শাবিপ্রবি (সিলেট): শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) একটা সময় চলত ড্রপ কালচার। ফলে শিক্ষা জীবনে পিছিয়ে পড়তেন শিক্ষার্থীরা।
কোনো শিক্ষার্থী নূন্যতম একটি কোর্সেও ড্রপ দিলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে আর শিক্ষক হতে পারবেন না। এছাড়া শিক্ষার্থীদের প্রথম বর্ষের কোর্স শেষ না করে তৃতীয় বর্ষে, দ্বিতীয় বর্ষের কোর্স শেষ না করে চতুর্থ বর্ষে প্রমোশন না পাওয়াসহ বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ফলে ২০১৭ সালের পর থেকে ধীরে ধীরে শাবিপ্রবির ড্রপ কালচার শেষ হয়।
ইদানিং আবার ড্রপ কালচার শুরু হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। বাংলা বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ সংস্কৃতি শুরু হয়েছে। সম্প্রতি এক অসুস্থতার কারণে ২০২১-২২ সেশনের পুরো ব্যাচ ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নেয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৬ জুলাই বাংলা বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তর প্রথম সেমিস্টারের ‘গণমাধ্যম ও চলচ্চিত্র’ শিরোনামে বিএনজি-৫১৩ কোর্সের ফাইনাল পরীক্ষা ছিল। এক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ কারণে ওই শিক্ষার্থীর সহপাঠীরা কয়েকদিন পরীক্ষা পিছিয়ে দিতে বলে। তবে বিভাগের শিক্ষকরা নিয়মিত রুটিনে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্তে অটুট থাকলে ব্যাচের কোনো শিক্ষার্থীই পরীক্ষায় অংশ নেয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অসুস্থ ওই শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে মেডিকেল সাপোর্টসহ সব ধরণের সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। প্রয়োজনে আলাদাভাবে তার পরীক্ষা নিয়ে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সাথে ফলাফল প্রকাশ করা হতো। তবে ব্যাচের শিক্ষার্থীরা সেটা মেনে না নিয়ে পরীক্ষা পেছানোর জন্য বিভাগকে চিঠি দেয়। বিভাগের শিক্ষকরা সিদ্ধান্ত নেয় পরীক্ষা না পিছিয়ে আগের রুটিনে পরীক্ষা নেওয়া হবে। এ কারণে কোনো শিক্ষার্থী আর পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নিয়ম ভেঙেই শিক্ষার্থীদের গাফিলতিতে ড্রপ সংস্কৃতি চর্চা করে তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী এ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের পরবর্তী ব্যাচের সাথে পরীক্ষা দিয়ে কোর্স তুলতে হবে। এর আগে গত ১৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭৩তম একাডেমিক কাউন্সিলেও এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বাংলা বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, আমাদের এক সহপাঠী দীর্ঘদিন ধরে জ্বরে আক্রান্ত হয়। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল। এতে কয়েকজনের প্ল্যানে তাকে ছাড়া পরীক্ষা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে শিক্ষকরা একই রুটিনে পরীক্ষা হবে বললে আমরা পরীক্ষা দিইনি।
এ বিষয়ে শাবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আগে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্স ড্রপের জন্য শিক্ষার্থীদের বছরের পর বছর পড়ে থাকতে হতো। ঠিকভাবে পাস করে বের হতে পারত না। অনেক প্রচেষ্টার পর ড্রপ কালচার থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছি। এটা আমাদের জন্য অনেকটা চ্যালেঞ্জের ছিল। শিক্ষার্থীদের মঙ্গলের জন্যই আমাদের এ প্রচেষ্টা। বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ড্রপ কালচার নেই বললেই চলে। আমরা কখনো এটাকে প্রশ্রয় দেব না, এটার বিরুদ্ধে সবসময় জিরো টলারেন্স নীতি থাকবে।
বাংলা বিভাগের ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা কোন ধরনের সংস্কৃতি? যে একজন শিক্ষার্থী অসুস্থ বলে কেউ পরীক্ষায় বসবে না। আমরা অসুস্থ এই শিক্ষার্থীকে চিকিৎসা সুবিধাসহ সব ধরনের সহযোগিতা দেব বলেছি। তবে তারা সেটা মেনে না নিয়ে পুরো ব্যাচ পরীক্ষা দেয়নি, এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। আমরা বার বার সতর্ক করার পরও তারা এ অপসংস্কৃতি চর্চা শুরু করেছে। নতুন করে ড্রপ কালচারকে আবার প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী তাদেরকে পরবর্তী সেমিস্টারের সাথে কোর্সটি তুলতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৩
এমজে