যশোর: যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) ইসমাইল হোসেন নামে এক শিক্ষার্থীকে চাঁদার দাবিতে কয়েক ঘণ্টা ধরে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের দুই কর্মীর বিরুদ্ধে।
রোববার (২ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মশিয়ূর রহমান হলের একটি কক্ষ থেকে সহপাঠীরা তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে।
ঘটনার পর রাত সাড়ে ১০টার দিকে ভুক্তভোগীকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ইসমাইল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যপ্রযুক্তি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র এবং ময়মনসিংহের বলরামপুর গ্রামের আব্দুল মানান্নের ছেলে। আর অভিযুক্তরা হলেন- কম্পিউটার বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের সালমান এম রহমান ও একই বিভাগের বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী সোহেব আলী। তারা ৫২৮ নম্বর কক্ষের বাসিন্দা ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানার অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানান, ইসমাইল যশোর শহরের পালবাড়ি ভাস্কর্য মোড়ে একটি ছাত্রবাসে থাকেন। বিভিন্ন সময়ে ইসমাইলের কাছে দু’লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলেন সোহেব আলী ও সালমান এম রহমান। ইসমাইল চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে রোববার দুপুরে ডিপার্টমেন্টে ক্লাস চলাকালীন ওই দু’জন তাকে ডেকে হলে নিয়ে যান। এরপর দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তাকে বেঁধে রড, পাইপ আর বেল্ট দিয়ে পেটায়। পরে সন্ধ্যায় সহপাঠীরা তাকে উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পরে রাতে অবস্থার অবনতি হলে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এপিপিটি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আল জুবায়ের রনি বলেন, ইসমাইল কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নন। রোববার দুপুরের পর থেকে তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। এমনকি তার ফোনও বন্ধ ছিল। তিনি রোজা ছিলেন। ইফতারের সময় না পাওয়ায় অনেক খোঁজাখুঁজি করা হয়। তার সহপাঠীরা জানান, হলের সালমান আর সোহেব ক্লাস চলাকালীন তাকে ডেকে নিয়ে যায়। তারপর থেকে আর খোঁজ নেই ইসমাইলের। এ সময় সহপাঠীরা হলে গিয়ে দেখেন ৫২৮ নম্বর কক্ষে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছেন তিনি।
শিক্ষার্থীরা জানান, ৫২৮ নম্বর কক্ষটি ছয় জনের থাকার ব্যবস্থা থাকলেও ছাত্রলীগকর্মী সোহেব আর সালমান দু’জনই থাকেন। মাদক সেবন ও ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা করার দায়ে সোহেব বহিষ্কার হওয়ার পরেও ছাত্রলীগের প্রভাবে হলের নিয়মিত বাসিন্দা তিনি। এর আগেও এ দু’জনের বিরুদ্ধে সাধারণ ছাত্রদের শিবির উপাধি দিয়ে চাঁদা দাবি করারও অভিযোগ তোলেন শিক্ষার্থীরা। তারা দু’জনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ শাখার সভাপতি সোহেল রানার অনুসারী।
ছাত্রলীগ সভাপতি সোহেল রানা বলেন, ব্যক্তির দায় কখনও সংগঠন নেবে না। চাঁদাবাজদের ছাত্রলীগ কখনও প্রশ্রয় দেয় না। আর ওরা ছাত্রলীগের পদধারী কেউ নয়।
শহীদ মশিয়ুর রহমান হলের প্রভোস্ট ড. মো. আশরাফুজ্জামান জাহিদ বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর সহপাঠীরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। ভর্তি করার আগে তার মুখে নির্যাতনের বর্ণনা শুনেছি। ইসমাইলের ভাষ্য– চাঁদার দাবিতে তাকে আটকে রেখে সন্ধ্যা পর্যন্ত নির্যাতন করা হয়। আমরা নির্যাতনের কক্ষটি সিলগালা করে দিয়েছি। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থী সালমান এম রহমানকে সাময়িক বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আজ (সোমবার) বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। আর এর আগেই বিশৃঙ্খলা ও গাঁজা সেবনের দায়ে বহিষ্কার করা হয়েছিল সোহেব আলীকে। যদিও বহিষ্কার হওয়ার পরেও কিভাবে হলে ছিলেন এমন প্রশ্নের সদুত্তোর মেলেনি।
উপাচার্য ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি নিজে থেকে কক্ষটি তালাবদ্ধ করেছি। বিশৃঙ্খলাকারীদের যবিপ্রবিতে স্থান নেই। এ ঘটনায় আমরা মর্মাহত। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর খোঁজখবর নিয়েছি। জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে, যশোর সরকারি এম এম কলেজে ছাত্রলীগের এক নেতার বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে ছাত্রী হলের সামনে ছাত্রীদের উত্যক্তসহ নানা অভিযোগ ওঠে। রোববার তাকে বহিষ্কারও করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০২৩
জেডএ