ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ যেন অপ্রতিরোধ্য!

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩২ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০২২
চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ যেন অপ্রতিরোধ্য!

খুলনা: খুলনাঞ্চলে চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ চক্র ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। গলদা ও বাগদা চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ যেন অপ্রতিরোধ্য।

অসাধু পুশ চক্র যেন কোনোভাবেই দমন করা যাচ্ছে না। র‌্যাব-পুলিশ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালিত হলেও, প্রায় সময়েই ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকেন মূল হোতারা। তাদের অপতৎপরতার কারণে সৎ ব্যবসায়ীরাও পড়ছেন বেকায়দায়।

চিংড়ি মাছে বিভিন্ন অপদ্রব্য পুশ করা অব্যাহত থাকায় দেশে ও বিদেশে চিংড়ির মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিদেশের বাজারে দেশের ব্যবসায়িক সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। কয়েকটি চিংড়ি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রতি বিদেশের বাজারে বাংলাদেশের চিংড়ির মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিদেশে চিংড়ির চাহিদা কমে যাওয়ায় স্থানীয় বাজারে দাম পড়তে শুরু করেছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে সাদা সোনা খ্যাত দেশের দ্বিতীয় রপ্তানি পণ্যটি।

সবশেষ বুধবার (২৯ জুন) সকালে কয়রা উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অভিযানে আবারো অপদ্রব্য মিশ্রিত ৮৬ কেজি চিংড়ি মাছসহ ২ জনকে আটক করা হয়েছে।
কয়রা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসার মো. আমিনুল হকের নেতৃত্বে কয়রা মদিনাবাদ স্কুল এলাকায় অভিযান চালিয়ে সুন্দরবন থেকে আহরণ করা অপদ্রব্য মিশ্রিত ৮৬ কেজি চিংড়ি মাছসহ ২ জনকে আটক করেছে। আটককৃত চিংড়ি মাছ কেরোসিন দিয়ে মাটিতে পুঁতে বিনষ্ট করা হয়েছে এবং আটক ব্যক্তিদের কাছ থেকে মৎস্য ও এর পণ্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ আইনে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা হয়েছে।

কয়রা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. আমিনুল হক বলেন, জুন মাস থেকে ৩ মাস সুন্দরবনের সব ধরনের মাছ আহরণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছ। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যারা সুন্দরবন থেকে মাছ আহরণ করছে তাদের  বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

রূপসায় অবৈধভাবে অপদ্রব্য পুশ করা চিংড়ি মাছ বহন করার দায়ে একটি ট্রান্সপোর্ট কোম্পানিকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
র‌্যাব-৬ এর একটি আভিযানিক দল মঙ্গলবার (২৮ জুন) গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, রূপসা ব্রিজ এলাকা থেকে ট্রাকে করে অবৈধভাবে পুশ করা চিংড়ি মাছ পরিবহন করা হয়েছে।

সংবাদের ভিত্তিতে আভিযানিক দলটি রূপসা ব্রিজ এলাকায় বিকেল থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত অভিযান চালায়। রূপসা উপজেলা মৎস্য অফিসের সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার সহযোগিতায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। এ সময় অবৈধভাবে অপদ্রব্য পুশ করা চিংড়ি মাছ বহন করার দায়ে মৎস্য পণ্য আইন ২০২০ এর ৩৩(৫) ধারা মোতাবেক ট্রান্সপোর্ট কোম্পানির প্রতিনিধি মো. লিটন হোসাইনকে (৩২) ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করে এবং অবৈধভাবে অপদ্রব্য পুশ করা ৫০ কেজি চিংড়ি মাছ জব্দ করে। জব্দকৃত অপদ্রব্য পুশ করা চিংড়ি মাছ মৎস্য কর্মকর্তার উপস্থিতিতে ধ্বংস করা হয়।

রূপসা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার উপস্থিতিতে ট্রান্সপোর্ট কোম্পানির প্রতিনিধি জরিমানার টাকা তাৎক্ষণিক প্রদান করে এবং আদায়কৃত জরিমানার অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা করা হয়।  

রোববার (২৬ জুন) খুলনার কয়রায় বাগদা চিংড়ি মাছে অপদ্রব্য ৪০ কেজি বাগদা চিংড়ি জব্দ করা হয়েছে। একই সঙ্গে পুশ করার অপরাধে উপজেলার মদিনাবাদ গ্রামের নুরুল ইসলাম কারিগরের ছেলে সাজিদুল ইসলামকে (৩২) ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

খুলনার কয়রা উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে বাগদা চিংড়ি জব্দ করে। কয়রা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. আমিনুল হকের নেতৃত্বে এ অভিযান চালানো হয়।
সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা মো. আমিনুল হক জানান, আটককৃত ব্যক্তি নিজ বাড়িতে বাগদা চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ করছিলেন। এসময় তাকে আটক করা হয় এবং অপদ্রব্য মিশ্রিত পুশকৃত ৪০ কেজি চিংড়ি মাছ জব্দ করা হয়। পরবর্তীতে জব্দকৃত মাছ কেরোসিন দিয়ে মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছে এবং আটক ব্যক্তির কাছ থেকে মৎস্য পণ্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ আইনে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা হয়েছে।

এর আগে, ১৭ মে দিবাগত রাতে ২৪২টি ককশিটের ভেতর ৬০৫০ কেজি জেলি পুশকৃত চিংড়ি মাছ উদ্ধার করে বিনিষ্ট করেছে কোস্টগার্ড।  খুলনার রূপসা ঢোল প্লাজা পার হওয়ার সময় ১৮ টনের একটি ট্রাক থেকে এই জেলি পুশকৃত চিংড়ি মাছের বাজার মূল্য ৭৫ লাখ টাকা বলে ফ্রোজেন ফুড এক্সপোটার অ্যাসোসিয়েশন সহ সভাপতি  ও যৌথ অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া এস হুমায়ুন কবীর জানান।

চিংড়ির উৎপাদন ও রপ্তানিবৃদ্ধি সংক্রান্ত বুধবার (২৯ জুন) এক মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফইএ) সহ সভাপতি হুমায়ুন কবীর বলেন, অপদ্রব্য পুশের কারণে ধ্বংসের পথে 'হোয়াইট গোল্ড' খ্যাত চিংড়ি খাত। ওজন বৃদ্ধি জন্য জেলি ও সাগুদানা নামক অপদ্রব্য পুশকিরীদের বিরুদ্ধে আমরা সব সময় কঠোর অবস্থানে। পুশ বিরোধী সাঁড়াশি অভিযানে সব সময় আমি উপস্থিত থাকার চেষ্টা করি। কেননা বিদেশে যেসবচিংড়ি পাঠানো হয় তার একটি মাছের মধ্যে যদি জেলি পুশ করা থাকে তাহলে সব মাছ সেখানে নষ্ট করে দেওয়া হয়।

খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল বাংলানিউজকে বলেন, অভিযানের ফলে চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ কমে যাচ্ছে। হঠাৎ করে অভিযান পরিচালনা করা বলে কেউ আগে থেকে টের পায় না। চলতি মাসে ১১টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩০ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০২২
এমআরএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।