ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ঝড়ে সাড়ে ৬ কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৫ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২২
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ঝড়ে সাড়ে ৬ কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড়ে আমসহ প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে জেলার শিবগঞ্জ ও ভোলাহাট উপজেলায় ঝড়ের তীব্রতা বেশি থাকায় এ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি।

বৃহস্পতিবার (৯ জুন) ভোর ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত জেলার ৫ উপজেলায় বয়ে যাওয়া ঝড় ও বৃষ্টিতে এ ক্ষয়ক্ষতি বলে জানিয়েছে কৃষিবিভাগ ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা।  

স্থানীয়রা জানান, হঠাৎ ভোলাহাট উপজেলার আলারপুর, ফতেপুর, মান্নুমোড়, দুর্গাপুর গ্রামে প্রচণ্ড গতির ঝড় শুরু হয়। এতে কাঁচা-পাকা বাড়ি, দোকান ভেঙে যায় এবং টিন উড়ে অন্যত্র গিয়ে পড়ে। এছাড়াও সোনাজলে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের রোপণ করা বড় বড় বনজ গাছ রাস্তায় পড়ে চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

অপরদিকে শিবগঞ্জ উজেলার সত্রাজিতপুর, শিবগঞ্জ, নয়ালাভাঙ্গা মনাকষা, পাঁকা, চককীর্ত্তি ও কানসাট ইউনিয়নে ধ্বংসজজ্ঞ চালায় আকশ্মিক এ ঝড়।

ভোলাহাটের ফতেপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. নাহিদ জানান, তার পাকা বাড়ি হওয়ার পরও ঝড়ে আংশিক ভেঙে গেছে। তার প্রতিবেশী এক বিধবা চাচির বাড়ির টিন উড়িয়ে অন্যত্রে ফেলে দেয়। ফলে এখন তাঁরা খোলা আকাশের নিচে রয়েছে। ভোর ৫টার দিকে প্রচণ্ড গতিবেগে ঝড় এসে এলাকার বাড়িঘর দোকান পাট ভেঙে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এসময় সোনাজল রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

একই উপজেলার আম ব্যবসায়ী মো. শফিকুল ইসলাম জানান, এ ঝড়ে আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অসময়ের এ ঝড়ের কারণে অনেক আম ব্যবসায়ীকে পথে বসে যেতে হবে। ভোলাহাটে শুধু আমেই কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি।

জামবাড়ীয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আফাজ উদ্দিন পান্নু জানান, তার ইউনিয়নের কাঁচা পাকা বাড়ি, দোকান, আম, বনজ গাছসহ প্রায় অর্ধকোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়াও বিএমডিএ'র রোপিত বনজ গাছ ঝড়ে রাস্তায় পড়ে যাওয়ায় দ্রুত সরিয়ে পরিবহন চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে।

তবে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. কাউসার আলম সরকার ও কৃষি কর্মকর্তা সুলতান আলী জানান, এখনো ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে অসময়ের এ ঝড়ে আমের শতকরা ১৫ ভাগ ক্ষতি হবে বলে মনে করেন তারা।

অন্যদিকে জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় সকাল সাড়ে ৬টা থেকে আধা ঘণ্টার ঝড় ও বৃষ্টিতে পেঁপে, আম, সবজি ও কলার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শুধু আমেই এ উপজেলায় ৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। আমের সাইজ বড় হওয়ায় এবং পাকার উপক্রম হওয়ায় এ ক্ষয়ক্ষতি বেশি বলে মনে করছেন কৃষকরা।

শিবগঞ্জ পৌর এলাকার আম চাষি ইসমাইল খান শামিম বলেন, এ বছর এমনিতেই আমের উৎপাদন কম। তার উপরে অসময়ের ঝড়ে শুধু আম নষ্ট হয়নি, পরিচর্যা খরচও পানিতে গেছে। এতে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশেষ করে যাদের আম বিক্রির অগ্রিম অর্ডাও নেওয়া ছিল তারা ব্যাপক ক্ষতি ও লোকসানের মুখে পড়বে।

চককীর্ত্তির আম চাষি জাহাঙ্গির বিশ্বাস জানান, তার পাঁচটির মধ্যে দুটি বাগানে আম ছিল। এর মধ্যে একটি বাগানের অর্ধেক আম পাড়তে পাড়লেও অপরটি ফজলি ও আশ্বিনি আমের বাগান হওয়ায় অপর বাগানটির ৭০ ভাগ আমই ঝড়ে পড়েছে।

শাহবাজপুরের আম চাষি ইসরাঈল হোসেন জানান, গত তিনদিন আগে তার দেড় বিঘার আশ্বিনি বাগানটির দাম ৪০ হাজার টাকা বললেও বৃহস্পতিবার ওই আম ব্যবসায়ী মাত্র ১০ হাজার টাকায় বাগানটি নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি আরও জানান, আমের পরিচর্যা খরচই ২০ হাজার টাকা হওয়ায় তিনি লোকসানের মুখে পড়েছেন।

এ ব্যাপারে শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার মো. শরিফুল ইসলাম জানান, তার উপজেলায় আকশ্মিক ঝড়ে পেঁপে ৯ হেক্টর, কলা ২৫ হেক্টর, সবজি ৭০ হেক্টর এবং আম ১৫০০ হেক্টর জমির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

তার উপজেলার আমচাষিসহ ২৬শ কৃষক এ ঝড়ে ক্ষতির মুখে পড়েছে। আর এ উপজেলার ১৪০০ মেট্রিক টন আমের ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। যার মূল্য প্রায় ৫ কোটি টাকা।

অপরদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নজরুল ইসলাম খান জানান, এ সময়ে এ গতির ঝড় খুবই বিরল ঘটনা। আবহাওয়ার এ পরিবর্তনের কারণে সবচাইতে বেশি ক্ষতি হয়েছে আমে।

তিনি আরও জানান, জেলার সদর, নাচোল ও গোমস্তাপুর উপজেলায় ক্ষয়ক্ষতি কম হলেও শিবগঞ্জ ও ভোলাহাটে ঝড়ের তীব্রতা বেশি এবং আম বাগান বেশি হওয়ায় ক্ষতির পরিমাণও বেশি।

বাংলাদেশ সময়: ১১২০ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।