ঢাকা: বেসরকারিভাবে চাল আমদানি করে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করবে সরকার। এজন্য ২৫ শতাংশ শুল্কে বেসরকারিভাবে বৈধ ব্যবসায়ীদের চাল আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
একই সঙ্গে সরকারিভাবে ৪ লাখ মেট্রিক টন, জিটুজি পদ্ধতিতে দেড় লাখ মেট্রিক টন এবং বেসরকারিভাবেও চাল আমদানি করা হবে বলে জানান তিনি।
রোববার (২৭ ডিসেম্বর) চালের বাজার স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে সরকারি পদক্ষেপসমূহ নিয়ে অনলাইনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা জানান।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ২৫ শতাংশ শুল্কে চাল আমদানি করতে পারবেন বেসরকারি ব্যবসায়ীরা। যারা বৈধ লাইসেন্সধারী আছেন তারা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করবেন ১০ জানুয়ারির মধ্যে। মন্ত্রণালয় কাকে কতটুকু ছাড়পত্র দেবে সেটার এলসি হবে। সেটা আমরা মনিটরিং করব। বেসরকারিভাবে এই চাল আমদানি করে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণ করতেই আমরা বেসরকারিভাবে আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগে ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ শুল্ক ছিলো, এখন ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে কৃষক যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
দাম না বাড়ালে চাল না দেয়ার বিষয়ে মিলাররা হুমকি দিচ্ছেন এমন এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, সরকার কারো হুমকিতে মাথা নত করে না। আমরা মিলারদের চুক্তির জন্য পীড়াপিড়ি করিনি। তারা তাদের হুমকি নিয়ে থাকুক। প্রয়োজন আমরা কৃষকের কাছ থেকে ধান বেশি করে কিনব। যাতে করে তারা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। দরকার হলে ১৫ থেকে ২০ লাখ টন চাল কিনব।
মন্ত্রী বলেন, বেসরকারিভাবে যখন যতটুকু আমদানি করা প্রয়োজন তা করব। বোরো আসার আগে যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার সেটাও করব। বোরো মৌসুমে এ অবস্থা থাকলে আবার আমদানি করব। আমরা কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা ওপেন করেছি। কিন্তু সরকার নির্ধারিত মূল্য মণ প্রতি ১০৪০ টাকা, কিন্তু বাইরে কৃষকরা ধান বিক্রি করে বেনিফিট হলে সরকারের কাছে বিক্রি করে না। কারণ আজকেও বাইরে ১২০০ টাকা মণ দাম আছে।
সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, আমাদের চালের রেট বাণিজ্য, কৃষি, অর্থ, খাদ্য মন্ত্রণালয় মিলে নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু সহনীয় রেট কি করা যায় সেটার নীতিমালা নেই। সবকিছুর একটা নীতিমালা আছে বাট এটার নাই। ধানের দাম কমলে আমরা কৃষকের জন্য হাহাকার করি। আবার চালের দাম বাড়লেও হাহাকার করি। তাই এখানে একটা স্ট্যান্ডার্ড রেট থাকতে হবে। সহনশীল একটি স্ট্যান্ডার্ড রেট তৈরি করতে হবে।
এজন্য গত ২৩ তারিখ একটি মিটিং হয়েছে, সেখানে বাণিজ্য, কৃষি, অর্থ ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ছিলেন। আমরা কমিটিও করেছি। তারা নীতিমালা করতে কাজ করবেন। আর সেটা চূড়ান্ত হলে এটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
খাদ্যমন্ত্রী জানান, আম্ফানের ও অতি বৃষ্টির কারণে ফলন কম হয়েছে। দেশে ধান চালের ঘাটতি আছে তা বলছি না। আমাদের সরবরাহ সিস্টেম আছে। দেশে প্রায় ২০ হাজার মিল আছে, সেখানে প্রতি মিলে ৫০০ মণ কোথাও ১ হাজার মণও প্রক্রিয়াধীন থাকে। হিসাব করলে ৩০ লাখ মেট্রিক টন চাল থাকে।
এসময় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, উৎপাদন মৌসুমে বিভিন্ন ঝড়-বন্যা ছিলো, সে কারণে সমস্যা হয়েছে। তবে কৃষকরা এখন পুরো দমে উৎপাদনে এসেছে। আশা করি আগামী বছর আমাদের ভালো ফসল হবে। প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন এক ফোটা জমি যাতে অনাবাদি না থাকে। আমরা বেসরকারিভাবে ২৫ শতাংশ শুল্কে চাল আমদানির যে অনুমতি দিয়েছি সেটি অনেক রেস্ট্রিকটেড হবে, নীতিমালা করা হবে। এখানে কে কতটুকু আমদানি করতে পারবে সেটা নির্ধারণ করা হবে। কিন্তু বেশি আমদানি করা যাবে না তাহলে কৃষক বঞ্চিত হবে। সেজন্য আমরা এটি কন্ট্রোল করব।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭,২০২০
জিসিজি/এমকেআর