ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ঘুম হারাম দর্জিপাড়ার কারিগরদের

কাওছার উল্লাহ আরিফ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০২২
ঘুম হারাম দর্জিপাড়ার কারিগরদের সেলাইয়ে মগ্ন দর্জিরা। ছবি: বাংলানিউজ

বগুড়া: গুণে গুণে চলে যাচ্ছে একেকটি দিন। ঘনিয়ে আসছে ঈদুল ফিতর।

নতুন পোশাক বানাতে দর্জিপাড়ায় ঘুরছেন মানুষ। কাজের চাপে এখন দর্জিপাড়ায় কারিগরদের ঘুম হারাম। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কারখানায়-কারখানায় পোশাক তৈরিতে চলছে ঘুমহীন, বিশ্রামহীন শ্রমিকের কাজ।

সোমবার (২৫ এপ্রিল) বগুড়া শহরের একাধিক দর্জি-প্রতিষ্ঠান ঘুরে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল তাদের ব্যস্ততার কথা।

সরেজমিনে দেখা যায়, সমান তালে হাত-পা চালিয়ে যাচ্ছেন কারখানাগুলোর কারিগররা। দর্জিপাড়ার পাশ দিয়েই গেলেই সেটা বোঝা যায়। সেলাই মেশিন আর কাঁচির শব্দ বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে সারাক্ষণ। শব্দই বলে দেয় কারিগররা ঈদের পোশাক তৈরিতে কতটা ব্যস্ত। এক কথায় বলতে গেলে, মুখরিত এখন বগুড়ায় দর্জিপাড়া। ক্রেতা সাধারণের পছন্দের এসব পোশাক চাঁদ রাতের আগেই ডেলিভারির স্লিপ ধরে ধরে বুঝিয়ে দিতে হবে। তবেই না হাঁফ ছেড়ে বাঁচা। না হলে মালিকের বকুনি আর ক্রেতার ধমকানিতে মাটি হয়ে যাবে তাদের ঈদ। তাই এখন থেকেই রাত-দিন একাকার করে কাজ করে যাচ্ছেন তারা।

করোনাকালীন বিগত দুই বছরের চেয়ে এবার একটু ব্যতিক্রম। কেননা করোনার প্রথম বছর সবকিছুই বন্ধ ছিল। এর মধ্যে গেল বছর ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে মানুষের জীবন-জীবিকার কথা চিন্তা করে সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি শর্তে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত দোকানপাট ও মার্কেট খোলা রাখার অনুমতি দেওয়া হয়। সেসময় করোনার কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দর্জিপাড়ায় খুব অল্প পরিসরে অর্ডার নিয়ে কাজে হাত দেন শ্রমিকরা। কিন্তু এ বছর করোনার প্রভাব কাটিয়ে শহরের দর্জিপাড়ায় ফিরতে শুরু করেছে আগের সেই সরগম। এবার শহরের নামিদামি প্রতিষ্ঠানগুলোয় অর্ডার নেওয়া এখনো বন্ধ করা হয়নি। তবে, নামিদামি দুই/একটি প্রতিষ্ঠানে সিঙ্গেল শার্টের অর্ডার নেওয়া প্রায় বন্ধই রয়েছে। এছাড়া বড়জোর ২৫ রমজান পর্যন্ত অন্যান্য দর্জি প্রতিষ্ঠানগুলোয় অর্ডার নেওয়া চালু থাকতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

বগুড়া শহরে পুরুষদের পোশাক তৈরি করা হয়, এমন প্রায় শতাধিক দর্জির দোকান রয়েছে। এছাড়া শহরের বাইরে কিছু এলাকার বিভিন্ন বাড়িতেও রয়েছে দর্জি দোকান। সেই সংখ্যাটা একেবারে কম না হলেও খুব বেশিও না। তবে সংখ্যাটা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা। ঈদ ঘনিয়ে আসায় কারিগরদের হাত ফাঁকা নেই, চোখেও নেই ঘুম। সবার হাতেই কমবেশি কাজ। হাত-পা সমান তালে চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। মোমিন মিয়া, আবুল কালাম, সৈয়দ আকবরসহ একাধিক পোশাক কারিগর বাংলানিউজকে জানান, করোনার প্রভাবে গত দুই বছর ঈদে তেমন কাজ ছিল না। এ বছর আল্লাহ তাদের দিকে মুখ তুলে তাকিয়েছে। কাজের ব্যস্ততা ফিরে পেয়েছে। তাই প্রতিষ্ঠানের সুনাম ধরে রাখতে ও ক্রেতার পছন্দের পোশাক তৈরি করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। সেসঙ্গে চেষ্টা করছেন সেরা মানের পোশাক তৈরি করতে। যেন ক্রেতা সাধারণ পরবর্তী সময়েও পোশাক বানাতে তাদের প্রতিষ্ঠানেই আসেন।

টেইলার্স মালিক ফজলা শেখ, মো. আব্দুস সামাদ বাংলানিউজকে জানান, প্রতিবছর রমজান মাস শুরু হওয়ার আগেই কারিগররা মজুরি বাড়ানোর আন্দোলনে নামেন। এর ফলে ঈদের আগে তারা সঠিক সময়ে পোশাক ডেলিভারি দিতে পারেন না বা দিতে হিমশিম খেতেন। এ কারণে ১০ বা ১৫ রমজান থেকেই তারা অর্ডার নেওয়া বন্ধ রাখতেন। তবে গেল দুই বছর করোনার কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি ভিন্ন রূপ নেয়। করোনার ভায়াবহ প্রভাব পড়ে টেইলার্স শিল্পে। এতে কাজ কম থাকায় শ্রমিকদেরও ছিল না কোন আন্দোলন।

তারা জানান, এবার ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন শ্রমিকরা। গেল বছর গড়ে দিনে শার্ট ও প্যান্ট মিলে বড় জোর ৬০ থেকে ৭০ পিস অর্ডার পাওয়া যায়। এ বছরে এর কয়েকগুণ বেশি পোশাক তৈরির অর্ডার পাওয়া যাচ্ছে।

করোনার আগে প্রায় প্রত্যেক বছর কারিগরদের আন্দোলন ও অর্ডার বন্ধ রাখায় ক্রেতা সাধারণ রেডিমেড পোশাক কেনার দিকে ঝুঁকে পড়তেন।

তবে এ বছর ঈদে ক্রেতারা রেডিমেট পোশাক কেনার দিকে ঝুঁকলেও টেইলার্স পোশাক পাল্লা দিয়ে চলছে বলেও মন্তব্য টেইলার্স মালিকদের।

বাংলাদেশ সময়: ২১১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০২২
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।