ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

এরকম যেন আর কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে না হয়: ফুলপরী

ইবি করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৩
এরকম যেন আর কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে না হয়: ফুলপরী ইবির ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ফুলপরী

ইবি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) নবীন ছাত্রী ফুলপরীর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগীরা।

বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে তদন্ত কমিটির আহ্বায়কের কার্যালয়ে তারা ফুলপরীকে অনুরোধ করেন,  তুমি এরকম করো না।

তোমার হাতে-পায়ে ধরে মাফ চাই।

এরপর পর কার্যালয় থেকে বেরিয়ে ফুলপরী গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে বলেন,  আমার সঙ্গে যে অমানবিক আচরণ, নির্যাতন হয়েছে, সেটা তো আমি কখনও ফিরে পাব না। আমি চাই যে, এরকম যেন আর কখনও বিশ্ববিদ্যালয়ে না হয়।

দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্টের ডাকে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চারদিন ক্যাম্পাসে আসেন ফুলপরী।  

বাড়ি থেকে ক্যাম্পোসে আসার পথটাও খুব সহজ নয় তার। পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার শিবপুর থেকে ভ্যানে করে ৩০কিলোমিটার পথ পারি দিয়ে আসতে হয় পদ্মা নদীর ঘাটে। সেখান থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে পদ্মা পাড়ি দিয়ে একঘণ্টায় আসতে হয় কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলা অবস্থিত রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত শিলাইদহ ঘাটে।  

তারপর ব্যাটারিচালিত অটোয় চরে কুষ্টিয়ার আলাউদ্দীন নগর হয়ে সদরের চৌড়হাস মোড়ে আসতে হয়। সেখান থেকে বাসে চড়ে ২৪ কি.মি পথ পাড়ি দিয়ে আসতে হয় ক্যাম্পাসে। ফেরার সময় এভাবেই ফিরতে হয় তাকে।  

ভয়ের সংস্কৃতিকে দূর করে বিচার পাবার আশায় এভাবেই ক্যাম্পাসে ক্লান্তহীন ছুটে চলে আসেন ফুলপরী।  

বুধবার দুপুর ১২টায় যখন ক্যাম্পাস গেটে নামে তখনই চেহারায় ফুটে উঠে টানা জার্নিতে অসুস্থতা ও ক্লান্তির ছাপ। তবে সে ছাপ বারবারই লুকাতে চাচ্ছেন তার দৃঢ় মনোবলে।  

অসুস্থতা-ক্লান্তিকে বৃদ্ধঙ্গুলি দেখিয়ে ফুলপরী বলে উঠলেন, তদন্তের স্বার্থে তাকে যতবার ডাকা হবে ততবার-ই তিনি আসবেন।

গণমাধ্যমকর্মীদের ফুলপরী বলেন, ‘তদন্তের স্বার্থে আমি প্রভোস্ট স্যারের ডাকে ক্যাম্পাসে এসেছি। যতবার ডাকবে ততবার আসব, তবুও অন্যায়কারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই আমি। আমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা যেন পুনরাবৃত্তি না হয়। ’

তবে টানা জার্নিতে অসুস্থতার বিষয়টি স্বীকার করেন ফুলপরীর বাবা আতাউর রহমান। তিনি বলেন, ‘এ পর্যন্ত মোট চারদিন আসছি ক্যাম্পাসে। দেখা গেছে, বিকেলে ফোন দিচ্ছে সকালে আসুন। তখন সকালে কিছু খেয়েই ভ্যানে করে মেয়েকে নিয়ে বের হয়ে পড়ি। তবু আসছি। কেবল সুষ্ঠু তদন্ত, সুষ্ঠু বিচারের স্বার্থে। মেয়েটা আমার শারীরিকভাবে অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছে। ’   

এসময় ফুলপরী বলেন, আমার সঙ্গে যে অমানবিক আচরণ, নির্যাতন হয়েছে, সেটা তো আমি কখনও ফিরে পাব না। আমি চাই যে, এরকম যেন আর কখনও বিশ্ববিদ্যালয়ে না হয়। ছেলে-মেয়েরা, ভাইয়া-আপুরা যেন শান্তিতে, সুস্থভাবে, সুন্দরভাবে পড়াশুনা করতে পারে, এটা আমি চাই। আর আমার সঙ্গে ঘটে যাওয়ার র‌্যাগিংয়ের সর্বোচ্চ বিচার চাই।

একইসঙ্গে দ্রুত ক্যাম্পাসে ফেরার প্রত্যয় ব্যক্ত করে ফুলপরী বলেন, ‘আমি ক্যাম্পাসে ফিরব। ক্লাস করার ইচ্ছে আছে। এখানে শখ করে ভর্তি হয়েছি অবশ্যই ফিরব। ’

প্রসঙ্গত, গত ১১ ফেব্রুয়ারি দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে রাত সাড়ে ১১টা থেকে রাত প্রায় তিনটা পর্যন্ত শারীরিক নির্যাতন করা হয় নবীন ছাত্রী ফুলপরী খাতুনকে। ভুক্তভোগী ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তারা ওই ছাত্রীকে মারধর করে তার বিবস্ত্র ভিডিও ধারণ করে রাখে।

১৩ ফেব্রুয়ারি সকালে ভয় পেয়ে হল ছেড়ে বাসায় চলে যান ভুক্তভোগী ছাত্রী। র‌্যাগিংয়ের নামে শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্তার বিচার ও নিরাপত্তা চেয়ে মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) হল প্রভোস্ট, প্রক্টর ও ছাত্র-উপদেষ্টা দপ্তর বরাবর লিখিত দেন তিনি।  

বিষয়টি নিয়ে হল প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং শাখা ছাত্রলীগ পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে। বিষয়টি হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। হাইকোর্টের নির্দেশে ক্যাম্পাস ছাড়েন অভিযুক্তরা।   

বাংলাদেশ সময়: ২০২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৩
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।