ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ জুলাই ২০২৪, ০১ মহররম ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

পোড়াদহ মেলায় সকালেই ৮ কোটি টাকার মাছ বিক্রি

কাওছার উল্লাহ আরিফ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২২
পোড়াদহ মেলায় সকালেই ৮ কোটি টাকার মাছ বিক্রি মেলায় মাছ বিক্রি চলছে। ছবি: বাংলানিউজ

বগুড়া: মাঘের শেষে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা। প্রায় ৪০০ বছরের গ্রামীণ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার ইছামতির তীরে পোড়াদহ এলাকায় এ মেলার আয়োজন করা হয়।



মাছের জন্য বিখ্যাত বগুড়ার গাবতলী উপজেলার পোড়াদহ মেলায় গড়ে উঠেছে অস্থায়ী পাইকারি মাছের আড়ত। প্রতি বছরের মতো মেলা শুরুর একদিন আগে বসানো এসব আড়তে এরই মধ্যে বিকিকিনি হয়েছে প্রায় ৬-৮ কোটি টাকার মাছ। প্রতি বছরের মতো মেলায় উত্তরে রাস্তা ঘেঁষে ১৩টির মতো বড় আড়ত বসেছে। বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) ভোর সাড়ে ৩টা থেকে মেলায় আসা বিভিন্ন এলাকার খুচরা ব্যবসায়ী এসব আড়ত থেকে মাছ কেনা শুরু করেন। এরপর তারা মেলায় বসানো দোকানে সেসব মাছ ওঠান। পরে বিক্রি করেন ক্রেতা সাধারণের কাছে।

বুধবার দুপুর ১টা পর্যন্ত এসব আড়তে পাইকারি দর হিসেবে বিভিন্ন প্রজাতির মাঝারি ও বড় আকারের প্রায় ৮ কোটি টাকার মাছ বেচাকেনা হয়েছে। গেল বছরের মতোই এবার মাছ আমদানি করেছেন বলে দাবি বলেন ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে কাতলা, চিতল, বোয়াল, রুই, মৃগেল, হাঙড়ি, গ্রাস কার্প, সিলভার কার্প, বিগহেড, কালিবাউশ, পাঙ্গাস মাছ অন্যতম।
হায়দার আলী, মো. মাসুদ রানা, জয়নাল আবেদীনসহ বেশ কয়েকজন আড়তদার বাংলানিউজকে বলেন, বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী এ মেলা শুরুর প্রায় দুই সপ্তাহ আগে থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকারি ব্যবসায়ীরা এ মেলাকে সামনে রেখে মাছ কেনা শুরু করেন। এসব মাছ তারা সংরক্ষণ করেন ছোট ছোট পুকুরে। মেলা শুরুর একদিন আগে এসব পাইকারি ব্যবসায়ী ছোট-বড় ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে মেলায় মাছ নিয়ে আসেন। স্থানীয় আড়তদারের মাধ্যমে তা মেলায় আসা খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। ছয়তারা মাছ আড়তের মালিক শাহাদাত হোসেন বাবু বাংলানিউজকে জানান, প্রতি বছরের মতো তিনিসহ অন্য আড়তদাররা ভোর সাড়ে ৩টা থেকে পাইকারি মাছ বিক্রি শুরু করেন। দুপুর সাড়ে ১২টার মধ্যে তিনি মাঝারি ও বড় আকারের বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৯৫ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করেছেন।  

তারা প্রায় ২ থেকে ৩ কোটি টাকার মাছ বেচাকেনা করেন এ মেলায়। এর মধ্যে ৫-১৫ কেজি ওজনের মাছ সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে বলেও জানান তিনি।

দুই ভাই আড়তের হায়দার আলী বাংলানিউজকে জানান, তিনি প্রায় ৩৫ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করেছেন। বিক্রি করা মাছের মধ্যে রুই, মৃগেল, সিলভার, বিগহেড, কাতলা অন্যতম।
আড়তদাররা বলেন, রাজশাহী, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, চট্টগ্রাম, সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহর থেকে ব্যবসায়ীরা এ মেলায় পাইকারি মাছ বিক্রি করতে আসেন।


মাছের জন্য বিখ্যাত এ মেলায় ৬ থেকে ৭০০ এর মতো খুচরা মাছ ব্যবসায়ী দোকান বসিয়েছেন। তারা নিজেরাও বিভিন্ন এলাকা থেকে মাছ নিয়ে এসেছেন। পাশাপাশি প্রত্যেক খুচরা বিক্রেতা ক্রেতার চাহিদা মাথায় রেখে আড়ত থেকেও মাছ কিনেছেন।  

খুচরা ব্যবসায়ীদের মাছ বিক্রির হিসাব জানতে মেলা শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলেও জানান এসব আড়তদার। প্রতিবছর ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলায় প্রধান আকর্ষণ হয়ে থাকে বড় আকৃতির বাঘাইর মাছ। তবে, এ বছর মহাবিপন্ন বাঘাইড় মাছ প্রদর্শন ও বিক্রি বন্ধ করতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্রিদের চিঠি দিয়েছে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট। চিঠিতে বলা হয়, বাঘাইড় মাছ একটি মহাবিপন্ন প্রাণী। তাই পোড়াদহ মেলায় মহাবিপন্ন মাছটি কেনা-বেচা বন্ধ করতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করা হলো। বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০০২ অনুযায়ী মেলায় মহাবিপন্ন বাঘাইড় কেনাবেচা করা হলে এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে।

বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট ঢাকার পরিচালক এ এস এম জহির উদ্দিন আকন্দ জানান, বাঘাইড় মাছ দিন দিন বিপন্ন হয়ে যাচ্ছে। যেভাবে এই মাছকে বিক্রি করা হচ্ছে একপর্যায়ে এই প্রাণী হারিয়ে যাবে। এজন্য পোড়াদহ মেলায় এ মাছ প্রদর্শন ও বিক্রি বন্ধে প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে।

এদিকে জেলা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই চলছে ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে দুপুরে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে মেলা বন্ধ করার ঘোষণা দিলেও তা আমলে নিচ্ছেন না মেলায় আসা ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি করছেন মেলা চালিয়ে যাওয়ার।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২২
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।