ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

অনলাইন শিক্ষা : ক্যাম্পাস জীবন কি শেষ হয়ে যাচ্ছে? (শেষ পর্ব)

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০১২
অনলাইন শিক্ষা : ক্যাম্পাস জীবন কি শেষ হয়ে যাচ্ছে? (শেষ পর্ব)

ঢাকা : থ্রুনের এ সাফল্য দেখে উৎসাহিত হয়ে আমেরিকার অন্যান্য স্থানেও অনেকে অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় আগ্রহ দেখাতে শুরু করে। খোদ থ্রুনেরই প্রাক্তন দুই সহকর্মী অ্যান্ড্রু এনজি এবং ড্যাফনে কোলার মিলে ‘কোরসেরা’ নামে একটি অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করলেন।



যে সময়ে ‘ইউডাসিটি’ তাদের নিজস্ব সিলেবাস পুনরায় মূল্যায়নে ব্যস্ত, সে সময় বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে চুক্তি সম্পাদনের জন্য আলোচনায় জড়াতে থাকে কোরসেরা। জুলাইয়ের দিকে কোলারের বরাতে জানা যায়, স্ট্যানফোর্ড, প্রিন্সটন, মিশিগান এবং পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো চারটি বিশ্বখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি সম্পন্ন করতে সমর্থ হয়েছে তাদের কোরসেরা ওয়েবসাইট। এর ঠিক চার মাস পরেই এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩ টিতে এবং শিক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৮ লাখে।

প্রসঙ্গত, অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থায় জড়িত হওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রথম হলো এডিনবার্গ। অ্যান্ড্রু এনজি এবং ড্যাফনে কোলারের ‘কোরসেরা’র সাথে চুক্তি সম্পাদন করে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। ইতোমধ্যে এডিনবার্গের প্রস্তাবিত ৬ টি বিষয়ে পড়ার জন্য প্রায় এক লাখ শিক্ষার্থী কোরসেরায় তাদের নাম লিপিবদ্ধ করে ফেলেছে।

এ সম্পর্কে এডিনবার্গের উপাধ্যক্ষ জেফ হেওয়ার্ড বলেন, ‘আমরা নিরীক্ষামূলকভাবে এটা করছি। আসলে এ ব্যবস্থার সাথে আমরা পরিচিত হতে চাই। যদি এর ফলাফল সন্তুষ্টজনক হয় তবেই আমরা সামনে এগোনোর সিদ্ধান্ত নেবো। আর কোরসেরা কর্তৃপক্ষ যদি তাদের প্রস্তাবিত কাজের অন্যথা করে, তাহলে আমরা আমাদের অবস্থানেই ফেরত আসবো। ’

এদিকে এডএক্স নামে আরেকটি অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশ করেন ম্যাসাচুসেটস টেকনোলজি ইন্সটিটিউটের কম্পিউটার সায়েন্সের অধ্যাপক অনন্ত আগারওয়াল। খান একাডেমির সালমানকে অনুপ্রেরণা হিসেবে মানেন তিনি। কিন্তু মজার ব্যাপার হল অনন্ত আগারওয়ালেরই এক সময়ের ছাত্র ছিলেন সালমান। উল্লেখ্য, এডএক্স এর মাধ্যমে এমআইটি, হার্ভার্ড, বার্কলি এবং টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস অনুযায়ী শিক্ষাসংক্রান্ত সেবা দিয়ে থাকেন আগারওয়াল।

অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এটাও এক ধরনের বিপ্লব। গত ২০০ বছরের ইতিহাসে শিক্ষা ক্ষেত্রের জন্য এটা একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার। শিক্ষাকে একটি ইতিবাচক মাত্রায় নিয়ে যাচ্ছে অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয়। আশা করছি আগামী এক দশকের মধ্যে শিক্ষার এ মাধ্যম বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে যাবে। ইতোমধ্যে কোনো রকম বিপণন ব্যবস্থার সাহায্য না নিয়েই আমরা গত চার মাসে প্রায় ৪ লক্ষ শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দান করতে পেরেছি। তো বুঝতেই পারছেন, অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয় এখন আর কাল্পনিক কোনো বিষয় না। ’

অনেকের মতে শিক্ষা এখনো শিল্প হয়ে উঠতে পারেনি, তবে নিঃসন্দেহে এটি একটি ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। বর্তমানে শিক্ষা হলো একটি বাজার উল্লেখ করে প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ম্যাট গ্রিস্ট বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি যে এটা খুবই ভয়াবহ অবস্থা। অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারটা আমার পছন্দ হচ্ছে না। কিন্তু হয়তো আমাকেও এটা করতে হতে পারে। ’

প্রগতিশীল শিক্ষাবিদরা মনে করছেন যে, এসব অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স মাত্র কয়েক মাস হলো। এখনই তাদের খুব বেশি আত্মবিশ্বাসী হওয়া ঠিক হবে না। কিন্তু তাদের ভিত্তি আরো মজবুত করতে হবে যদি তারা সামনে এগোতে চায়। তার কারণ, একসময় আমরা ভাবতাম যে, সংবাদপত্র বোধহয় চলতেই থাকবে। কিন্তু হাল আমলের অবস্থা বিবেচনা করে দেখুন। এখন অনলাইন পত্রিকার সংখ্যা কেমন হারে বাড়ছে। অবাধ্য দেনার কারণে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বিখ্যাত সব মুদ্রণ প্রকাশনাগুলো। তবে কি কাগজের সব রকম প্রকাশনা তার আবেদন হারাচ্ছে?

সম্প্রতি বেশকিছু জরিপে দেখা গেছে, ক্যাম্পাস সম্বলিত বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের সন্তানকে পড়ানোর জন্য এমনিতেই আর্থিকভাবে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে মধ্যম ও নিম্ন আয়ের অভিভাবকদের। প্রতি বছরের মোট আয়ের সিংহভাগই চলে যায় সন্তানের জন্য শিক্ষাসংক্রান্ত ব্যয়ে। এর ওপর আবার সম্পূর্ণ নতুন ধারার অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থা। তাই বলা চলে যে কিছুটা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে দিন কাটাচ্ছেন অভিভাবকরা।

উন্নত দেশগুলো ছাড়াও অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশসমূহের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই এখন অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থার দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। আবার অনেকে এটাকে ক্যাম্পাস শিক্ষাব্যবস্থার জন্য হুমকি বলে মনে করছেন। এমনকি ব্রিটেনে প্রাতিষ্ঠানিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদনের হারও অনেক কমে গেছে। সেখানে সুটন ট্রাস্ট নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী আবেদনের হার প্রায় ১৫ শতাংশ কমে গেছে।

বর্তমান ক্যাম্পাস শিক্ষা-ব্যবস্থার প্রতি শিক্ষার্থীদের মনোভাব জানতে হান্নাহ নামে এডিনবার্গের একজন স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীর কাছে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, আগামীকাল তোমার কোনো ক্লাস আছে কি না? উত্তরে সে বললো, সকাল ৯ টার দিকে একটা মাত্র ক্লাস আছে, তাও দর্শন। কিন্তু আমি সেখানে যাচ্ছি না।
হান্নাহর এরকম উদাসীনতার কারণ কি?
কারণ যাই হোক না কেন, খোদ শিক্ষার্থীরাই যে এখন ভোক্তায় পরিণত হচ্ছেন!
- গার্ডিয়ান অবলম্বনে


বাংলাদেশ সময় : ১৬৪৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০১২
সম্পাদনা : সুমন পাল ও হুসাইন আজাদ, নিউজরুম এডিটর eic@banglanews24.com

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।