বরিশাল: নৌকা প্রার্থীর সমর্থনকারী বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় এক জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
হামলার প্রতিবাদে সোমবার (১৫ মে) রাত ১২ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন এবং অগ্নিসংযোগ ঘটিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করেন।
পরে রাত ১টার দিকে বরিশাল মহানগরের সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
তবে বিক্ষোভকারীরা ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন পুলিশ প্রশাসনকে। আর এ সময়ের মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা না হলে কঠোর আন্দোলন করা হবে বলে জানিয়েছেন বিক্ষোভে অংশগ্রহনকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আয়াতুল্লাহ।
এর আগে, সোমবার (১৫ মে) রাত সাড়ে ১০ টার দিকে বরিশাল নগরের সরকারি জিলা স্কুল সংলগ্ন এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর ওই হামলার ঘটনা ঘটে।
হামলায় ছাত্রলীগ নেতা অমিত হাসান রক্তিমসহ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও নৌকার প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাতের সমর্থক মহিদুর রহমান, রাকিব হাসান রনি, সাইমুন ইসলাম, ইরাজ শরীফ, সিফাত খান, শাহেদসহ বেশ কয়েকজন গুরুত্বর আহত হয়েছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতা অমিত হাসান রক্তিম বলেন, আহতদের মধ্যে সাতজন রাতেই বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।
তিনি বলেন, ঘটনার সময় আমরা সার্কিট হাউজের বিপরীতে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহর (খোকন সেরনিয়াবাত) প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলাম। তখন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জুনিয়র ব্যাচের কিছু শিক্ষার্থী পাশেই জিলা স্কুল সংলগ্ন এলাকায় চায়ের দোকানে যায়। সেখানে যাওয়ার পর কিছু যুবক ওদের উদ্দেশ্য করে গালাগাল করতে থাকে। বিষয়টি আমরা সিনিয়রা জানতে পেরে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে যাই, কিন্তু তারা সবাইকে উদ্দেশ্য করে গালাগাল শুরু করে এবং আকস্মিক মারধর শুরু করে।
তিনি বলেন, মারধর ছাড়াতে গেলে আমাকেও ধাক্কা মেরে ফেলা দেওয়া হয়। পরে আহতদের কাউকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, আবার কেউ প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে। হামলাকারীদের সঙ্গে পূর্ব শত্রুতা নেই, বিনা অপরাধে আমাদের ছাত্রদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে।
এদিকে এ বিষয়টি ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা জানতে পেরে রাত সাড়ে ১১ টার দিকে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে রাত ১২ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তারা। এসময় মহাসড়কের ওপর আগুনও জ্বালান শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা অমিত হাসান রক্তিম বলেন, সড়ক অবরোধের খবর পেয়ে আমিসহ বরিশাল মহানগর ও বিএম কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা ঘটনাস্থলে গিয়ে কথা বলে শিক্ষার্থীদের তাদের অবস্থান থেকে সরিয়ে নেই। পরে রাত ১ টার দিকে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও নৌকার প্রার্থী নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য জসীম উদ্দীন বলেন, ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে, নির্বাচনে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছিলেন ওই ছাত্ররা। তারা প্রচার-প্রচারণার চেষ্টা করছিলেন, এমন সময় হামলার ঘটনা ঘটে। । যারা নির্বাচনকে বানচাল করতে চায়, তারাই এর সঙ্গে জড়িত।
এ বিষয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর খোরশেদ আলম বলেন, যতদূর জানি ঘটনাটি ক্যাম্পাসের বাইরে বরিশাল শহরের মধ্যে হয়েছে। আর এ সূত্র ধরে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন ও সামনের মহাসড়ক অবরোধ করেন।
তিনি বলেন, যদিও এটি কাম্য ছিল না। ঘটনার পরে আমরা পুলিশ প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে সড়ক অবরোধ তুলে নেওয়ার ব্যবস্থা করি। তাছাড়া ক্যাম্পাসের বাইরের ঘটনা হওয়া এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কিছু করার নেই। শিক্ষার্থীদের সংশ্লিষ্ট থানায় অভিযোগ দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
ঘটনার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে সুমন সিকদার নামে এক জনকে আটক করেছে জানিয়ে মামলার বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা অমিত হাসান রক্তিম বলেন, এ ঘটনায় মামলা দায়েরের জন্য রাতেই থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি আমি। রিফাত হোসেন, নিলয়, সুমন সিকদার ও বাদল নামে চার হামলাকারীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১৫-২০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
অভিযোগটি মামলা আকারে লিপিবদ্ধ হয়েছে বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, এরইমধ্যে ওই মামলায় এক জনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৬ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০২৩
এমএস/জেডএ