ১৪টি গরু নিয়ে গত মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) এ হাটে এসেছিলেন তিনি। ১১টি গরু বিক্রি হয়েছে, বাকি আছে মাত্র তিনটি।

আমিনুল বলেন, ‘গতকাল (বৃহস্পতিবার, ৩০ জুলাই) বাজার ঠিক ছিল। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাটে ভালোই বেচা-বিক্রি হইছে। কিন্তু রাতে ক্রেতারা দাম কয়, কিন্তু নেয় না। শুক্রবার ভোরেও বাজার একটু ভালো ছিল, কিন্তু বেলা বাড়তে বাড়তে পড়ে যাইতাছে। কারণ বাজারে আরও গরু ঢুকতাছে। ’

শুক্রবার (৩১ জুলাই) সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সরেজমিনে দিয়াবাড়ি অস্থায়ী পশুর হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এবং ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।

এদিকে, ক্রেতারা বলছেন, গরুর বেপারিরা দামে ছাড় দিচ্ছেন না। তারা যে দাম চাচ্ছেন, তাতে আমাদের পোষাচ্ছে না। এদিকে সকাল থেকে এ বাজারে অনেক ক্রেতা এসেছেন। গরু খুব চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। আশা করছি, বিকেলে বাজার স্বাভাবিক হতে পারে।

টাঙ্গাইল সদর থেকে ১১টি গরু নিয়ে এ হাটে এসেছেন মনির হোসেন। এখনও তার পাঁচটি গরু রয়ে গেছে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘সকালে বাজার ভালো ছিল। কিন্তু এখন খুব খারাপ। গরুর খাবারের খরচও তুলতে পারছি না। গত বছরের তুলনায় এবার গরু অনেক কম বিক্রি হচ্ছে। কারণ ভাইসারের (কোভিড-১৯) কারণে অনেকেই কিনতাছে না। বাজার যা দেখা যায়, ভালো না। ’

বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে বড় সাইজের গরুতে অনেক লোকসান হচ্ছে। এদিকে ছোট গরুতে তারা কিছুটা লাভের মুখ দেখছেন।

গাজীপুরের একটি ফার্ম থেকে তিনটি বড় গরু নিয়ে এসেছেন খন্দকার জিয়াউল হক। তিনি শুক্রবার সকাল পর্যন্ত দু’টি গরু বিক্রি করতে পেরেছেন। একটি এখনও বাকি আছে। বিক্রি কম হওয়ায় গরু নিয়ে বিপাকে  ব্যবসায়ীরা, ছবি: বাংলানিউজ

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘বড় গরুর দাম বাজারে নাই। সবাই ছোট গরুর দিকে নজর দেয়। আমর দুইটা বড় গরুতে ৫০ হাজার করে লোকসান হইছে। গরুতে যে পরিমাণ মাংস হবে, সে অনুযায়ী দাম মিলছে না। ’

তার 'রাজা বাবু' নামে একটি গরু রয়েছে। তিনি দাবি করছেন, এ গরুতে ২৫ মণ মাংস হবে। চার বছর ধরে গরুটির খাবারের পেছনে তার খরচ হয়েছে চার লাখ টাকা। কিন্তু এখনও মানুষ যে দাম বলছেন, তাতে খাবার খরচই ওঠে না। পরিবহন ও লাভ বাকি থাকছে।

হাটটি ঘুরে দেখা যায়, একের পর এক গরু ভর্তি ট্রাক বাজারে ঢুকছে। এতে হাটে থাকা গরু ব্যবসায়ীরা কিছুটা চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়ছেন। এদিকে ক্রেতারাও বাজার যাচাইয়ে সময় ক্ষেপণ করছেন। তাদের ধারণা, বিকেল নাগাদ বাজার স্বাভাবিক হবে, বিক্রেতারা গরুর দাম কমাবে। .........

উত্তরার বাসিন্দা মিলন হোসেন নামে ক্রেতা বাংলানিউজকে বলেন, ‘সকালে হাটে এসেছি। এবার বাজেট কম। কিন্তু ছোট ও মাঝারি সাইজের গরুর দাম এখন অনেক চড়া। বিক্রেতারা দাম ছাড়ছেন না। ঘুরে দেখছি, নসিবে যেটা আছে, সেটাই নিয়ে বাড়ি যাব। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৫ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০২০
এসজেএ/এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।