ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

গোপালভোগেই জমছে আমের রাজধানী

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১১ ঘণ্টা, মে ২১, ২০২২
গোপালভোগেই জমছে আমের রাজধানী রসালো গোপালভোগ আম। ছবি: বাংলানিউজ

রাজশাহী: রাজশাহীর বাজারে এখনও আমের সরবরাহ বাড়েনি। গেল সপ্তাহে বাজারে ছিল কেবল গুটি জাতের আম।

তবে টক-মিষ্টি স্বাদের এই আমের চাহিদা কম। তাই বেচাকেনাতেও ছিল ঢিলেঢালা ভাব। সদ্যই উঠেছে জাত আম খ্যাত ‘গোপালভোগ’।  

জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া ‘ম্যাংগো ক্যালেন্ডার’ মেনে শুক্রবারই (২০ মে) নামানো শুরু হয়েছে সুমিষ্ট স্বাদের রসালো এই আম। তবে আবহাওয়ার তারতম্য থাকায় সব এলাকায় একসঙ্গে গোপালভোগ আম পরিপক্ক হয়নি। তাই একযোগে সবাই এখনও বাগান থেকে গোপালভোগ আম নামানোও শুরু করেনি।  

চলতি সপ্তাহের মাঝামাঝি সময়ে প্রায় সব বাগান থেকেই রাজশাহীর জনপ্রিয় এই আম ভাঙা শুরু হবে। তখন বছর ঘুরে আবারও আমময় হয়ে উঠবে রাজশাহী। মিষ্টি-মধুর আমে ভরে উঠবে সব হাট-বাজার। তবে সরবরাহ কম থাকলেও গোপালভোগেই জমে উঠতে শুরু করেছে আমের রাজধানী। রাজশাহী জেলার সবচেয়ে বড় আমের মোকাম পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর। শনিবার (২১ মে) সকালে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, প্লাস্টিকের ক্যারেট ভর্তি করে আশপাশের বিভিন্ন বাগান থেকে গোপালভোগ আম আসতে শুরু করেছে। ব্যাটারিচালিত রিকশাভ্যান ও ভটভটিসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে স্থানীয় চাষি ও ব্যবসায়ীরা আম নিয়ে আসছেন। সড়কে পাশ ঘেঁষে সেই আমের পসরা সাজিয়ে বসছেন। তবে এখনও পাইকারী ব্যবসায়ীদের আনাগোনা কম। স্থানীয়ভাবে শহরের বিভিন্ন আড়তদার এবং খুচরা ভোক্তাই এখন হাটের মূল ক্রেতা। এবার রাজশাহী অঞ্চলে ঝড়-ঝঞ্ঝা না থাকলেও মৌসুমের শুরু থেকেই তীব্র তপাদাহ যাচ্ছে। যে কারণে সমানভাবে ঝরেছে আমের মুকুল ও গুটি। তাই ফলনও গতবারের চেয়ে কম। গেল বছর এই সময় জেলার সর্ববৃহৎ এই হাট বিভিন্ন জাতের আম দিয়ে কানায় কানায় পূর্ণ ছিল। এবার সেই দৃশ্য নেই। তবে আশা করা হচ্ছে- সব আম নামলে আবারও হাট-বাজার ভরে উঠবে। সব মিলিয়ে বলা চলে রাজশাহী জেলার সবচেয়ে বড় আমের মোকাম পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর হাট কেবলই জমতে শুরু করেছে। রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কের পাশেই থাকা পুরনো কাচারি মাঠকে ঘিরে ধুলোবালি ও প্রচন্ড গরম উপেক্ষা করে আম নিয়ে এখন দরদাম চলছে। কেনাবেচাও শুরু হয়েছে। প্লাস্টিকের ক্যারেটে করে থরে থরে সাজানো হচ্ছে রাজশাহীর গুটি ও গোপালভোগসহ বনেদি জাতের কাঁচা-পাকা আম। বছর দশেক আগেও বাঁশের ঝুড়িতে করে আম পরিবহন করা হতো। কিন্তু এখন সেই বাঁশের ঝুড়ির জায়গা দখল করে নিয়েছে প্লাস্টিকের ক্যারেট।  

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাঁশের ঝুড়িতে অনেক সময় আম নষ্ট হয়ে যেত। প্লাস্টিকের ঝুড়িতে সেই আশঙ্কা নেই। তাছাড়া বাঁশের ঝুড়ি শুধু একবারই ব্যবহার করা যায়। কিন্তু প্লাস্টিকের ঝুড়িগুলো বেশ কয়েকবার ব্যবহার করা যায়। তাই হালে আম পরিবহনে এই ক্যারেটের ব্যবহার বেড়েছে।

রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর হাটে কথা হয়, আম ব্যবসায়ী হোসেন আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ১৩ মে থেকে আম ভাঙা শুরু হয়েছে। প্রথম দিকে হাটে গুটি আমই ছিল। কিন্তু শুক্রবার (২০ মে) থেকে গোপালভোগ জাতের আম ভাঙা শুরু হয়েছে। বেশিরভাগ চাষিই গাছ থেকে আম ভাঙেননি। তবে গতকালের চেয়ে আজ সরবরাহ একটু বেশি। কিন্তু ফলন হওয়ায় এবার আমের দাম বেশি। আজ গুটি আম ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা মণ এবং গোপালভোগ আকার ভেদে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য স্থানীয় জাতের আম ১ হাজার ২০০ টাকা মণের মধ্যেই রয়েছে। এখন আর দাম কমার কোনো সুযোগ নেই। উল্টো রোজই মণপ্রতি আমের দাম ১০০ থেকে ২০০ টাকা করে বাড়বে বাজারে। বানেশ্বর হাটের অপর ব্যবসায়ী কামাল উদ্দিন বলেন, মৌসুম কেবলই শুরু হয়েছে। এখনও রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, খুলনা ময়মনসিংহ থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা রাজশাহীতে আম নিতে আসেননি। স্থানীয়ভাবে আম কেনাবেচা শুরু হয়েছে মাত্র। তাই কেবলই জমতে শুরু করেছে। এক সপ্তাহ থেকে পুঠিয়া, দুর্গাপুর, বাঘা, চারঘাট, পবা, মোহনপুর, তানোর গোদাগাড়ী, বাগমারাসহ আশপাশের এলাকা থেকে গুটি আম আসতে শুরু করেছে। গোপালভোগ নেমেছে সদ্যই। বাজারে খিরসাপাত (হিমসাগর) নামলে আমের বাজার পুরোদমে জমে উঠবে। কারণ প্রতি বছর ভরা মৌসুমে গোপালভোগ এবং খিরসাপাত আমই তুলনামূলক বেশি বিক্রি হয় রাজশাহীর বাজারে।

এদিকে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ২৫ মে থেকে রানীপছন্দ ও লক্ষ্মণভোগ বা লখনা আম নামানো যাবে। এছাড়া ২৮ মে থেকে খিরসাপাত, ৬ জুন থেকে ল্যাংড়া, ১৫ জুন থেকে আম্রপালি ও ১০ জুলাই থেকে ফজলি, আশ্বিনা ও বারী-৪, ১৫ জুলাই থেকে গৌড়মতি এবং আগামী ২০ আগস্ট থেকে নামবে ইলামতি জাতের নতুন আম। সময় মেনে এসব বাজারজাত করতে পারবেন রাজশাহী অঞ্চলের চাষিরা।

রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর ছাড়াও বাঘার আড়ানী, মনিগ্রাম, বাউসা ও পাকুড়িয়া এবং মোহনপুরের কামারপাড়ায় পাইকারী আমের হাট বসছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মোজদার হোসেন জানান, রাজশাহী জেলায় ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আমবাগান আছে। চলতি মৌসুমে হেক্টর প্রতি গড় ফলন ধরা হয়েছে ১১ দশমিক ৫৯ মেট্রিক টন। সেই হিসাবে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৭৬ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। আর নানান কারণে এবার ফলন একটু কম। তবে ফলন কম হলেও এই পরিমাণ আম দিয়েই রাজশাহীর চাহিদা মিটিয়ে সারা দেশেই বাণিজ্যিকভাবে সরবরাহ সম্ভব।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১১ ঘণ্টা, মে ২১, ২০২২
এসএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।