ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

ট্রেজারার পদে কামালউদ্দিনের নিয়োগে অসাধুদের দৌড়ঝাঁপ

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ৪, ২০২৩
ট্রেজারার পদে কামালউদ্দিনের নিয়োগে অসাধুদের দৌড়ঝাঁপ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি): ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. কামালউদ্দিন আহমদকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ নিয়োগের মেয়াদ শেষ হতে বাকি দুই মাস।

এটি শেষ হওয়ার পর কামালউদ্দিনকে ফের নিয়োগ দিতে চায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মকর্তাদের একটি অসাধু সিন্ডিকেট, যা নিয়ে মন্ত্রণালয়ে দৌড়ঝাঁপ হচ্ছে বেশ।

এদিকে, শিক্ষক সমিতির দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ অধ্যাপকদের মাঝ থেকে ট্রেজারার নিয়োগ দেওয়া হোক। এ জন্য শিক্ষামন্ত্রীর কাছে চিঠিও দিয়েছেন তারা।

জানা গেছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের একটি সিন্ডিকেট ট্রেজারার অধ্যাপক ড. কামালউদ্দিন আহমদকে দিয়ে অনিয়ম, দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, নিয়োগ বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে তাকে চান। এ জন্য বিভিন্ন জায়গায় লবিং করছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কামালউদ্দিন আহমদকে ট্রেজারার হিসেবে নিয়োগে প্রথমবারের মতো লবিং করছেন তার ভগ্নীপতি ও কুমিল্লা-১ আসনের সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভুইয়া। তিনি বিএনপি সরকারের আমলে সামরিক সচিব ছিলেন।

নানা গণমাধ্যমে ঘেঁটে দেখা যায়, ২০১৬ সালের ১৭ আগস্ট সংসদীয় কমিটির এক বৈঠকে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের ‘প্রথম রাষ্ট্রপতি’ বলে তোপের মুখে পড়েন সুবিদ আলী। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক কামালউদ্দীন আহমেদের রাজনৈতিক আদর্শ নিয়েও রয়েছে নানা বিতর্ক। তিনি কখনো সাদা দলের পৃষ্ঠপোষক আবার কখনো বাম সংগঠনের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন বলে জানা যায়।

বর্তমানে নিজেকে খাঁটি আওয়ামী লীগার হিসেবে দাবি করেন কামালউদ্দীন আহমেদ। এ নিয়ে শিক্ষক মহলেও নানা সময় চলে আলোচনা-সমালোচনা।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রেজারার পদে কামালউদ্দিন আহমদ চার বছরে বিভিন্ন বিতর্কিত কাজকর্ম করেও সমালোচিত হয়েছেন। কখনো মানবতাবিরোধী আসামি সাকা চৌধুরীর পরিবার সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে লেকের টেন্ডার দিয়ে, আইন না মেনে টানা তিন বছর বাজেট নিজে উপস্থাপন না করে অর্থ পরিচালককে দিয়ে উপস্থাপন করা, অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র না মেনে বিভিন্ন কাজ দেখিয়ে বেতনের সমপরিমাণ বেসিক নেওয়া, আইনের তোয়াক্কা না করে নির্বাচনী প্রচারণায়, নিয়ম লঙ্ঘন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি নিজের মেয়ের বিয়েতে ব্যবহার, উপাচার্য না থাকায় তার গাড়ি-অফিস নিজের দখলে নিয়ে ব্যবহারসহ নানা কাজে বিতর্কিত হন তিনি।

এসব ঘটনায় বিভিন্ন সময়ে জাতীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এবং সাকা চৌধুরীর পরিবার সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে নিয়ম না মেনে টেন্ডার দেওয়ায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় অধ্যাপক ড. কামালউদ্দিন আহমদকে প্রশাসনিকভাবে চরম অদক্ষ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তাকে টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটি থেকে অপসারণেরও সুপারিশও করা হয়।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নেতাদের দাবি, ইংরেজির অধ্যাপক কামালউদ্দিন আহমদ ট্রেজারার হিসেবে শুধু সই করে গেছেন। বাজেট তৈরিসহ সব কাজ করেছেন অর্থ পরিচালক।

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, সমিতির সাধারণ সভার সবার মত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর থেকে কোনো এক অধ্যাপককে ট্রেজারার পদে নিয়োগ দেওয়া হোক। কামালউদ্দিন আহমদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। আমরা শিক্ষামন্ত্রী, উপাচার্য ও শিক্ষা সচিবে কাছে চিঠি দিয়েছি।

সামগ্রিক বিষয়ে জানতে ট্রেজারার অধ্যাপক ড. কামালউদ্দিন আহমদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ‘এসব বিষয়ে কথা বলতে চাই না’ বলে জানান। এরপর ফোন কেটে দেন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ইমদাদুল হক চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৪, ২০২৩
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।