ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে বাগেরহাটে ১১ খাতে ৪৬ কোটি টাকার ক্ষতি

এস.এস শোহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৬ ঘণ্টা, জুন ৮, ২০২১
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে বাগেরহাটে ১১ খাতে ৪৬ কোটি টাকার ক্ষতি ‘ইয়াসে’ ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক। ছবি: বাংলানিউজ

বাগেরহাট: ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট ঝড়ো বাতাস ও জলোচ্ছ্বাসে বাগেরহাটে ১১টি খাতে অন্তত ৪৬ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো সংস্কার ও ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের জন্য সহযোগিতা দেওয়া শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।

বাগেরহাট জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখার তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস ও বাতাসে টাকার অংকে সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে বাগেরহাটের বিভিন্ন সড়কের। ইয়াসে পাকা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২২ কিলোমিটার, ইট সলিং বা খোয়ার তৈরি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫৫ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার। বিভিন্ন স্থানে কাঁচা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৩৫ দশমিক ৬৪ কিলোমিটার।  টাকার অংকে এখানে ক্ষতির পরিমাণ ১৮ কোটি ২২ লাখ ৩৬ হাজার টাকা।

ক্ষতির দিক দিয়ে সড়কের পরেই রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থান। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসের প্রভাবে ২২টি স্থানে বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩১ দশমিক ৮৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৪টি স্থানে নদীর তীর ভেঙে গেছে ২ দশমিক ৮ কিলোমিটার, বেড়িবাঁধ সংলগ্ন ১৫টি ব্রিজ-কালভার্টও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অন্তত ১৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

মৎস্য খাতেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে। ইয়াসে বাগেরহাটের ৬ হাজার ১শ চিংড়ি ও সাদা মাছের ঘের ভেসে গেছে। কাঁকড়ার ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৬৫টি। এছাড়া ২০টি জেলে নৌকা ও ৩০টি জাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইয়াসের তাণ্ডবে। আর্থিক হিসেবে মৎস্য খাতে ৯ কোটি ৯৬ লাখ ৮৬ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।

ইয়াসের তাণ্ডবে বেশকিছু ঘরবাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২টি ঘর সম্পূর্ণ ও ৭৫৬টি ঘর আংশিক ক্ষতি হয়েছে। এতে ঘরের মালিকদের এক কোটি ৫১ লাখ ৬৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। ইয়াসে বিভিন্ন গৃহস্থের ৩৮৩টি হাঁস ও ৮৯২টি মুরগি মারা যাওয়ায় প্রাণিসম্পদ বিভাগের ক্ষতি হয়েছে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৫০৪ টাকা। শস্য ক্ষেত ও বীজতলা নষ্ট হয়ে কৃষিবিভাগের ক্ষতি হয়েছে ৬৪ লাখ ১৬ হাজার টাকা। বৈদ্যুতিক খুঁটি, বিদ্যুৎ লাইন ও বেশকিছু যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়ায় বিদ্যুৎ বিভাগের ক্ষতি হয়েছে ৫ লাখ ১১ হাজার টাকার।

এসব ছাড়াও ইয়াসের প্রভাবে জেলার ৯ উপজেলায় ৪৩টি নলকূপ ও ১ হাজার ৭০৫টি টয়লেট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের হিসেবে এতে এক কোটি ১৯ লাখ ৮১ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। ইয়াসের জলোচ্ছ্বাসে নার্সারিতে পানি উঠে বনবিভাগের ক্ষতি হয়েছে ১২ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৪টি মাদরাসাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ক্ষতি হয়েছে ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকার। স্বাস্থ্য বিভাগের একটি হাসপাতালের অবকাঠামো আংশিক ক্ষতি হয়েছে। যা মেরামতে ব্যয় হবে এক লাখ টাকা।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের বিভিন্ন অবকাঠামো নষ্ট হয়ে অন্তত ৬০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক খোন্দকার মোহাম্মদ রিজাউল করিম বলেন, ইয়াসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে। ৭৫টি ইউনিয়ন ও ৩টি পৌরসভায় দুই কোটি সাড়ে ১২ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে।  

এছাড়াও ৯টি উপজেলার প্রত্যেকটিতে শিশু খাদ্যের জন্য এক লাখ এবং গো খাদ্যের জন্যে এক লাখ টাকা করে সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে। সহযোগিতা দেওয়া অব্যাহত রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, যারাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রত্যেকের তালিকা করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত সবাই ক্ষতিপূরণ পাবে বলে জানান তিনি।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮০২ ঘণ্টা, জুন ০৮, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।