ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ফার্ম ফ্রেশ ইউ এইচটি মিল্কের গুণগতমান অক্ষুণ্ন থাকে যেভাবে

বিজনেস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৪ ঘণ্টা, জুন ১, ২০২১
ফার্ম ফ্রেশ ইউ এইচটি মিল্কের গুণগতমান অক্ষুণ্ন থাকে যেভাবে আকিজ ডেইরির সিওও মো. মোসলেহ উদ্দীন

ঢাকা: কঠোর মান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তৈরি ফার্ম ফ্রেশ ইউ এইচটি মিল্ক ভোক্তাদের হাতে পৌঁছে দিচ্ছে আকিজ ডেইরি। দুধের গুণগতমান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ভোক্তাদের সেরা পণ্যটি দেওয়ার পাশাপাশি খামারিদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যেও কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি।

দুগ্ধ খামারিদের কাছ থেকে সংগৃহীত দুধ বেশ কিছু ধাপ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের পর মোড়কজাত হয়ে বাজারে আসে। সেসব ধাপ ও প্রক্রিয়ার অজানা কিছু গল্প তুলে ধরেছেন আকিজ ডেইরির সিওও মো. মোসলেহ উদ্দীন।

তিনি জানান, ফার্ম ফ্রেশ মূলত সারা দেশ থেকে দুধ সংগ্রহ করে থাকে। প্রধানত পাবনা, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট অঞ্চলের খামারিদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ করা হয়। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব দু’টি খামার রয়েছে। সেখান থেকেও কিছু পরিমাণ দুধ সংগ্রহ করা হয়।

প্রতিষ্ঠানটি যেসব খামারিদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ করে তারা সবাই নিবন্ধিত খামারি। সারা দেশে কোম্পানিটির প্রায় ১০ হাজারের মতো নিবন্ধিত খামারি রয়েছে। তারা নিবন্ধিত খামারির সংখ্যা বাড়াচ্ছেন। ২০২৪-২৫ সালের মধ্যে ফার্ম ফ্রেশের নিবন্ধিত খামারির সংখ্যা ৫০ হাজার করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।

খামারিদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ থেকে ফার্ম ফ্রেশের ফ্যাক্টরিতে আনা পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াটি বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় করা হয়ে থাকে। আর কৃষকরা যেন স্বাস্থ্যসম্মতভাবে গরু লালন-পালন করে সে বিষয়ে তাদের সহযোগিতা করা হয়। খামারিদের রোগ প্রতিরোধ, গরুর ঘর তৈরি ও লালন-পালনসহ খামার সংশ্লিষ্ট যাবতীয় বিষয়ে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়।

এরপর তারা দুধ সংগ্রহ করার পর ফার্ম ফ্রেশের নিকটস্থ ক্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসে। মাঠপর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটির ল্যাব ও দক্ষ কর্মীবাহিনী রয়েছে। সেখানে দুধের গুণগত মান পরীক্ষা করার পর তা গ্রহণ করা হয়। তারপর দুধকে চার ডিগ্রির কম তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা হয়।

নিজস্ব চিলিং সেন্টারে অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে দুগ্ধ শীতলীকরণের পর নিজস্ব ট্যাংকারে নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রায় পরিবহন করে ফার্ম ফ্রেশের ফ্যাক্টরিতে নিয়ে আসা হয়। দুধ ফ্যাক্টরিতে আনার পর আবারও এর গুণগত মান পরীক্ষা করার পরই ফ্যাক্টরিতে দুধ গ্রহণ করা হয়। এরপরই প্রক্রিয়াজাত করে বিভিন্ন দুগ্ধজাত দ্রব্য তৈরি করা হয়। প্রতিটি ধাপেই দুধের গুণগত মান পরীক্ষা করা হয়। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দুধের মানের বিষয়ে ফার্ম ফ্রেশ কখনো আপোস করে না।

১৪০-১৪৩ ডিগ্রি তাপমাত্রায় প্রক্রিয়াজাত করে দুধকে ইউ এইচটি দুধে রূপান্তর করা হয়। এ উচ্চ তাপমাত্রায় প্রক্রিয়াজাত করার ফলে দুধ সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত হয়। সুইডেনের অত্যাধুনিক মেশিনে প্রসেসিং করে ছয় স্তর বিশিষ্ট অ্যাসেন্টিক ফিলিং পদ্ধতিতে প্যাকেটজাত করা হয়। প্যাকেট ও দুধ দু’টিই স্টেরিলাইজড করা হয়। যার ফলে কোনোভাবে জীবাণু থাকার সম্ভাবনা থাকে না। কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয়, ফ্রিজিং করা ছাড়াও প্যাকেটজাত দুধ ছয় মাস পর্যন্ত ভালো থাকে। কিন্তু দেখা গেছে এক বছর পর্যন্তও এ দুধের গুণগত মান অক্ষুণ্ন থাকে।

দুধ সংগ্রহ থেকে বাজারজাত করা পর্যন্ত প্রত্যেকটি ধাপে দুধের গুণগতমান বজায় রাখা হয়। তৈরির পর প্রতি ব্যাচ থেকে কিছু নমুনা সংগ্রহ করে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। এমনকি সরাসরি বাজার থেকেও দুধের নমুনা সংগ্রহ করে গুণগত মান পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া খামারিদের গবাদিপশুগুলোও কোম্পানির মনিটরিংয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ভেটেনারি চিকিৎসক আছেন। খামারিরা চিকিৎসকের কাছ থেকে পরামর্শ নেন। এছাড়া গরুর কৃমির ওষুধ, টিকার ব্যবস্থা করা হয়।

ফার্ম ফ্রেশ দুধে কোনো কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না। তারা যেটা করে তা হলো দুধকে উচ্চ তাপমাত্রায় ফুটানো হয়। দুধ মূলত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জীবাণুর (ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ইস্ট ইত্যাদি) কারণে নষ্ট হয়। তাপ প্রয়োগ করে এসব মাইক্রো অর্গানিজমগুলোকে ধ্বংস করা হয়। দুধ ফুটিয়ে পান করা একটি চিরায়ত নিয়ম।

জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতিটি মানুষের প্রতিদিন ২৫০ মিলি দুধ পান করা উচিত। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের দুধপানে কিছুটা অনীহা লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে শিশুরা একদমই দুধ খেতে চায় না। এ অনীহা দূর করার জন্য ফার্ম ফ্রেশ দুধে ফ্লেভার যোগ করেছে। ফ্লেভারড দুধের মধ্যে রয়েছে ম্যাঙ্গো, চকোলেট, ক্ষীর, ভ্যানিলা, এলাচ। এতে দুধপানে অনীহা অনেকটাই কমেছে, স্বাদেও এসেছে বৈচিত্র।

দুধ উৎপাদনকারী খামারিরা ফার্ম ফ্রেশেরই অংশ। কৃষকেদের উন্নয়নের লক্ষ্যে ফার্ম ফ্রেশ কাজ করে যাচ্ছে। গবাদিপশু লালন-পালন থেকে শুরু করে দুধ সংগ্রহ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে তাদের সহযোগিতা করা হয়। তাছাড়া বিভিন্ন বিষয়ে তাদের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তাদের প্রযুক্তিগত সহয়তাও দেওয়া হয়।

এছাড়া স্বল্প সুদে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে তাদের ঋণ নিতে সহয়তা করা হয়। সে বিষয়ে ব্যংকের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের যোগাযোগ থাকে। এছাড়া করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি (সিএসআর) প্রোগ্রামের আওতায় কৃষকদের সহয়তা করা হয়। উদাহরণ স্বরূপ কৃষকদের সন্তানদের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সহয়তা করে থাকে ফার্ম ফ্রেশ।

আকিজ ডেইরির সিওও মো. মোসলেহ উদ্দীন জানান, ভোক্তাদের চাওয়া থাকে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে ভালো সেবা ক্রয় করতে পারে। ফার্ম ফ্রেশ সে বিষয়ে গ্রাহকদের সম্পূর্ণ আস্থা অর্জন করেছে। তাই বাজারে তাদের পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। আর তারাও বেশি পরিমাণে দুধ কৃষকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে পারছে। এতে খামারিদের জীবনমানের উন্নয়ন হচ্ছে।

দেশে দুগ্ধ শিল্পের বিকাশে সরকারের সুনজরের পাশপাশি বিদেশি গুঁড়োদুধ আমদানি করা কমানোর পরামর্শ দেন তিনি। মোসলেহ উদ্দীন বলেন, আমাদের দেশ এখনো দুধে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। দুগ্ধ শিল্প এখনো অবহেলিত একটি শিল্প। এজন্য এ খাতে সহযোগিতায় সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। তরুণ উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা দিতে হবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ নিশ্চিত করতে হবে। আর চড়া দাম দিয়ে গুঁড়োদুধ আমদানি ধীরে ধীরে কমিয়ে এক পর্যায়ে তা বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি গরুর জাত উন্নয়ন ও মানসম্পন্ন গাভী সরবরাহ করা অত্যন্ত জরুরি।  

বাংলাদেশ সময়: ২০৫১ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০২১
আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।