ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বিল-হাওরে মাছের উৎপাদন বাড়াতে ১৭৪ কোটি টাকার প্রকল্প

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ৪, ২০২০
বিল-হাওরে মাছের উৎপাদন বাড়াতে ১৭৪ কোটি টাকার প্রকল্প সংগৃহীত ফটো।

ঢাকা: বিল ও হাওরে মাছের উৎপাদন বাড়াতে প্রকল্পের আওতায় একশ ৭৪ কোটি টাকা চেয়েছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট।  করোনা পরিস্থিতির বাস্তবতা বিবেচনায় বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের যশোর, খুলনা, বাগেরহাট কেন্দ্র থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিল এলাকায় এবং ময়মনসিংহ কেন্দ্র থেকে হাওর এলাকায় গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করার উদ্যোগ নিচ্ছে।

 

নির্মাণধর্মী কাজ বাদ দিয়ে বাংলাদেশের বিল ও হাওর এলাকায় মৎস্য উন্নয়ন সম্পর্কিত গবেষণা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করে প্রকল্পটি পুনর্গঠন করা হবে।

গবেষণার বিষয়বস্তু সুনির্দিষ্ট করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) সংযুক্ত করতে নির্দেশনা দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। এক্ষেত্রে প্রকল্পের কার্যক্রমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রকল্পের শিরোনাম কিছুটা পরিবর্তন করারও পরামর্শ দিয়েছে কমিশন। প্রস্তাবিত প্রকল্পের ওপর অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভার কার্যবিবরণী থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

পিইসি সভার কার্যপত্রে দেখা গেছে, বিল ও হাওর এলাকায় মাছের রোগ-বালাই শনাক্তকরণ এবং দমন পদ্ধতির টেকসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে চায় সরকার। এজন্য জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের মাধ্যমে বিল ও হাওরে মাছের উৎপাদন বাড়ানো ও মৎস্য সম্পদ উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা বিষয়ে জেলে, চাষি, সম্প্রসারণ কর্মী ও উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দেবে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট। এ লক্ষ্যে একশ ৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বিল এবং হাওর মৎস্য গবেষণাকেন্দ্র’ স্থাপন করতে একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পটি চলতি বছর থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) মো. জাকির হোসেন আকন্দ বলেন, প্রকল্পটি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উচ্চ অগ্রাধিকার তালিকায় নেই। চাষাবাদের মাধ্যমে মৎস্য উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে প্রথম দিকে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং অনস্বীকার্য। মৎস্য উৎপাদনের এ ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন রাখতে গবেষণার বিকল্প নেই। তবে গবেষণা একটি সময় সাপেক্ষ বিষয় এবং এর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি।

তিনি বলেন, বর্তমান করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতি সচল রাখার স্বার্থে যেসব উন্নয়ন প্রকল্পের কার্যক্রম অর্থনীতিতে তাৎক্ষণিক অবদান রাখবে। এজন্য প্রকল্প গ্রহণে সরকার অগ্রাধিকার দিচ্ছে। অন্যদিকে অফিস ভবন ও আবাসিক ভবন নির্মাণসহ সব ধরনের ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত প্রকল্প গ্রহণ নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।  

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশে চাষ করা মাছের উৎপাদন বাড়লেও বিল ও হাওরের মত উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছের উৎপাদন মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে। এক্ষেত্রে উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে গবেষণার কোনো বিকল্প নেই। এছাড়া বাংলাদেশের বিল ও হাওর এলাকার মৎস্য উৎপাদন বাড়ানো এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে ডেডিকেটেড কোনো গবেষণা কেন্দ্র নেই। এ প্রেক্ষাপটে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।

পিইসি সভায় মহাপরিচালকের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) প্রশান্ত কুমার চক্রবর্তী বলেন, বিল ও হাওর এলাকায় গবেষণা প্রয়োজন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে বর্তমান করোনা পরিস্থিতির বাস্তবতা বিবেচনায় বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের যশোর, খুলনা, বাগেরহাট কেন্দ্র থেকে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের বিল এলাকায় এবং ময়মনসিংহ কেন্দ্র থেকে হাওর এলাকায় গবেষণা পরিচালনা করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে আলোচ্য প্রকল্প থেকে ভবন নির্মাণ কাজ বাদ দিয়ে শুধু গবেষণা কাজ অন্তর্ভুক্ত করে প্রকল্পটি পুনর্গঠন করা যেতে পারে। বিল ও হাওর দুই এলাকার জন্য একটি করে মোট দুটি স্পিডবোট কেনার জন্য ডিপিপিতে সর্বোচ্চ ৬০ লাখ টাকার সংস্থান রাখা যেতে পারে। এ বিষয়ে সভায় একমত পোষণ করা হয়।

সভায় বলা হয়, গবেষণার বিষয়বস্তু সুনির্দিষ্ট করে ডিপিপিতে সংযুক্ত করা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে প্রকল্পের কার্যক্রমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রকল্পের শিরোনাম কিছুটা পরিবর্তন করা যেতে পারে। এ বিষয়ে সভায় একমত পোষণ করা হয়। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় জানায়, চলতি অর্থবছরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এডিপিভুক্ত চলমান প্রকল্পসমূহের মধ্যে ১১টি প্রকল্প সমাপ্ত হবে। এছাড়া আলোচ্য প্রকল্পটি বিল ও হাওর এলাকার মৎস্য উৎপাদন বাড়ানোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এসব বিবেচনায় প্রকল্পটি মধ্যম অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। এখন করোনা পরিস্থিতির বাস্তবতা বিবেচনায় আলোচ্য প্রকল্পের আওতায় এই মুহূর্তে ভবন নির্মাণ না করার বিষয়ে তিনি একমত পোষণ করেন। তবে ভবিষ্যতে প্রস্তাবিত কেন্দ্র দুটি স্থাপনের লক্ষ্যে আলোচ্য প্রকল্পের আওতায় জমি অধিগ্রহণ করে রাখা যেতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০২০
এমআইএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।