ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

স্থায়ী চাকরি চান গোপালগঞ্জের প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মজুরি ভিত্তিক কর্মীরা         

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৫ ঘণ্টা, মে ২১, ২০২৩
স্থায়ী চাকরি চান গোপালগঞ্জের প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মজুরি ভিত্তিক কর্মীরা

        

গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) চাকরি স্থায়ী করার দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন দৈনিক মজুরি ভিত্তিক ১৩৪ জন কর্মচারী।

আন্দোলনরত কর্মচারীরা বলছেন, তাদের চাকরি স্থায়ী  না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে।

দ্রুত কোনো সিদ্ধান্ত না এলে আমরণ অনশন শুরু করবেন তারা।

অন্য দিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে একই সঙ্গে এতো পদ সৃষ্ট হয় না। তাছাড়া চাকরি বা নিয়োগের ব্যাপারে তাদের কোনো হাত নেই। বিগত তিন নিয়োগে দৈনিক মজুরি ভিত্তিক কর্মচারীদের ১৫৪ জনের মধ্যে থেকে ১৮ জনকে চাকরি দিয়েছে রিজেন্ট বোর্ডের সদস্যরা।  

রোববার (২১ মে) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় গিয়ে দেখা যায়, উপাচার্যের দপ্তরের সামনের কোরিডরের মেঝেতে বসে দৈনিক মজুরি ভিত্তিক কর্মচারীরা অবস্থান করছেন। অনেকের হাতে ‘চাকরি স্থায়ী করা হোক’ লেখা কাগজ। তাদের চাকরি স্থায়ী করার ব্যাপারে বিভিন্ন স্লোগান দিতে শোনা যায় এসময়।

আন্দোলনরত রিক্তা বেগম বলেন, দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে ছয় বছর ধরে এখানে কাজ করছি, শুধুই আশ্বাস শুনে আসছি। আমার স্বামী নেই। পাঁচটি সন্তান নিয়ে চলতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। উপাচার্য খন্দকার  নাসির উদ্দিনের সময় টাকা দিয়ে চাকরিতে এসেছিলাম। এখন বাধ্য হয়ে আমরা এখানে বসেছি।  চাকরি না হলে এখান থেকে উঠব না।  

মো. বাহাদুর খান বলেন, অমাদের বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু কেন তারা নীবর, বুঝতে পারছি না। উপাচার্য স্যার উদ্যোগ নিলে আমাদের একটা ব্যবস্থা হতো। আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে বাঁচতে পারতাম।
তিনি আরও বলেন, সাবেক উপাচার্য প্রফেসার ড. খন্দকার নাসির উদ্দিনের সময় আমাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি চলে যাওয়ার পর উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব পালন করেন অধ্যাপক ড. মো. শাহজান স্যার। তিনিও আমাদের নিয়ে কোনো কাজ করেননি। অথচ আমাদের যখন চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়, তথন বলা হয়েছে, অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের নিয়োগ স্থায়ী করা হবে।
সাত-আট বছর আমাদের আশা দিয়ে রেখেছে। বর্তমানে উপাচার্য একিউএম মাহবুব আসার পর প্রথম দিকে আমাদের নিয়ে বেশ উদ্যোগ ছিল। তার সময়ে তিনটি নিয়োগ গেল। নিয়োগে ১৮ জনকে চাকরি দিয়েছে।  

নিপা অধিকারী বলেন, এখন তো আমাদের সামনে আর কোনো পথ নেই। পরিবার পরিজন নিয়ে খেয়ে না খেয়ে জীবন যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি, আমাদের চাকরি স্থায়ী করা হোক। যাতে পরিবার পরিজন নিয়ে আমরাও সমাজে বাঁচতে পারি।

অন্যান্য আন্দোলনরত কর্মচারীরা বলেন, বার বার আন্দোলনের পর ২০২১ সালেন ২ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি একটা নীতিমালা সুপারিশ করে। এর পরিপেক্ষিতে ২০২৩ সালের ৫ মে ২৯তম রিজেন্ট বোর্ডেও আমাদের নিয়ে একটি নীতিমালা করার পর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

শনিবার (২০ মে) গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ওই পরীক্ষা থাকায় তারা আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত রেখেছিলেন। রোববার সকাল ১০টা থেকে তারা পুনরায় অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দলিলুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে একসঙ্গে এত পদ সৃষ্টি হয় না।  তাছাড়া ১৫৪ জনের মধ্যে ১৮ জনের চাকরি হয়েছে।  নিয়মনীতি মেনেই নিয়োগ দেয় রিজেন্ট বোর্ড।  

তিনি আরও বলেন, জাতীয় ইস্যু ২০ মে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে উপাচার্যের দপ্তরে সভা চলছিল। ওই সময় তারা উপাচার্যের দপ্তরের প্রধান ফটকে তালা বন্ধ করে দিয়ে ঠিক কাজ করেনি। তারা অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে, সেটা আমাদের আগে নোটিশ দেওয়া উচিত ছিল।  

তবে অন্দোলনরত কর্মচারীরা জানিয়েছেন, তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে স্মারকলিপি দিয়েই আন্দোলন শুরু করেছেন।  

গত বুধবার (১৮ মে) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দপ্তরের সামনের প্রধান ফটক তালাবদ্ধ করে চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীরা এ কর্মসূচি শুরু করেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ কিউ এম মাহবুব, প্রক্টর মো. কামরুজ্জামান, কোষাধ্যক্ষ মোবারক হোসেন ও রেজিস্ট্রার দলিলুর রহমান অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। দুপুর পৌনে ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সমিতির সদস্যরা কলাপসিবল গেট ভেঙে উপাচার্যসহ কর্মকর্তাদের মুক্ত করেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৩ ঘণ্টা, মে ২১, ২০২৩
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।