ঢাকা: রাজধানীর বনানী এলাকার একটি অভিজাত রেস্টুরেন্ট ভ্যাট নিবন্ধন না নিয়েই ক্রেতাদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করে পাঁচ মাসে ৩৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করায় মামলা করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা।
বুধবার (১৬ জুন) ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরের অভিযান থেকে এ তথ্য পাওয়া যায়।
জানা যায়, বনানীর টেপটেলস নামক প্রতিষ্ঠানটি ভুয়া চালানে নির্ধারিত ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায় করলেও তা সরকারি কোষাগার জমা করেনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ক্রেতা টেপটেলস রেস্টুরেন্টে খাবার খেয়ে বিল দিতে গিয়ে ভ্যাটের চালান চান। কিন্তু প্রতিষ্ঠান পিওএস মেশিনের মাধ্যমে ভ্যাট নিবন্ধনবিহীন ৬.৩ চালান দেওয়ায় ক্রেতা ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সংস্থার সহকারী পরিচালক মুনাওয়ার মুরসালীন গতকাল ১৫ জুন সন্ধ্যায় অভিযান পরিচালনা করে।
অভিযানে গোয়েন্দা দল দেখতে পান, প্রতিষ্ঠানটি ক্রেতার কাছ থেকে ভুয়া ৬.৩ চালান ইস্যু করার মাধ্যমে যথারীতি ভ্যাট আদায় করছে। গোয়েন্দার দল রেস্টেুরেন্টের কম্পিউটার থেকে বিক্রয় তথ্য জব্দ করে।
গোয়েন্দাদের তদন্তে আরো দেখা যায় যে, প্রতিষ্ঠানটি সরকারের ভ্যাট ফাঁকির উদ্দেশ্যে নানা ধরনের জালিয়াতি ও মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে, যা ভ্যাট আইন অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
তদন্ত অনুসারে আরো দেখা যায় যে, প্রতিটি খাবারের বিলে ‘VAT Registration: Applied’ হিসেবে উল্লেখ রয়েছে এবং এতে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায় করা হয়েছে। অথচ এই ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমা দেয়নি রেস্টুরেন্টটি।
ভ্যাট আইন অনুসারে, যে কোনো ভ্যাটযোগ্য ব্যবসা শুরুর আগেই যথাযথভাবে ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণ এবং নির্ধারিত ৬.৩ ফরমে ক্রেতাদের ভ্যাট চালান ইস্যু করতে হবে। একই সঙ্গে কর মেয়াদ শেষে পরবর্তী মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে স্থানীয় ভ্যাট অফিসে রিটার্নের মাধ্যমে ক্রেতাদের কাছ থেকে সংগৃহীত ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
অথচ এই রেস্টুরেন্ট ভ্যাট নিবন্ধন ছাড়া গত পাঁচ মাস ধরে ব্যবসা করে আসছে এবং নিবন্ধন ব্যতিরেকে ক্রেতাদের কাছ থেকে ভ্যাট কাটছে।
প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে জব্দ তথ্য অনুসারে জানুয়ারি/২০২১ থেকে ১৫ জুন/২০২১ পর্যন্ত ভ্যাট আরোপযোগ্য পণ্যের বিক্রয়মূল্য ছিল ২ কোটি ৩২ লাখ ৬৩ হাজার ৯৭ টাকা, যার উপর প্রযোজ্য ভ্যাট ৩৪ লাখ ৮৯ হাজার ৪৬৫ টাকা। এই ভ্যাট যথাসময়ে পরিশোধ না করায় ভ্যাট আইন অনুযায়ী মাসিক ২ শতাংশ হারে সুদ ২ লাখ ৯ হাজার ৭৪৫ টাকা প্রযোজ্য।
প্রতিষ্ঠানের জিএম মো. আনিস জানান, তারা ভ্যাট নিবন্ধনের জন্য এখনো কাগজপত্র সংগ্রহ করছেন। ভ্যাট নিবন্ধন নেই, কিন্তু ক্রেতাদের কাছ থেকে বিলের মাধ্যমে কেন ভ্যাট আদায় করা হচ্ছে— এমন প্রশ্নের সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনি রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ।
ভ্যাট নিবন্ধন না নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করা এবং ভুয়া চালানে ক্রেতাদের কাছ থেকে আদায় করা ভ্যাট আত্মসাৎ করায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে মামলা দায়ের করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর।
তদন্তে উদ্ঘাটিত এই অপরাধ সংঘটন নিষ্পত্তির জন্য মামলার প্রতিবেদনটি ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেটে পাঠানো হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৬ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০২১
এসএমএকে/এএ