ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সম্পাদকীয়

অন্ধ হলে কি প্রলয় বন্ধ থাকে!

জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৬
অন্ধ হলে কি প্রলয় বন্ধ থাকে!

এতো ঘনঘন ভূমিকম্প। তাও আবার ৭ বা তারও বেশি মাত্রার।

প্রায় বিরতি ছাড়াই। দিনকয় আগে মিয়ানমারে। দু’দিন  না যেতেই প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ জাপানের দক্ষিণাংশ লণ্ডভণ্ড। মৃত অর্ধশত মানুষ। আহত-জখম হাজার হাজার। হাজারো ঘরবাড়ি, ভবন, মন্দির মিশে গেছে মাটির সঙ্গে। আর ১৭ এপ্রিল রোববার দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ইকুয়েডরে ভূমিকম্প আরও বিধ্বংসী (৭ দশমিক ৮ মাত্রার)। প্রাথমিক খবরেই মৃতের সংখ্যা ২৮
একটাই বার্তা, ভূগর্ভ হঠাৎই অস্থির। টেকটোনিক প্লেটগুলোর আচরণ অস্বাভাবিক। এর মানে, অচিরকালের মধ্যে ভূমিকম্প আরও করাল রূপে হাজির হবে। গত ক’দিনের কম্পনগুলো তারই ‘ওয়েক আপ’ কল।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে আসছেন, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই বাংলাদেশে ভবিষ্যতে প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটবে। তখন কী হবে আমাদের অবস্থা! জাপানের মতো উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর আর অতি সক্ষম দেশেরই যখন করুণ অবস্থা!৭ মাত্রার চেয়ে বড় মাত্রার কম্পনে আমাদের মতো প্রস্তুতিহীন ঘনবসতির দরিদ্র দেশের অবস্থা কেমন হবে?

আমাদের ভবনগুলোর ৮০ভাগই পুরনো প্রযুক্তিতে গড়ে তোলা। ভূমিকম্পরোধী নয় মোটেই। বহু ভবন ও স্থাপনা বিল্ডিং কোড না মেনে করা। নগরগুলোতে হাজার হাজার ভবন জরাজীর্ণ ও ভঙ্গুর। ভূমিকম্প মোকাবেলার প্রস্তুতিও আমাদের তেমনটা নেই। নেই উদ্যোগও। সরকারি-বেসরকারি সবখানেই আছে প্রস্তুতির অভাব: আছে সচেতনতার ঘাটতি। ফায়ার ব্রিগেডসহ বিভিন্ন সংস্থার উপকরণ স্বল্পতাও হতাশাব্যঞ্জক।

যখন বড় কোনো ধ্বসযজ্ঞ, ক্ষয়ক্ষতি হয় তখনই কেবল নড়েচড়ে উঠি আমরা। ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটার পর বেশ মাতামাতি করেছি আমরা। তারপর সব চুপচাপ। কাজের কাজ সিকিভাগও করিনি আমরা।

ভূমিকম্প মোকাবেলার জোরালো প্রস্তুতি কবে শুরু করবো আমরা? কখনই বা পর্যাপ্তসংখ্যক উদ্ধারকারী উপকরণ ও সরঞ্জাম যোগাড় করবো? কখনই বা তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত কোটি কোটি মানুষকে ভূমিকম্প-সচেতন ও তা মোকাবেলায় সক্ষম করে তুলবো? ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করার ব্যাপক কাজ কখন শুরু করবো? যেসব ভবন ঝুঁকিপূর্ণ বলে শনাক্ত হয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি? প্রশ্ন করতে থাকলে শেষ হবে না। বরং প্রশ্নের অরণ্যে হারিয়ে যেতে হবে। যে প্রশ্নই করা হোক, আপাতত তার উত্তরও নেই জানা।

এভাবে তো চলবে না! ভূমিকম্পের মতো অনিবার্য আর অবশ্যম্ভাবী বিপর্যয়কে হেলা করে ভুলে থাকলে গণ আত্মহননের পথই কেবল প্রশস্ত করা হবে। এখনই ভূমিকম্প মোকাবেলার সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কাজে নেমে পড়ার বিকল্প নেই। মনে রাখতে হবে ভুমিকম্প এক নীরব ঘাতক। সে বলে-কয়ে আসে না। সে একদমই জানান না দিয়ে আসে আর বিস্তীর্ণ লোকালয়, দেশ বা অঞ্চলকে কয়েক সেকেন্ডে লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে যায়। তাকে তাই সমীহ করতে হয়, তার কথা মাথায় রেখে নিজেদের সুরক্ষাব্যুহ নিজেদেরই আগেভাগে তৈরি করে রাখতে হয়। নইলে কপালে খারাপি আছে।

সব পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ শুরু করতে হবে এখনই। লজিস্টিক সংগ্রহের উদ্যোগ যেমন, তেম্নি সচেতনতা বৃদ্ধি--- দু’দিকেই চাই আশু উদ্যম। সময় নষ্ট করার সময় একদমই নেই। ভারতের ভুজ শহরের কথা, হিমালয়দুহিতা নেপালের কথা, আফগানিস্তান-পাকিস্তান-ইরানের কথা আর সর্বসাম্প্রতিক জাপানের ও ইকুয়েডরের ধ্বংসলীলার কথা ভুললে চলবে না। নিশ্চেষ্ট হয়ে বসে থাকবার সুযোগ আর নেই। ১৬ কোটির বেশি মানুষের এই দেশ। একটা বড়সড় ভূকম্পন হলে কী গজবই না ঘটে যাবে! এরপরও যদি আমাদের সম্মিলিত টনক না নড়ে, যদি আমরা মৌসুমী রোমান্টিকতার রঙিন কাচের আড়াল থেকে ভূমিকম্পকে দেখি তাহলে অনিবার্য বিভীষিকা আমাদের ছেড়ে কথা বলবে না। ‘অন্ধ হলে কি প্রলয় বন্ধ থাকে?’

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৫ ঘণ্টা: এপ্রিল ১৮, ২০১৬
জেএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।