ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

টিউশনি করে জিপিএ-৫ পেলেন ইকরাম

উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৪
টিউশনি করে জিপিএ-৫ পেলেন ইকরাম ইকরাম / ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া): আর্থিক সংকট আর সব বাধা-বিপত্তিকে জয় করে এবারের এইসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন মেধাবী ছাত্র ইকরাম। অদম্য মেধা, ইচ্ছাশক্তি আর প্রচন্ড পরিশ্রমই যে সব অর্জনের চাবি-কাঠি, এটি আবারও প্রমাণ করলেন ইকরাম।



ইকরামদের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী আব্দুল্লাহপুর গ্রামে। তার বাবা বাহার চৌধুরী পেশায় একজন বর্গা চাষী। মা শিমুল বেগম গৃহিণী। তিন ভাইয়ের মধ্যে সে সবার বড়।

আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়েই তাদের বেড়ে উঠা। এক বর্গা চাষীর বাবার অল্প আয় দিয়েই চলে সংসার। তার ওপর তিন ভাইয়ের লেখাপড়ার খরচ।

আর্থিক সংকটে তার লেখাপড়া যেন বন্ধ না হয় তাই প্রিয় স্কুল শিক্ষক ফজলুল হকের পরামর্শে ইকরাম শুরু করেন টিউশনি। কারণ ইকরামের মনের কোঠরে লালিত স্বপ্ন সে ডাক্তার হবে। তাই সব বাধা অতিক্রম করতে সে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

ইকরামের সহপাঠীরা বাংলানিউজকে জানান, সে প্রতিদিন ৬-৭ ঘণ্টা নিয়মিত লেখাপড়া করতো। বাকি সময় টিউশনি করতো। এতে মাসিক যে আয় হতো তা দিয়ে লেখাপড়ার খরচ চালাত। আর অবশিষ্ট টাকা তুলে দিত মায়ের হাতে। মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য এরইমধ্যে ইকরাম ঢাকায় গিয়ে কোচিং শুরু করে দিয়েছে। সেখানেও তার বড় সমস্যা অর্থ।

তবে আমাদের বিশ্বাস কঠোর পরিশ্রম আর ইচ্ছাশক্তি দিয়েই ইকরাম তার কাঙ্কিত লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তারা।

পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর ছেলের এই সাফল্যে মা আনন্দে মাতোয়ারা। মা শিমুল বেগম বাংলানিউজকে বলেন, আর্থিক টানে বার বার আমার ছেলের লেখাপড়ায় ব্যাঘাত হয়েছিল। কিন্তু অনেক পরিশ্রম করে সে ভাল ফলাফল করেছে। আপনারা দোয়া করবেন আল্লাহ যেন আমার ছেলের আশা পূরণ করে।

অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে ইকরাম বাংলানিউজকে বলেন, আমি নিয়মিত ৬/৭ ঘণ্টা লেখাপড়া করেছি। বাকি সময় তিনটি ব্যাচে টিউশনি করে লেখাড়পড়ার খরচ জোগাড় করেছি। অনেক সময় সহপাঠী এবং এক খালার কাছ থেকে পাঠ্যবই ধার নিয়ে পড়েছি। আর্থিক বাধা-বিপত্তি আসলেও মনে বিশ্বাস ছিল আমি ভাল ফলাফল করতে পারবো। আমি এই ভাল ফলাফলের জন্য মা-বাবা, প্রিয় স্যার ফজলুল হক, কলেজের সব শিক্ষক এবং সহপাঠীদের কাছে কৃতজ্ঞ।

ইকরাম ভবিষ্যতে একজন ভাল ডাক্তার হতে চায়। আর সেই লক্ষ্যেই তার অদম্য এগিয়ে চলা।

ইকরামের স্কুল শিক্ষক ফজলুল হক বাংলানিউজকে বলেন, অধ্যবসায় আর ইচ্ছা শক্তির কাছে সব বাধাই হার মানে। তার দৃষ্টান্ত ইকরাম। সে খুবই ভাল স্টুডেন্ট। পঞ্চম শ্রেণীতেও ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিল। এই অদম্য মেধাবী ছেলে  খুব সহজেই তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।