সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরা সদর উপজেলার দাতভাঙ্গা বিল। এ বিলের যতদূর চোখ যায় সারি সারি সরিষা ক্ষেত।
আর সংগৃহীত মধু এনে সঞ্চয় করছে সরিষা ক্ষেতের পাশেই বসানো মৌ বাক্সে। বাক্সগুলো বসিয়েছেন মৌচাষি মোসারফ হোসেন।
মোসারফ হোসেনের ভ্রাম্যমাণ এ মৌ খামারে যেন মধুর হাসি ফুটেছে।
খরচ কম ও তুলনামূলক লাভজনক হওয়ায় ভ্রাম্যমাণ মৌ চাষকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন তিনি।
মৌচাষি মোসারফ হোসেন জানান, তার বাড়ি সাতক্ষীরার শ্যামনগরের সুন্দরবন সংলগ্ন মুন্সীগঞ্জে। ২০০০ সালে আফজাল হোসেন নামে এক মৌচাষি মুন্সীগঞ্জে ভ্রাম্যমাণ মৌ বাক্স বসান। তা দেখেই তিনি মৌ চাষে উদ্বুদ্ধ হন। তখন মাত্র পাঁচটি বাক্স দিয়ে তার ভ্রাম্যমাণ মৌ খামার শুরু হয়। এখন তার খামারে দুইশ’ বাক্স রয়েছে।
তিনি বলেন, মৌ চাষ সারা বছর হলেও মধু উৎপাদন হয় মাত্র পাঁচ মাস। এ পাঁচ মাসে কখনও লিচুর ফুলের মৌসুমে পাবনা, ঈশ্বরদী, কালো জিরা চাষের মৌসুমে মাদারীপুর, সরিষার মৌসুমে মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, এপ্রিলে সুন্দরবন- এভাবেই যেখানে যে ফুল আগে হয়, তার ভিত্তিতে ভ্রাম্যমাণ মৌ বাক্সগুলো নিয়ে সেখানে মৌ খামার স্থাপন করা হয়।
ভ্রাম্যমাণ মৌ খামার স্থাপন করে মধু উৎপাদন একটি লাভজনক পেশা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, দুইশ’ বাক্সের একটি খামার চালাতে পাঁচজন কর্মচারী লাগে, তাদের পারিশ্রমিক ও ভরণ পোষণ, যাতায়াত খরচ, অফ সিজনে মৌমাছিগুলোকে খাওয়ানোসহ যাবতীয় খরচ দিয়ে প্রায় সাত লাখ টাকা খরচ হয়। আর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে প্রায় দেড় টন সরিষা, দুই টন লিচু, এক টন সুন্দরবনের মধু ও ৫০০ কেজি কালো জিরার মধু পাওয়া যায়। যা প্রায় ১২ লাখ টাকায় বিক্রি হয়। অর্থাৎ বছরে পাঁচ লাখ টাকা লাভ হয়।
ভ্রাম্যমাণ মৌ খামার ও মধু উৎপাদনের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সারাদেশে দেড় থেকে দুই হাজার মৌচাষি আছেন, যারা ভ্রাম্যমাণ মৌ খামার স্থাপন করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এর অর্ধেক আবার সাতক্ষীরার। এখন মধু বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। কিন্তু মধু রপ্তানি বা মৌ খামার স্থাপনে সরকারের কোনো পৃষ্ঠপোষকতা নেই। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে মধু উৎপাদন ও রপ্তানির মাধ্যমে যেমন কর্মসংস্থান বাড়ানো সম্ভব, তেমনি বৈদেশিক মুদ্রাও আয় করা সম্ভব।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০২১
এসআই