ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

রাঙামাটিতে আখের সোনালী দিন

মঈন উদ্দীন বাপ্পী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০২০
রাঙামাটিতে আখের সোনালী দিন আখ, ছবি: বাংলানিউজ

রাঙামাটি: রূপ-লাবণ্যর শহর হিসেবে পরিচিতি পাহাড়ি জেলা রাঙামাটি। এ জেলার অধিকাংশ এলাকায় যুগ যুগ ধরে তামাক চাষ করা হতো।

তামাক চাষ ক্ষতিক্ষারক হওয়া সত্ত্বেও বেশি লাভজনক হওয়ায় এবং তামাকজাত কোম্পানি থেকে অগ্রিম অর্থনৈতিক সুবিধা পাওয়ায় পাহাড়ের কৃষকরা তামাক চাষ করতেন।

বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ৬-৭ বছর ধরে তামাকের আগ্রাসন রুখে দিতে কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে কাজ করছে। এজন্য সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইন্সটিটিউট তামাক চাষের বিকল্প হিসেবে আখ চাষ করতে কৃষকদের সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।

নানিয়ারচর উপজেলার দুর্গম ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের পুকুরছড়ি গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা রিপেন চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, আমি আগে তামাকের চাষ করতাম। বর্তমানে ৭-৮ বছর ধরে আখের চাষ করছি। ৬০ শতক জমিতে ১৫ হাজার বড়-ছোট আখের চাষ করেছি। সব মিলিয়ে এক বছরে খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। আর উৎপাদিত আখ বিক্রি করা হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকায়।
.একই এলাকার আখ চাষি পঞ্চম কান্তি চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, ২ একর জমিতে ২০১৯-২০২০ সময়ে সিও এবং রংবিলাস জাতের ২০ হাজার আখের চাষ করেছি। সবকিছু খরচ বাদ দিয়ে তার দুই লাখ টাকা আয় হবে।

বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইন্সটিটিউট রাঙামাটি শাখা থেকে জানা যায়, দুই ধাপে আখের চাষ করা হয়। প্রথম ধাপের চাষ করা হয় সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরে এবং দ্বিতীয় ধাপের চাষ করা হয় ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। তবে কিছু কিছু কৃষক ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল এই তিন মাসের যেকোনো সময় আখ কাটেন। আখের ফলন পেতে কৃষককে ১০-১২ মাস অপেক্ষা করতে হয়।

সংস্থাটি জানায়, রাঙামাটির জেলা সদর, কাউখালী, নানিয়ারচর, কাপ্তাই, বাঘাইছড়ি এবং জুরাইছড়ি উপজেলায় আংশিক চাষ করা হয়। তবে এসব উপজেলাগুলোর মধ্যে বাঘাইছড়ি এবং কাউখালী উপজেলায় আখের চাষ বেশি করা হয়।

সংস্থাটি আরও জানায়, চলতি বছরে জেলার ৭০৩ হেক্টর জমিতে আখের চাষ করা হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় তিনগুণ বেশি। বর্তমানে জেলায় পাঁচ হাজার ৩০০ জন আখ চাষি রয়েছে। আখ চাষের পাশাপাশি, সাথী ফসলের চাষের সুযোগ থাকায় তামাকের তুলনায় আয়বর্ধক বেশি হওয়ায় কৃষকরা আখ চাষের দিকে বেশি ঝুঁকছেন।
.সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট রাঙামাটি শাখার ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ধনেশ্বর তঞ্চাঙ্গ্যা বাংলানিউজকে বলেন, রাঙামাটিতে বর্তমানে ১৮ জাতের ইক্ষু চাষ করা হচ্ছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বিএসআরআই-৪১ অমৃত (গুড় তৈরির জাত) বিএসআরআই-৪২ রংবিলাস (চুষে খাওয়ার জাত), বিএসআরআই-৪৩, বিএসআরআই-৪৪, মধুমালা, রনাঙ্গণ, বনপাড়া গ্যান্ডারি, মিশ্রিমালা, সিও ২০৮,  বিদেশি জাতের মধ্যে কিউ-৬৯, (অস্ট্রেলিয়া), বিএমসি ৮৬-৫৫০,  ব্ল্যাকরুবী (সিনেগাল)।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ক্লোন চায়না জাতের আখের চাষ করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। আশাকরি খুব শিগগিরই এই জাতটি কৃষকদের হাতে পৌঁছানো হবে।

সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট এর ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ধনেশ্বর তঞ্চাঙ্গ্যা জানান, পার্বত্যঞ্চলে এতোদিন তামাকের রাজত্ব ছিলো। সরকার ২০১২ সাল থেকে চেষ্টা চালাচ্ছে কিভাবে পাহাড়ে তামাকের বিকল্প ফসলের চাষ করা যায়। আর তাই সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে তামাকের বিকল্প আখ চাষের দিকে সচেতনতা গড়ে তোলে কৃষকদের মধ্যে। কৃষকরা শুধু আখ চাষ করছে না, সাথী ফসল হিসেবে মিষ্টি আলু, ঠাণ্ডা আলু, গাজরসহ বহু সবজির চাষ করতে পারছে। যে কারণে তামাকের চেয়ে আখ চাষে লাভ বেশি। এখন কৃষকরা যদি আরও সচেতন হয় তাহলে পাহাড় থেকে চিরতরে তামাকের আগ্রাসন রুখে দেওয়া সম্ভব।

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০২০
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।