ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

লিফট আমদানি নিরুৎসাহিত করার উদ্যোগ দেশীয় শিল্পের বিকাশ ঘটাবে

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৩ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০২২
লিফট আমদানি নিরুৎসাহিত করার উদ্যোগ দেশীয় শিল্পের বিকাশ ঘটাবে

২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে লিফট বা এলিভেটর পণ্যের স্থানীয় শিল্পের বিকাশ ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ খাতে আমদানি নিরুৎসাহিত করতে এবং স্থানীয় শিল্প-উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে লিফট আমদানিতে শুল্কহার বাড়ানো হয়েছে।

বিষয়টিকে দেশীয় শিল্পের জন্য খুবই ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা। তাদের অভিমত, প্রস্তাবিত বাজেট দেশীয় শিল্পবান্ধব হয়েছে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, সরকারের উদ্দেশ্য স্থানীয় শিল্পের বিকাশের স্বার্থে শুল্ক বাড়ানোর মাধ্যমে আমদানি নিরুৎসাহিত করা। এর ফলে লিফটের মতো ভারী শিল্পে বিপুল বিনিয়োগ আসবে। দেশে এ শিল্পের বিকাশ ও প্রসার ঘটবে। এতে একদিকে যেমন আমদানি ব্যয় হ্রাস পাবে, অন্যদিকে স্থানীয় উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বাড়বে। যা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হবে।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তার বাজেট বক্তব্যে জানিয়েছেন, স্থানীয় শিল্পের বিকাশ এবং এ খাতের উদ্যোক্তাদের স্বার্থে লিফট আমদানিতে শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, দেশে লিফটের চাহিদা বাড়ছে। স্থানীয় উদ্যোক্তারা লিফট উৎপাদন শিল্পে অধিক হারে বিনিয়োগ শুরু করেছেন। অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে এ খাতের উদ্যোক্তাদের যথেষ্ঠ ইতিবাচক মনে হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী বলেন, যে কোনো দেশের অগ্রগতির ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হলে তাকে অবশ্যই ডোমেস্টিক উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে হবে। আপনি শুরু থেকেই যদি দেশীয় ইনফ্যান্ট ইন্ডাস্ট্রিকে কম্পিটিশনের মধ্যে ছেড়ে দেন, তাহলে সে কিন্তু শুরুতেই ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই তাকে শুরুতে অনেক বেশি সুযোগ দিতে হবে এবং সে যাতে উঠে দাঁড়াতে পারে এজন্য সরকারকে সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

এ খাতের দেশীয় একটি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, তারা আমাদের দেশের জন্য বাইরে থেকে যেমন সুনাম বয়ে আনছে, তেমনিভাবে দেশের স্বনির্ভরতা বাড়াচ্ছে। আর এ স্বনির্ভরতাই বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন। দেশীয় উৎপাদকদের সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি অবশ্যই আমাদের জন্য একটা ইতিবাচক দিক।

অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলিকুজ্জামান বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে দেশের ভেতর যেসব পণ্য উৎপাদন করা যায়, সেগুলো বিদেশ থেকে আনা নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এতে দেশীয় কোম্পানি বা উদ্যোক্তারা সুবিধা পাবে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বর্ধিত হবে। এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকতে পারে। আমরা একে ইতিবাচক হিসেবে দেখি।

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, দেশীয় শিল্প বিকাশে সরকার কর্তৃক এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়। শিল্পায়নের বিকাশে এটি কার্যকর ভূমিকা পালন করে, পাশাপাশি ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ বুস্ট-আপ হয়। তার মতে এক্ষেত্রে আমাদের দায়বদ্ধতা যেমন বাড়ে, তেমনই দেশে উদ্যোক্তা তৈরি হয়।

জানা গেছে, দেশে লিফটের বিপুল চাহিদা রয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রমতে, করোনার মধ্যেও ২০২০ সালে ৭০৭ কোটি টাকার লিফট আমদানি হয়েছে। ২০২১ সালে এ খাতে আমদানির পরিমাণ ৮৮৫ কোটি টাকা। খাত সংশ্লিষ্টদের মতে বর্তমানে দেশে লিফটের বাজার ১২০০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ প্রতি বছর এ খাতের প্রবৃদ্ধি ২০ শতাংশেরও বেশি। আমদানির মাধ্যমে লিফটের স্থানীয় চাহিদা মেটানোয় বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হচ্ছে।

অন্যদিকে আমদানি লাভজনক হওয়ায় সেদিকেই ঝুঁকছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা। বিপরীতে গিয়ে দু-একটি প্রতিষ্ঠান দেশে লিফট উৎপাদন প্ল্যান্ট গড়ে তুলেছে। বর্তমানে দেশে উৎপাদিত লিফট দিয়ে সব চাহিদা মেটানোর যথেষ্ঠ সক্ষমতা রয়েছে। ইউরোপীয় প্রযুক্তিতে বাংলাদেশে তৈরি লিফট আমদানিকৃত লিফটের চেয়ে মানে অনেক উন্নত।

তাছাড়া বর্তমানে দেশের গৃহায়ন শিল্প ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে। মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটায় এ খাতে লিফটের চাহিদা আরও বাড়বে। সুতরাং লিফটের ক্ষেত্রে দেশ আমদানি নির্ভর হলে তা মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। দেশে উৎপাদন বাড়লে লিফট সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকবে। পাশাপাশি পুরাতন স্থাপনাগুলোতে সহজেই লিফট সংক্রান্ত সেবা দেওয়া সহজ হবে।

সবদিক বিবেচনায় সরকারের এ সিদ্ধান্ত দেশীয় শিল্প ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য খুবই ইতিবাচক। বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫০ বছর পার করেছে। প্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদনে স্বাবলম্বী হওয়ার এখনই উপযুক্ত সময়।

সংশ্লিষ্টদের মতে, এর আগে ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য খাতে আমদানি শুল্ক বাড়ানো এবং স্থানীয় উৎপাদকদের সুবিধা দেওয়ায় দেশে রেফ্রিজারেটর, এয়ার কন্ডিশনার, টেলিভিশন, ল্যাপটপ-কম্পিউটার, মোবাইল ফোন ইত্যাদি শিল্পের অভূতপূর্ব বিকাশ ঘটেছে। অনেক দেশীয় ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে কারখানা স্থাপন করেছে। এসব পণ্যের উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ।

এমনকি দেশে উৎপাদিত পণ্য দিয়ে স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি এ খাতে রপ্তানি আয় বাড়ছে। তৈরি পোশাকের মতো ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য শিল্প রপ্তানি আয়ের অন্যতম সম্ভাবনাময় খাত হয়ে উঠেছে। তাদের মতে লিফটেও একই রকম সুবিধা দেওয়ায় দেশীয় ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানীয় উৎপাদনে আগ্রহী হবে। ফলে এ খাতে বড় বিনিয়োগ আসবে। যা বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং আমদানি ব্যয় হ্রাস এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশীয় অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০২ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০২২
জেডএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।