ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

যে কারণে এক শিক্ষক দিয়েই চালাতে হচ্ছে বিদ্যালয়

সাগর ফরাজী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৪
যে কারণে এক শিক্ষক দিয়েই চালাতে হচ্ছে বিদ্যালয়

জামালপুর: ২০১৭ সালে সরকারি হয়েছে জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার নয়ানগর ইউনিয়নের পাঁচ নম্বর চর উত্তর উস্তম আলী মাস্টার প্রাথমিক বিদ্যালয়।  

বিদ্যালয়টিতে প্রধান শিক্ষকসহ পাঁচজন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও এখন রয়েছেন শুধু প্রধান শিক্ষক শাহ জামাল।

সব শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেন তিনি একাই। বিদ্যালয়ের তালা খোলা থেকে সব কাজ করেন প্রাধান শিক্ষক।  

প্রতিদিন একাই নেন ২০ ক্লাস। বিদ্যালয়টি চলাঞ্চলে হওয়ায় কোনো শিক্ষক আসতে চান না।

শুরুতে প্রধান শিক্ষক শাহ জামাল ও আরেকজন সহকারী শিক্ষক ছিলেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে। ২০২২ সালের ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক বদলি হয়ে চলে যান। পরে বিদ্যালয়ে আর কোনো সহকারী শিক্ষক আসেননি। চারজন সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। বিদ্যালয়ে খাতা কলমে ছয়টি শ্রেণিতে মোট শিক্ষার্থী রয়েছে ৭২ জন। এদের মধ্যে প্রাক-প্রাথমিকে ১০, প্রথম শ্রেণিতে ১০ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১২ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ১২ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ১৩ জন ও পঞ্চম শ্রেণিতে ১২ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।

 
সম্প্রতি বিদ্যালয়টিতে গিয়ে কথা হয় স্থানীয়দের সঙ্গে। তারা জানান, গত এক বছর ধরে প্রধান শিক্ষক শাহ জামাল ছাড়া কেউ নেই। প্রধান শিক্ষক একাই স্কুলের সব কাজ করেন। এ স্কুলটি চর এলাকায়। স্কুলে আসার রাস্তাঘাট একদমই খারাপ। কোনো শিক্ষক স্কুলে আসতে চান না কাঁচা রাস্তা দেখে। বর্ষার সময় হেঁটেও চলাচল করা যায় না। তাই কোনো শিক্ষকও এ স্কুলে চাকরি করতে চান না।

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. শরিফ বলে, আমাদের স্যার একজন আছেন, আর স্যার কেউ নাই। একাই আমাদের সব ক্লাস নেন। আগে ছাত্র-ছাত্রী বেশি ছিল, স্যার নাই দেখে অন্য স্কুলে চলে গেছে। আমাদের ক্লাসে আমরা দুজন ছাত্রছাত্রী আজ স্কুলে আসছি, ক্লাস থ্রি, ফোর, ফাইভ সবার ক্লাস একসঙ্গে নেন স্যার।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন, শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার আগে শিক্ষকেরা আগেই এসে স্কুল দেখে যান। স্কুলে আসার রাস্তাঘাট খারাপ এবং স্কুলটি চর অঞ্চলে হওয়ায় কোনো শিক্ষক এ স্কুলে আসতে চান না।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শাহ জামাল বলেন, খুব কষ্টে রয়েছি, বিদ্যালয়ে আমি ছাড়া আর কেউ নাই। আমাকেই সব কাজ করতে হয়। ২০১৭ সালের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। তখন থেকে দুজন শিক্ষক ছিলাম। ২০২২ সালের শেষের দিকে একজন শিক্ষক বদলি হয়ে অন্য জায়গায় চলে যান। তারপর থেকে আমি একাই রয়েছি। প্রতিদিন আমাকে একাকেই ক্লাস নিতে হয়। এদিকে শিক্ষক না থাকায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কমে গেছে।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষকরা আসতে চান না, এর মূল কারণ হচ্ছে বিদ্যালয়ে আসার রাস্তাঘাট খুবই খারাপ, এ বিদ্যালয়টি চর অঞ্চলে। বর্ষার সময় দুই কিলোমিটার হেঁটে স্কুলে আসতে হয়। এসময় মোটরসাইকেল দিয়ে কোনো রকম আসা যায়। এছাড়া কোনো যানবাহন চলে না। বর্তমানে রাস্তার দুই পাশেই ভুট্টা খেত, রাস্তা দিয়ে একা আসাও ভীতিকর।

জামালপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এম এম মিজানুর রহমান বলেন, এ বিষয় নিয়ে আমি না জেনে কিছু বলতে পারব না। এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছ থেকে জানতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৪
এসআই


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।