ঢাকা: তাপদাহের মধ্যে রোদে বাইরে থাকার চেয়ে বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান কার্যক্রমে থাকাটা শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক বেশি নিরাপদ বলে মনে করেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী।
রোববার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি আয়োজিত ‘জাতীয় শিক্ষানীতি ও নতুন কারিকুলাম’ বিষয়ক গোলটেবিল বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বর্তমানে আমাদের দেশে যে তাপমাত্রা, এটা বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা নয়। সুতরাং এবার কেন এত আলোচনা করা হচ্ছে বিদ্যালয় বন্ধ রাখার জন্য, সেটা আমাদের ভাবতে হবে। বিদ্যালয় বন্ধ রেখে আসলে কি অর্জন করতে পারি। তার মানে এ শিক্ষার্থীরা কি ঘরে থাকবে?
তিনি বলেন, এ মুহূর্তে আবহাওয়া অধিদপ্তরের যে পূর্বাভাস- রাজধানী ঢাকার যে তাপমাত্রা সেটার সঙ্গে তো আমি সারাদেশের তাপমাত্রা মেলাতে পারি না। এ মুহূর্তে ৪০ (ডিগ্রি) পর্যন্ত উঠার সম্ভাবনা আছে পাঁচটি জেলায়। আমাদের ৬৪ জেলার মধ্যে মাত্র পাঁচটি মাত্র জেলায় সেখানে পূর্বাভাস হচ্ছে ৪০-এ পৌঁছানোর। সেক্ষেত্রে সব বিদ্যালয় বন্ধ করে রাখাটা তো যুক্তিযুক্ত নয়। সেটা হচ্ছে আমাদের অবস্থান।
শিক্ষামন্ত্রী জানান, আর একটা জেলাতে আমরা শুনতে পেয়েছি একজন মৃত্যু বরণ করেছেন। তিনি কি হিটস্ট্রোকে মৃত্যুবরণ করেছেন, তিনি কি বিদ্যালয়ে পাঠদানকালীন মৃত্যুবরণ করেছেন নাকি তিনি মাঠেঘাটে ছিলেন, সেটা আমাদের দেখতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, নির্দিষ্ট কোনো জেলাতে যদি অতিমাত্রায় তাপদাহ হয় সেখানে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, মন্ত্রণালয় থেকে সেখানে নির্দেশনা দেওয়া আছে শিশুদের ক্ষেত্রে যাতে তাদের কষ্ট না হয়, সেটাও বলা আছে। এখন সবকিছুতেই বিদ্যালয়, আলিয়া মাদরাসা বন্ধ করে দেওয়ার প্রবণতা কিন্তু আসলে সঠিক নয়। আর রাজধানীকে কেন্দ্র করে আমরা যাতে সারা দেশকে বিচার না করি সেটা আমি অনুরোধ রাখবো।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে চৈত্র মাসে তাপদাহ হয়, তাপদমাত্রা বৃদ্ধি হয়। আমাদের দেশের চেয়ে অনেক বেশি তাপমাত্রা আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে আছে। সেখানে বিদ্যালয়গুলো চলছে। সেখানে বিদ্যালয় চলছে, আমাদের এখানে না চলার কোনো কারণ নেই।
তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির ওপরে গেলে বিদ্যালয় বন্ধ করার সিদ্ধান্ত আছে। সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল-৪০ ডিগ্রিতে ৪৬ ডিগ্রির অনুভূতি হয়, এটা ৪০-এ করা যায় কিনা- প্রশ্নে তিনি বলেন, অনুভূতিটা বেশি সেটা আপনি বলছে, আমি বলছি। আমরা চিকিৎসা বিজ্ঞানের সঙ্গে সম্পর্কিত নন বা আমিও নই। আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করছি। আমাদের সারাদেশের কথা ভাবতে হবে। আমরা যদি দেখি পাশের দেশ বা মধ্য প্রাচ্য বা ভারত বলেন, সেখানে তো এ ধরনের তাপমাত্রা আছে। সেটাতে তারা অভ্যস্ত। আমাদের দেশে বিদ্যালয় বন্ধ করলেই যে শিক্ষার্থীরা সবাই সতর্ক থাকবে বা নিরাপদে থাকবে তা তো নয়। আমরা অনেক জায়গায় দেখেছি গ্রাম-গঞ্জে বিদ্যালয় বন্ধ থাকলে তাদের মাঠে ঘাটে ঘুরে বেড়ানোরও অভিযোগ আছে। সেক্ষেত্রে তারা যে আসলে খুব নিরাপদে ঘরে অবস্থান করছে তাও তো নয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে বিদ্যালয় কিন্তু নিরাপদ জায়গা। সেখানে যদি যথাযথ ব্যবস্থা থাকে, পানির ব্যবস্থা থাকে, সেখানে ছায়াতলে তারা অবস্থান করে। তারা তো রোদের নিচে পড়াশোনা করছে না। সেক্ষেত্রে রোদে বাইরে থাকার চেয়ে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান কার্যক্রমে থাকাটা অনেক বেশি নিরাপদ। সেটাও আমাদের আলোচনায় এসেছে এবং সেজন্য স্কুল খোলা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০২৪
এমআইএইচ/জেএইচ