ঢাকা: করোনা মহামারি মোকাবিলায় সরকার ঘোষিত প্রণোদনার অর্থ অনেকেই পাচ্ছেন না। এ ব্যাপারে অর্থসচিব ও গভর্নরকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
তিনি বলেন, আমাদের অর্থ ছিল, অর্থ দিয়েছি। যদি কোনো ব্যাংক কথা না শোনে বা আইন না মানে তাহলে প্রয়োজনে ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে প্রণোদনার পর প্রণোদনা—এটা সঠিক মাধ্যম নয়। এজন্য প্রণোদনা ভর্তুকি কমিয়ে যদি পলিসি সার্পোট বেশি দেই ও সংস্কার করি তাহলে রিটার্ন বেশি হবে।
বৃহস্পতিবার (০৩ ডিসেম্বর) ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া প্রণোদনা প্যাকেজের দ্বিতীয় সভা ‘কর্মসৃজন ও গ্রামীণ অর্থনীতি পুনরুজ্জীবন’ শীর্ষক সিরিজ মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী। সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির।
পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, প্রণোদনার অর্থ আমরা পাঠাচ্ছি। কিন্তু তার বড় একটা অংশ যাচ্ছে না। আমাদের চ্যানেলটা বা ব্যাংকিং, ওখানে আমাদের... আমি কাউকে দোষ দেব না। এখানে অর্থসচিব ও গভর্নর আছেন, ব্যাংকগুলো থেকে অনেকেই সহায়তা পাননি। কেন এটা হলো? আমাদের অর্থ ছিল, অর্থ দিয়েছি। আজকে এখানে আর্থিক খাতের দুই প্রধান ব্যক্তি উপস্থিত আছেন। আইন মানতে তারা বাধ্য, আইনকে অসম্মান করা যাবে না। তাহলে কী করতে হবে? আমাদের তথ্য হলো—কেউ কেউ আইন মানছেন না। যদি কোনো ব্যাংক আপনার কথা না মানে তাহলে প্রয়োজনে ব্যবস্থা নিতে পারেন। কারণ, আমরা সবাই একই পথের যাত্রী।
মন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কৌশলের মূল বার্তাটি হচ্ছে স্বাবলম্বী করা। আমাদের অনেক অর্জন আছে। কিন্তু কাজ করতে হবে আমাদের। আমাদের সবাইকে সার্বিকভাবে নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে। তবে আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যাটা হলো—মিস টার্গেটিং। এর ফলে আমরা সার্বিকভাবে রিটার্ন কম পাচ্ছি।
এম এ মান্নান বলেন, দেশের এসএমই খাতে টাকা যাচ্ছে না। কারণ, অধিকাংশ উদ্যোক্তার ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ নেই, তারা পারিবারিকভাবে ব্যবসা পরিচালনা করেন। তারা ব্যাংকে যান না, আসেনও না। তাদের ব্যাংকের আওতায় আনতে উদ্যোগ নিতে হবে। তা না হলে প্রণোদনা কাজে আসবে না। মানুষ টাকা চায় বা লাগে। কিন্তু সেখানে আমরা প্রণোদনা যাই হোক দিচ্ছি। তার যদি শক্তি না থাকে প্রণোদনা-ভর্তুকি দিয়ে লাভ হবে না। এজন্য প্রণোদনা ভর্তুকি কমিয়ে যদি পলিসি সার্পোট বেশি দেই ও সংস্কার করি তাহলে আমাদের রিটার্ন বেশি হবে। প্রতিনিয়ত প্রণোদনার পর প্রণোদনা—এটা সঠিক মাধ্যম নয়।
তিনি বলেন, করোনার সেকেন্ড ওয়েভ মোকাবিলায় আমাদের অর্জিত সক্ষমতা ও জনগণের ঐক্য থাকলে করোনা মোকাবিলা করতে পারব। তবে আমরা সার্বিকভাবে উৎরে যাবে বা গেছি সেটা বলব না। খুঁটিনাটি কিছু ব্যর্থতা ছিল। সেটা নিয়ে আমরা চিন্তিত নই। তবে ব্যর্থতার কারণ নিয়ে আমরা খোঁজ নিয়ে দেখব।
রেমিট্যান্স প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমাদের করোনাকালেও রেমিট্যান্স অনেক বেড়েছে। এটা কেন বাড়ে সেই কারণ খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের দুই শতাংশ প্রণোদনা ও ডিজিটালাইজেশনের কারণে হয়েছে, এর বাইরে আর কী আছে সেটা বের করতে হবে। আর এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।
সভায় কি-নোট উপস্থাপন করেন অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার। প্যানেল আলোচকদের মধ্যে বক্তব্য দেন এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহণন প্রকাশ, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট (এফবিসিসিআই) শেখ ফজলে ফাহিম, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০২০
জিসিজি/এমজেএফ