ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

হাওর অঞ্চলে ধান কাটা শুরু, উৎপাদনের লক্ষ্য ২ কোটি ৫ লাখ টন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০২১
হাওর অঞ্চলে ধান কাটা শুরু, উৎপাদনের লক্ষ্য ২ কোটি ৫ লাখ টন

ঢাকা: সুনামগঞ্জের জয়কলস ইউনিয়নের আস্তমা গ্রামে চলতি মৌসুমে বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। এবার বোরোতে ২ কোটি ৫ লাখ চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক।

 

তিনি বলেন, হাওর এলাকার ধান যদি আমরা ঘরে তুলতে পারি, আমাদের আর ঝুঁকি থাকবে না। স্বস্তিতে থাকতে পারবো। লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে।

বৃহস্পতিবার (০১ এপ্রিল) দুপুরে সচিবালয় থেকে ভার্চ্যুয়ালি সিলেটের দক্ষিণ সুনামগঞ্জের জয়কলস ইউনিয়নের আস্তমা গ্রামের কৃষক আবদুল হেকিমের চাষ করা হাইব্রিড বোরো ধান কাটা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান।  

ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানটি সভাপতিত্ব করেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন।  

এ সময় কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মেসবাহুল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মো. আসাদুল্লাহসহ অন্যন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।  

কৃষিমন্ত্রী বলেন, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার আস্তমা গ্রামে এই বছরের বোরো মৌসুমের ধান কাটা শুরু হয়েছে। আমি মন্ত্রী হিসেবে সুনামগঞ্জবাসীকে অভিনন্দন জানাই, ধন্যবাদ জানাই। আমি বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি গোচর করেছি। উনিও আপনাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। কৃষক গত বোরো, আউশ ও আমনে ভালো দাম পেয়েছে ইনশাআল্লাহ তারা এই বোরোতেও যাতে ভালো দাম পায় সেজন্য আমরা ইতোমধ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছি, সেভাবে আমরা ধান ক্রয়েরও ব্যবস্থা করবো।

তিনি বলেন, আমরা তিনটি মৌসুমে ধান করে থাকি বোরো, আউশ ও আমন। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে বোরো ধান রোপণ করা হয়, এপ্রিলের শেষের দিক থেকে ধান কাটা শুরু হয়ে মে-জুনের প্রথম ভাগে এসে সারাদেশে শেষ হয়। বোরোটাই আমাদের চালের সবচেয়ে বড় মৌসুম। সাধারণত এপ্রিলের ১৫ তারিখের পর বোরো কাটা শুরু হয় কিন্তু হাইব্রিড করার কারণে আগেই কাটা হচ্ছে। আমাদের একজন চাষি ১০ একর জমিতে হাইব্রিড বোরো চাষ করেছেন, তিনি স্থানীয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, খুবই একজন উদ্যোগী চাষি, তার সৃজনশীলতা আছে।

এই বছর ৪৮ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, সেখানে আমরা এই লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে সারাদেশে ৪৮ লাখ ৮৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান লাগিয়েছি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ বেশি হয়েছে। এছাড়া আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম হাইব্রিড ধানে উৎপাদনশীলতা বেশি তাই আমরা চেয়েছিলাম ২ লাখ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড আবাদ করবো। সেজন্য আমরা কৃষকদের বীজসহ অন্যান্য প্রণোদনা দিয়েছি। এবার আমরা বোরোতে অতিরিক্ত ৭৩ কোটি টাকা প্রণোদনা দিয়েছি। আমরা আশা করি, হাইব্রিডের কারণে কমপক্ষে ৩ লাখ টন বেশি ধান আমরা পাবো।

বন্যার কারণে গত আমন ও আউশের ফলনের ক্ষতি হয়েছিল জানিয়ে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমরা দেখেছি অগ্রহায়ণ মাসেও চালের দাম বেড়ে গিয়েছিল, এখন পর্যন্ত যদিও চালের দাম স্থিতিশীল রয়েছে, তবু দামটা বেশি। নিম্ন আয়ের মানুষের কিছুটা হলেও কষ্ট হয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি দেশে করোনার প্রভাব আবার বেড়েছে৷ এসময়ে মানুষের খাদ্যের কোন অভাব না হয় আমরা সেটি নিশ্চিত করতে চাই।  

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মেসবাহুল ইসলাম বলেন, আজকে বিশেষ আনন্দের দিন আমাদের জন্য। আমরা প্রতীক্ষা করছিলাম ধান কবে উঠবে, এটার সঙ্গত কারণও ছিল। বার বার বন্যা হওয়ায় গত আমন মৌসুমে উৎপাদন কম হওয়ায় দেশে ধান ও চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকার কারণে সাধারণ মানুষে সমস্যা হচ্ছিল। পাশাপাশি আমাও উদ্বিগ্ন ছিলাম বোরোটা কী রকম হয়? বোরো কর্তনের মধ্য দিয়ে আমরা জাতির কাছে বার্তা দিতে পারছি আগামভাবে বোরোটা আসছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মো. আসাদুল্লাহ বলেন, বোরোতে হাইব্রিড জাতটি বিপ্লব ঘটিয়েছে। এবার আমরা প্রণোদনার মাধ্যমে বোরোতে ২ লাখ হেক্টর জমিতে হইব্রিড বীজ দিতে পেরেছি, ফলশ্রুতিতে হাইব্রিডের আবাদ বেড়েছে। বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত জমি কমছে, সেখানে যদি আমরা হাইব্রিড জাতের আবাদ বাড়তে পারি তাহলে দেখা যাবে অল্প জমিতে আমরা অনেক বেশি ফলন পাব। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই এই হাইব্রিড আবাদ। এই জাতটি ১৩৬ দিনে এই হাইব্রিড জাতটি কর্তন হতে যাচ্ছে। এবার আমরা ২ কোটি ৫ লাখ টন বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগোচ্ছি। এবারই সবচেয়ে বেশি লক্ষ্যমাত্রা। গত বছর উৎপাদন ছিল ২ কোটি ১ লাখ টন।

মহাপরিচালক আরও বলেন, ধান কর্তনের কারণে একটি বার্তা দেশবাসী পেয়ে গেলো, যে শুরু হলো বোরো ধান কর্তন, আর আমাদের সমস্যা নেই। তবে, দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ার কারণে সুনামগঞ্জসহ হাওরের সাতটি জেলা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। চৈতালি ঢল বা ফ্ল্যাশ ফ্ল্যাড বা পাহাড়ি ঢলের কারণে আমরা অনেক সময় বোরো ধান আমরা কাটতে পারি না। শুধু গত বছরই আমরা হাওরে সম্পূর্ণ ধান কাটতে পেরেছিলাম।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০২১
জিসিজি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।