ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

পদ্মা সেতু: শরীয়তপুরে জমির দাম বেড়েছে ১৫ গুণ

মো. রোমান আকন্দ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫১ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০২২
পদ্মা সেতু: শরীয়তপুরে জমির দাম বেড়েছে ১৫ গুণ

শরীয়তপুর: আগামী ২৫ জুন উদ্বোধন হচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের স্বপ্নের পদ্মা সেতু। আর মাত্র কয়েকদিন।

তার পরেই যানবাহন চলাচল করবে পদ্মা সেতুতে। আর এ অবস্থায় আরও কয়েক ধাপ বেড়ে গেছে শরীয়তপুরের জাজিরার সড়কের পাশের জমির দাম।  

এমনকি শরীয়তপুর জেলা শহরসহ নড়িয়া উপজেলার জমিরও দাম বেড়েছে। পদ্মা সেতুর জাজিরার প্রান্তের সড়কের পাশে জমির দাম যেন আকাশ ছোঁয়া।

সরেজমিনে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক দশক আগেও ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত মহাসড়কের পাশের জমি বেশ কম দামে কেনাবেচা হতো। সেই সময়ের তুলনায় এখন জমির দাম বেড়ে গেছে ১২-১৫ গুণ। যেমন ২০০৭-০৮ সালে পদ্মা সেতুর জন্য যখন জাজিরার চারটি মৌজায় ১ হাজার ৭০১ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়, তখন সরকার নির্ধারিত দর (মৌজা রেট) ছিল শতাংশ প্রতি ৭ হাজার ১৫৪ টাকা। বর্তমানে সেই জমির সরকার নির্ধারিত দর শতাংশ প্রতি সাড়ে ৮৭ হাজার টাকা।  

অবশ্য জমি কেনাবেচার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা বলছেন, প্রকৃতপক্ষে বর্তমানে জমির বাজার মূল্য সরকারি দরেরও ১২-১৫ গুণ বেশি। আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। ২০২০ সালের মার্চে পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে জমির দাম বেশি বাড়ছে মূলত এক্সপ্রেসওয়ের দু’পাশে।  



এদিকে, জাজিরা ও শিবচর উপজেলায় হচ্ছে শেখ হাসিনা তাঁতপল্লী। অন্যদিকে সেতুর জাজিরা প্রান্ত থেকে শরীয়তপুর শহর পর্যন্ত চারলেন সড়কের জন্য জমি অধিগ্রহণ হয়েছে। এসব কারণে বেসরকারি উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করার জন্য জমি কিনছেন। সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের জন্যও জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। আবাসন ব্যবসায়ীরাও কিনছেন। শুধু শিল্পে বিনিয়োগ নয়, অনেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল করার জন্যও জমি কিনেছেন অনেকেই।  

জাজিরার বাসিন্দা আনোয়ার ফরাজি ঢাকার ফরাজী হাসপাতালের মালিক। তিনি জাজিরাতেও একটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার জন্য জমি কিনেছেন। ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কের পাশে আরাচণ্ডী এলাকায় জমি কিনে তাতে হাসপাতালের নামে সাইনবোর্ড লাগিয়েছেন।  

এদিকে সখিপুর হাজী শরীয়তউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ আবুল বাসার আল আজাদসহ কয়েকজন চাকরিজীবী মিলে জাজিরার লাউখোলা মৌজায় ১২ বিঘা জমি কিনেছেন। তাদের লক্ষ্য শিক্ষাপল্লী প্রতিষ্ঠা করা।  

আবুল বাসার আল আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, জাজিরার বেশিরভাগ এলাকা অনুন্নত। শিক্ষার অগ্রগতিও কম। পদ্মা সেতুর কারণে ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ অনেক সহজ হবে, এমন চিন্তা থেকে জাজিরায় শিক্ষাপল্লী করার পরিকল্পনা করেছি আমরা। শরীয়তপুর জেলা শহর থেকে জাজিরা উপজেলা সদর হয়ে পদ্মা সেতু যেতে হয়। জাজিরার পর থেকেই সড়কের দু’পাশে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কিনে রাখা অসংখ্য জমির সাইনবোর্ড দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ জমি কিনে সীমানা প্রাচীর তৈরি করে রেখেছেন। আবার কেউ কেউ অবকাঠামো নির্মাণও শুরু করে দিয়েছেন। বর্তমান অবস্থায় কেউ আর জমি বেঁচতে রাজি হচ্ছেন না। পদ্মা সেতুর জন্য প্রথম যখন অধিগ্রহণ করা হয়, তখন মূল্যের দেড়গুণ ক্ষতিপূরণ পেতেন মালিকরা। সরকার আইন পাল্টে ক্ষতিপূরণের হার তিনগুণ করেছে। তবে অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান জমি কেনার পর থেকেই জমির দাম বাড়তে শুরু করে সেতুর জাজিরা প্রান্ত থেকে জাজিরা সদর হয়ে শরীয়তপুর জেলা শহর পর্যন্ত। তাই এখন আর কেউ জমি বিক্রি করতে রাজি নন। কিন্তু জমি কেনার জন্য ঘুরছেন অনেকে।



জাজিরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোবারক আলী সিকদার মাসট্রেড নামে একটি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের মালিক। তিনি গার্মেন্টস পল্লী, কৃষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, শ্রমিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও কারিগরি কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য ১০০ বিঘা জমি কিনেছেন। তার কেনা জমি জাজিরায় পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে। জমি বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। অতি শিগগিরই অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে বলে জানা গেছে। তবে জমি যে দামে কিনেছিলেন, তার থেকে ১০-১২ গুণ বেড়ে গেছে।

মোবারক আলী সিকদার বাংলানিউজকে বলেন, এতদিন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের দিক দিয়ে পিছিয়েছিল। এ জনপদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির বিরাট সুযোগ সৃষ্টি করেছে পদ্মা সেতু। সুযোগটি কাজে লাগাতে আমার মতো অনেক উদ্যোক্তাই জমি কিনে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন। আরও তুলবে বলে আমার বিশ্বাস। আমি যে বিনিয়োগ পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি, তা বাস্তবায়িত হলে চার-পাঁচ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়কের উত্তর প্রান্তে নাওডোবা মৌজায় ৩০ বিঘা জমি কিনেছে বাদশা টেক্সটাইল নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এ জমি কেনাবেচায় যুক্ত ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা মো. বাদল। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বাদশা টেক্সটাইল ২০১৫ সাল থেকে পদ্মা সেতু এলাকার আশপাশে জমি কিনতে শুরু করে। প্রথম দিকে প্রতিবিঘা জমির দাম ২০-২৫ লাখ টাকা ছিল। এখন সাত বছর পর এখন একই এলাকায় জমির দাম বিঘাপ্রতি কোটি টাকায় উঠেছে।

দি শরীয়তপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি একেএম ইসমাইল হক বাংলানিউজকে বলেন, পদ্মা সেতুর ঘিরে দক্ষিণ প্রান্তে উদ্যোক্তরা বিনিয়োগের কথা ভাবছেন। তবে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সরকারকে উপযোগী পরিবেশ তৈরিতে বিশেষ নজর দিতে হবে।

বাংলাদে সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০২২
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।