ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

জাবির সমাবর্তন ফি, খাবার, লোগো নিয়ে বিতর্ক!

জাবি করেসপডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৩
জাবির সমাবর্তন ফি, খাবার, লোগো নিয়ে বিতর্ক!

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, (জাবি): দুদিন পর প্রতিষ্ঠানের ষষ্ঠ সমাবর্তন। আগামী শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) এ অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন ১৫ হাজার ২১৯ জন গ্র্যাজুয়েট।

সমাবর্তন কেন্দ্র করে জাবি ক্যাম্পাসে গ্র্যাজুয়েটদের উপস্থিতিতে বিরাজ করছে উৎসবমুখর আমেজ। আছে মুদ্রার বিপরীত দিকও। আয়োজনের বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনাও করছেন সাবেক শিক্ষার্থীরা।

অতিরিক্ত নিবন্ধন ফি; রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় জটিলতা; খাবারের তালিকা, এমনকি সমাবর্তনের লোগো নিয়েও সমালোচনা-বিতর্ক করছেন তারা। নিয়মিতদের সঙ্গে উইকেন্ড কোর্সের শিক্ষার্থীদের সমাবর্তনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে গ্র্যাজুয়েট স্বীকৃতি নিতে চাওয়াদের।

গত সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) থেকে সমবার্তনে নিবন্ধনকারী শিক্ষার্থীদের গাউনসহ উপহার সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়। ডিগ্রি প্রত্যাশীদের উপস্থিতিতে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে জাবির পরিবেশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি), সপ্তম ছায়া মঞ্চ, সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চ, অমর একুশ, সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ভবন, শহীদ মিনার, নতুন কলাভবন, বটতলা,পরিবহন চত্বর, হলসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গ্র্যাজুয়েটরা গায়ে কালো গাউন আর মাথায় কালো হ্যাট পরে সেলফি, গ্রুপ ফটোসেশনে ব্যস্ত। ক্যাম্পাসে আনন্দ করলেও তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বলে অন্য কথা। কারণ, সমাবর্তনের বিভিন্ন বিষয়ে অসন্তুষ্টি নিয়ে তারা অনলাইন প্ল্যাটফর্মটিতে সমালোচনা করছেন।

সমালোচনার অন্যতম প্রধান কারণ, সমাবর্তনের ফি। প্রতিষ্ঠানটি স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের জন্য একসঙ্গে চার হাজার টাকা ফি নির্ধারণ করেছে। এছাড়া স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে জন্য পৃথকভাবে ২৫০০ টাকা দিয়ে নিবন্ধনের সুযোগ রাখা হয়েছে। এমফিল ডিগ্রির শিক্ষার্থীদের জন্য ছয় হাজার টাকা, পিএইচডি সাত হাজার টাকা ও সাপ্তাহিক কোর্সের সনদধারীদের জন্য ৮ হাজার টাকা দিয়ে নিবন্ধন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত এ ফি মাত্রাতিরিক্তি বলে দাবি সাবেকদের। তারা ফি কমানোর আবেদনও করেছিলেন। সান্ধ্যকালীন কোর্সের শিক্ষার্থীদের সমাবর্তনে অংশ নেওয়ার সুযোগ নিয়েও সমালোচনা করেন জাবি থেকে পাস করে যাওয়া শিক্ষার্থীরা। সান্ধ্য কোর্সের শিক্ষার্থীদের সমাবর্তনে অংশ নেওয়া বন্ধের দাবিও করেছিলেন তারা। কিন্তু সেসব দাবি মানেনি প্রশাসন।  

বিতর্ক আছে সমাবর্তনের অতিথি ও অংশগ্রহণকারীদের খাবার তালিকা নিয়ে। জানা গেছে, খাবারের তালিকায় আছে ছোট একটি বান পিৎজা, এক স্লাইস কেক, সন্দেশ, চিকেন ফ্রাই, আপেল ও পানি। এসব খাবারের সর্বোচ্চ মূল্য ৩১১ টাকা। বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে নানা ধরনের পোস্ট দিচ্ছেন সাবেক শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক ফেসবুক গ্রুপগুলোয়ও সমালোচনা হচ্ছে।

বিনা পারিশ্রমিকে লোগো তৈরির বিনিময়ে সমাবর্তনের প্যান্ডেলের আওতায় ১১ লাখ টাকার কাজ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে চারুকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. মহসিনের বিরুদ্ধে। লোগোর মান নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। এছাড়া কোনো টেন্ডার ছাড়াই ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে সমাবর্তনের প্যান্ডেল তৈরি ও ৫৬ লাখ টাকার খাবার নিয়েও কথা হচ্ছে। ব্যবস্থা করা হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে সমাবর্তনের স্বর্ণপদকেরও।

এসবের মধ্যে গতকাল বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের কাউন্সিল কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সমাবর্তনের সার্বিক বিষয় তুলে ধরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও প্যান্ডেল কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক বশির আহমেদ বক্তব্য দেন। কোনো টেন্ডার ছাড়াই ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে সমাবর্তনের প্যান্ডেল তৈরির ব্যাপারে তিনি বলেন, আমরা খুবই অল্প সময় পেয়েছি। এত স্বল্প সময়ে টেন্ডার দিয়ে প্যান্ডেল তৈরি করা সম্ভব হতো না। তাই ডিপিএম (ডিরেক্ট পারচেজ মেথড) ব্যবহার করে প্যান্ডেল তৈরি করা হচ্ছে।

সমাবর্তনের খাবারের বিষয়ে আপ্যায়ন কমিটির সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলমগীর কবির বলেন,এবার গ্রাজুয়েট ও আমন্ত্রিত অতিথির সংখ্যা বেশি হওয়ায় মধ্যাহ্ন ভোজের দিকে না গিয়ে আমরা প্যাকেটজাত নাশতা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। বিকালের নাশতা হিসেবে এটিকে যথেষ্ট বলে মনে হয়েছে। এছাড়া খাবার বিতরণের জন্য চারটি বুথ স্থাপন করা হবে।

উইকেন্ড কোর্সের শিক্ষার্থীদের সমাবর্তনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক রাশেদা আখতার বলেন, অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে উইকেন্ড কোর্সের শিক্ষার্থীরা সমাবর্তনে অংশ নিতে পারে। যেহেতু তারাও আমাদের শিক্ষার্থী। তাই সমাবর্তনে অংশ নিতে তাদের কোনো বাঁধা নেই।

পরিবহন অফিসের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক ছায়েদুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যানবাহন চলাচল সীমিত করা হয়েছে। আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি যানবাহন পাশ ছাড়া কোনো ধরনের গাড়ি প্রবেশ করতে পারবে না। এছাড়া ব্যক্তিগত গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য চারটি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নুরুল আলম সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন। সাবেক শিক্ষার্থীদের সমালোচনা বা তাদের চাহিদার ব্যাপারে তিনি কোনো কথা বলেননি। তবে, পারস্পরিক সহযোগিতা ও সৌহার্দ্যমূলক সম্পর্কের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যাশা ও স্বল্প সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ সমাবর্তন আয়োজন করতে পেরে তিনি অভিভূত বলে জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৩
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।