ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ফেনীতে পোল্ট্রি ফার্মে ‘বার্ড-ফ্লু’র হানা, ক্ষতিগ্রস্ত খামারিরা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০১ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২১
ফেনীতে পোল্ট্রি ফার্মে ‘বার্ড-ফ্লু’র হানা, ক্ষতিগ্রস্ত খামারিরা

ফেনী: চট্টগ্রাম বিভাগের পোল্ট্রি জোন খ্যাত ফেনীতে গত কয়েক সপ্তাহে বার্ড-ফ্লুতে শতাধিক খামারির কয়েক হাজারো মোরগ-মুরগি মারা গেছে। এতে এসব খামার মালিকদের কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত খামারিরা জানিয়েছেন, তাদের যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তাতে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিরা আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে।

ক্ষতিগ্রস্ত খামার মালিক ও একাধিক সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এসব পোল্ট্রি ফার্মে মুরগিগুলো বার্ড-ফ্লু রোগে আক্রান্ত হয়ে অল্প সময়ের ব্যবধানে শতাধিক খামারির মুরগি মারা গেছে।  

ক্ষতিগ্রস্ত খামারিরা তাদের ফার্মের আক্রান্ত মুরগি ও মোরগ নিয়ে স্থানীয় প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তাদের দ্বারস্থ হলে প্রাণিসম্পদ বিভাগের কিট দিয়ে বার্ড-ফ্লু টেস্ট করানো হয়। টেস্ট বার্ড-ফ্লুর নেগেটিভ রিপোর্ট আসে। পরবর্তীতে খামারিরা প্রাণি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে গেলে তারা ঘউ রানীক্ষেত রোগ বলে মুরগির চিকিৎসা দেন। কিন্তু এ চিকিৎসায় কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অজ্ঞাত এ রোগ অল্প সময়ের ব্যবধানে পুরো জেলার পোল্ট্রি খামার গুলোতে ছড়িয়ে পড়ে।

সোনাগাজী পৌর এলাকার দুই নম্বর ওয়ার্ডের মেসার্স আরিফ অ্যান্ড ব্রাদার্স অ্যাগ্রো প্রজেক্টের মালিক কাজী বাকি বিল্লাহ আরিফ বাংলানিউজকে জানান, ২০১৭ সালে পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করে ও বিভিন্ন ব্যাংক এবং এনজিও সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে পাঁচ হাজার লেয়ার মুরগির শেড চালু করেন তিনি। ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় পরবর্তীতে প্রজেক্টের পরিধি বাড়িয়ে পাঁচ হাজার সোনালি মুরগি এবং তিন হাজার লেয়ার মুরগির শেড করেন। এর সঙ্গে তিনি প্রায় ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে বায়ো গ্যাস প্ল্যান্ট চালুও করেন। এ গ্যাস প্ল্যান্ট থেকে খামারের আশপাশের পাঁচটি চায়ের দোকান এবং একটি খাবার হোটেলসহ ২৫টি পরিবারের রান্নার কাজে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে।

তিনি জানান, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে খামার প্রতিষ্ঠার পর ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কিছু স্বাভাবিক রোগে খামারের মুরগি আক্রান্ত হলে প্রাণিসম্পদ বিভাগের চিকিৎসকের পরামর্শে তা ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু অজ্ঞাত রোগ মহামারি আকার ধারণ করায় দ্রুত তা খামারে ছড়িয়ে পড়লে এক সপ্তাহের মধ্যে তার পাঁচটি শেডের চারটির মোরগ মরে শেড গুলো শূন্য হয়ে যায়।

বিভিন্ন এনজিও এবং ব্যাংক থেকে প্রায় ৫৫ লাখ টাকাসহ এক কোটি টাকার বেশি তিনি খামারে বিনিয়োগ করেছেন বলে জানান আরিফ।

এ বিষয় ফেনী সদরের মমতাজ মিয়ার হাটের সুপ্রিম পোল্ট্রি কেয়ার সেন্টারের ব্যবস্থাপক (এমডি) হাজী নুরুল আলম সুমন এবং ফেনী জেলা পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, ‘সাম্প্রতি বার্ড-ফ্লুতে ফেনীতে শতাধিক খামারির হাজারো মোরগ ও মুরগি মারা গেছে। অনেক খামারির কোটি কোটি টাকার পুঁজি হারিয়ে এখন পথে বসার উপক্রম হয়েছে। ’
 
তারা আরও জানান, ফেনীতে নিবন্ধনকৃত পোল্ট্রি ফার্মসহ কয়েকশ খামারি রয়েছেন। এর মধ্যে বেশি ক্ষতি হয়েছে সোনালি এবং লেয়ারের মুরগি ফার্মে। ফেনীতে সোনালি ব্রিডার হ্যাচারি সংখ্যা ১২টি। এর মধ্যে পাঁচটি মা মুরগির হ্যাচারিইও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ক্ষোভ প্রকাশ করে খামারিরা বলেন, ফার্মের মুরগি ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার পর এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাদের কাছে বার্ড-ফ্লু আক্রান্ত মুরগি নিয়ে দেখা করলে তারা বিষয়টি পাত্তাও দেননি। কারণ বার্ড-ফ্লুতে মুরগি আক্রান্ত হলে সরকারি ভাবে খামারিদের ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। এজন্যই কি তারা ভাইরাসের বিষয়টি স্বীকার করতে নারাজ।

এ বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, আমাদের উপজেলা পর্যায়ে প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা রয়েছেন। বার্ড-ফ্লু কিংবা অজ্ঞাত রোগে পোল্ট্রি ফার্মের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এমন লিখিত কোনো অভিযোগ কেউ করেননি।

তিনি বলেন, আমাদের কর্মকর্তারা খামার পরিদর্শনে করে। খামারিদের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ এলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২১
এসএইচডি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।