ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

মানিকগঞ্জে লেবুর হালি ৬০ টাকা!

সাজিদুর রহমান রাসেল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ৪, ২০২২
মানিকগঞ্জে লেবুর হালি ৬০ টাকা!

মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার শেখরি নগরসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি এলাকায় প্রচুর লেবুর আবাদ হয়ে থাকে আর এই লেবু রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের চাহিদা পূরণ করে। তবে এ বছর চলতি মৌসুমে লেবুর ফলন আশানুরূপ হয়নি।

তাই সরবরাহের তুলনায় উৎপাদন কম, ফলে খুচরা বাজারে দর হাঁকাচ্ছে লেবু বিক্রেতারা এবং অসহায় হয়ে পড়ছে ক্রেতা সাধারণ।  

একে তো চৈত্রের খরতাপ আর তার ওপর মাহে রমজান, এই দুই কারণে হঠাৎ লেবুর চাহিদা বেড়ে যায় এবং চাহিদার তুলনায় সরবারহ কম হওয়ায় এক শ্রেণীর মধ্যস্বত্বভোগী অসাধু পাইকাররা খুচরা বাজারে লেবুর দাম বাড়িয়ে দিয়েছে এমন অভিযোগ তুলছেন একাধিক ক্রেতারা।  

সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার লেবু চাষে খ্যাতি অর্জনকারী উপজেলা সাটুরিয়া আর এ বছর এই উপজেলায় লেবুর উৎপাদন কম হওয়াতে আশপাশের বেশ কয়েকটি জেলায় লেবুর খুচরা বাজারে দাম বেড়ে গেছে। প্রতি বছর এই সময়টাতে প্রতিদিন ভোর ও সন্ধ্যার দিকে পাইকাররা ট্রাকে করে শতশত খাচি লেবু ক্রয় করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যেত কিন্তু এ বছর ২৪ ঘণ্টা নয় ৪৮ ঘণ্টায় দেখা মিলছে সর্বোচ্চ ১০ খাচি লেবু। প্রায় প্রতি লেবু বাগানই লেবু শূন্য কারণ হিসেবে বলছে আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় এই বিপর্যয় হয়েছে এমনটাই ধারণা করছেন স্থানীয় চাষিরা। এছাড়া অধিকাংশই লেবু বাগানে ড্রাকব্যাক রোগের দেখা দিয়েছে যার ফলে ফুল আসার দুই এক দিনের মধ্যে তা ঝড়ে পড়ে যাচ্ছে। লেবুর সরবরাহের চেয়ে উৎপাদন কম হওয়াতে লেবুর বাজার যেমন বেড়ে গেছে ঠিক তেমনি বড় ধরনের বিপদে পড়েছে দাম নিয়ে খুচরা বাজারে ক্রেতা সাধারণ।

উপজেলার শেখরি নগর এলাকার লেবু চাষি মনোয়ার হোসেন বলেন, আমি ৯ বিঘা জমিতে লেবুর আবাদ করেছি, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর লেবু কম ধরেছে। আবহাওয়ার কারণেই মূলত লেবু কম ধরেছে। যাউ কিছু লেবু বাগানে আছে তার অধিকাংশই ঝরে যাচ্ছে। চলতি বছর আমাদের এ অঞ্চলের প্রতিটি চাষিকে লোকসানের মধ্যে পড়তে হবে কারণ যে টাকা খরচ হয়েছে তা আমরা তুলতে পারবো না।  

একই এলাকার আরও এক চাষি লুৎফর রহমান বলেন, আমি গত সপ্তাহ আর এই চলতি সপ্তাহে দুই খাচি লেবু বিক্রি করেছি মোট ৭০ হাজার টাকায়। পাইকাররা দাম দিচ্ছে ভালো কিন্তু বাগানে তো লেবু নেই যে কারণে লেবুর বাজার ধরতে পারছি না। আমরা যেমন লেবুর বাজার ধরতে পারছি না ঠিক তেমনি খুচরা বাজারে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ লেবু কিনতেও পারছে না।

ঢাকার কারওয়ান বাজার থেকে আসা পাইকার মহসিন বলেন, আমি গত ৫ বছর ধরে সাটুরিয়ার শেখরি নগর এলাকার চাষিদের কাছ থেকে লেবু কিনে থাকি। প্রতি বছর এই সময়টাতে এক থেকে দেড় শতাধিক খাচি লেবু কিনি আর এই বছর ৫ খাচি লেবুও কিনতে পারছি না। আমি কয়েকটি লেবু বাগানে গিয়ে দেখেছি ফুল আসার পরপর তা ঝরে পড়ছে। এখন যে কয় খাচি লেবু কিনেছি গত বছরের চেয়ে দুই থেকে তিন গুন দাম বেশি দিয়ে। বেশি দাম দিয়ে কিনে খুচরা বাজারের দোকানিদের কাছে বিক্রি করেছি শত হিসেবে আর খুচরা বাজারে প্রতি হালি লেবু বিক্রি করছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়।

সাটুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তা খলিলুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, মূলত গত বছরের বন্যায় আমাদের এ অঞ্চলের লেবু বাগানের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে এছাড়া আবহাওয়ারও একটি বিষয় রয়েছে, একেক সময় একেক রকম আবহাওয়া হওয়াতে লেবুর আবাদ কম হয়েছে। যে পরিমাণ বৃষ্টি হওয়ার দরকার ছিল সেই পরিমাণে বৃষ্টি হয়নি আবার লেবু বাগানে ড্রাইব্যাক রোগের দেখা দেওয়াতে বাগানে ফুল আসলেও তা মরে ঝরে পড়ছে। সব মিলিয়ে এ বছর লেবুর চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম আর এই কারণে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি স্থানের লেবুর বাজার দর বেড়ে চলেছে। আমাদের এই অঞ্চলের প্রায় সব লেবুই ওই সব এলাকার চাহিদা পূরণ করে থাকে বলেও মন্তব্য করেন এই কৃষি কর্মকর্তা।  

বাংলাদেশ সময়: ২০৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০২২
আরএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।