ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সিলেটে বন্যায় মৎস্যখাতে ১৪২ কোটি টাকার ক্ষতি

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫১ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০২২
সিলেটে বন্যায় মৎস্যখাতে ১৪২ কোটি টাকার ক্ষতি

সিলেট: পুরো সিলেট অঞ্চলে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। সিলেট জেলার ৮০ এবং সুনামগঞ্জের ৯০ শতাংশ উপজেলা প্লাবিত হয়েছে।

মানুষের জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।  পাশাপাশি মৎস্যখাতেও বিপুল পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

বিভাগে এই পর্যন্ত মৎস্যখাতে ক্ষতির পরিমাণ ১৪২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এর মধ্যে বিভাগে ক্ষতিগ্রস্ত পুকুর, দিঘী ও খামারের সংখ্যা ৪০ হাজার ৫৪০টি, ক্ষতিগ্রস্ত খামারি ৩৩ হাজার ১২ জন।

মৎস্য অধিদপ্তর সিলেটের উপ পরিচালক ড. মো. মোতালেব হোসেন বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, বিভাগের মধ্যে সিলেটে ৭০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, ৫২ কোটি ৯২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা, ১ কোটি ৬১ লাখ টাকা এবং ১৭ কোটি ১ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা ক্ষতির পরিমাণটি নিরীক্ষণ করে ওপর মহলে দিয়েছি, যাতে খামারিরা কিছুটা হলেও প্রণোদনা পান। কেননা, আমরা যখন ক্ষয়ক্ষতির হিসাব আনতে যাই, তখন মানুষজন প্রণোদনা পাওয়ার ব্যাপারে আশ্বস্ত হন।   

মৎস্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের তথ্যমতে, বিভাগে বন্যায় ৫ হাজার ৪৩১ হেক্টরের ৪০ হাজার ৫৩৮টি পুকুর, দিঘী, খামার ডুবে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৩৩ হাজার ১২ জন খামারি। এসব খামারের মাছের পরিমাণ ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৮৪২ মেট্রিক টন এবং ৫৪৭ কোটি ৪৮ পোনা মাছ লাখ ভেসে গেছে। মাছের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা এবং পোনা মাছ ক্ষতি হয়েছে ১৮ কোটি ৩২ লাখ টাকার। আর অবকাঠামোগত ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা।

সিলেট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম বলেন, সিলেট জেলায় ৭০ কোটি ৮৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পুকুর, দিঘী ও খামারের সংখ্যা ৩০ হাজার ২৫৫টি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ২৫ হাজার ২৪০ জন খামারি বা পুকুর মালিক। তাতে মাছের ক্ষতি ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৫০৯ মেট্রিক টন, পোনা মাছের পরিমাণ ৩ কোটি ২৮ লাখ ৫০০। মাছের ক্ষতির পরিমাণ ৫৮ কোটি ৮২ লাখ টাকা, পোনা মাছে ৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকার, অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে ৩ কোটি ৭ লাখ টাকার।

অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের তথ্যমতে, সুনামগঞ্জ জেলায় মৎস্য খাতে ৫২ কোটি ৯২ লাখ ৮৮ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পুকুর, দিঘী ও খামারের সংখ্যা ৮ হাজার ৬৬৫টি। ক্ষতিগ্রস্ত খামারি বা পুকুর মালিকের সংখ্যা ৬ হাজার ৪৮৪ জন। মাছের ভেসে গেছে ২ হাজার ৯৮৪ দশমিক ৬২ মেট্রিক টন, ৪৬৪ দশমিক ৫২ লাখ পোনা মাছ। মাছের ক্ষতির পরিমাণ ৪১ কোটি ৮৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা, ৬ কোটি ৯৫ লাখ ২০ হাজার টাকার, অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে ৪ কোটি ৭ লাখ ৯৮ হাজার টাকার।   

মৌলভীবাজার জেলায় ১ কোটি ৬১ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পুকুর, দিঘী ও খামারের সংখ্যা ২৭০টি, ক্ষতিগ্রস্ত খামারি বা পুকুর মালিক ২১০ জন। ভেসে যাওয়া মাছের পরিমাণ ১৩৬ মেট্রিক টন, পোনা ৩৫ লাখ। মাছের ক্ষতির পরিমাণ ১ কোটি ৬ লাখ টাকা, পোনা ২৩ লাখ টাকার, অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে ১০ লাখ টাকার।  

হবিগঞ্জ জেলায় ১৭ কোটি ১ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পুকুর, দিঘী ও খামার ১ হাজার ৩৪৮টি। ক্ষতিগ্রস্ত খামারি বা পুকুর মালিক ১ হাজার ৭৮ জন। ক্ষতিগ্রস্ত পুকুর, দিঘী ও খামারের আয়তন ২৬৯ দশমিক ৬০ হেক্টর। ১ হাজার ২১৩ দশমিক ২০ মেট্রিকটন। পোনা মাছ ভেসে গেছে  ৫৩৯ কোটি ২০ লাখ। মাছের ক্ষতির পরিমাণ ১৪ কোটি ৫৫ লাখ ৮৪০ টাকা, পোনা মাছের ক্ষতি ২ কোটি ১৮ লাখ টাকার, অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে ২৬ লাখ টাকার।  

সিলেটের দক্ষিণ সুরমার আলমপুরের ক্ষতিগ্রস্ত খামারি ইউনুছ ও আলী আব্দুল মালিক বলেন, দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফা বন্যায় তাদের দু’টি খামারের প্রায় আড়াই কোটি টাকার মাছ ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। এ ক্ষতি কেমনে সহ্য করি। এখন আবার শূন্য থেকে শুরু করতেও ভয় হচ্ছে, যদি আবারো বন্যা চলে আসে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫১ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০২২
এনইউ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।