ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

জাবিতে ছাত্রলীগের হামলার নেপথ্যে কমিটি ভাঙার ষড়যন্ত্র!

ওয়ালিউল্লাহ, জাবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৪
জাবিতে ছাত্রলীগের হামলার নেপথ্যে কমিটি ভাঙার ষড়যন্ত্র!

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি): জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মওলানা ভাসানী হলে ছাত্রলীগের এক পক্ষের ওপর অপর পক্ষের হামলার ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত বলে অভিযোগ  উঠেছে।

বর্তমান কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের বেকায়দায় ফেলার লক্ষ্যে এবং নিজেদের গুরুত্ব বাড়াতে প্রায় এক সপ্তাহ আগে থেকেই হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদকের বাইরের আরেকটি গ্রুপের নেতাকর্মীরা এমনই জানা গেছে।



প্রশাসনের দায়িত্বপূর্ণ পদে থাকা এক শিক্ষক এ ঘটনার মদদ দিয়েছেন এবং এই হামলার নেপথ্যে ছিল কমিটি ভাঙার ষড়যন্ত্র এমই অভিযোগ করেছেন ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা।

এদিকে, অনুসন্ধানে জানা যায়, ২১ আগস্ট বুধবার মধ্যরাতে মওলানা ভাসানী হলের ছাত্রলীগের এক পক্ষের ওপর অপর পক্ষের হামলার জন্য প্রায় এক সপ্তাহ আগে থেকেই বর্তমান ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদকের বাইরে ‘প্রক্টরপন্থি গ্রুপ’ হিসেবে পরিচিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মওলানা ভাসানী ও শহীদ রফিক-জব্বার হলের নেতাকর্মীরা প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। হামলার প্রস্তুতি হিসেবে রামদা, জিআই পাইপসহ বিভিন্ন ধরনের দেশিয় অস্ত্র মজুদ করেন এ তিনটি হলের নেতাকর্মীরা।

সর্বশেষ, গত শনিবার দুপুরে শহীদ রফিক-জব্বার হলের নেতাকর্মীরা পার্শ্ববর্তী নির্মাণাধীন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের নির্মাণ শ্রমিকদের দিয়ে আড়াই থেকে তিন ফুট লম্বা অর্ধশতাধিক জিআই পাইপ তৈরি করান। পরে পাইপগুলি হলে নিয়ে যান ছাত্রলীগের দুই কর্মী।

এর আগেও তারা একাধিকবার জিআই পাইপ তৈরি করেছেন বলে জানা গেছে।

অপরদিকে, গত বুধবার রাতে মুক্তমঞ্চের কনসার্টকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এ সময় শহীদ রফিক-জব্বার হলের ছাত্রলীগের কর্মীরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রলীগ কর্মীদের অর্ধশতাধিক পাইপ সরবরাহ করে।

পাইপ তৈরির কাজে সহযোগিতাকারী এক নির্মাণ শ্রমিক পাইপ তৈরির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, রফিক-জব্বার হলের মিঠুন কুণ্ডু পাইপ বানানোর জন্য বলে গিয়েছিলেন। আমরা প্রায় ৩৫ পাইপ কেটে দিয়েছি। পরে ওই হলের দুইজন ছাত্র এসে পাইপগুলো নিয়ে গেছেন।

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রক্টর হিসেবে অধ্যাপক তপন কুমার সাহাকে দায়িত্ব দেন তিনি। বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুর রহমান ও সম্পাদক রাজিব আহমেদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করার কারণে বর্তমান প্রক্টর অধ্যাপক তপন কুমার সাহাসহ প্রশাসনের একটি অংশের দূরত্ব তৈরি হয়।

গত ২১ মে রাজধানীর গাবতলীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর ভিলেজ লাইন পরিবহন শ্রমিকদের হামলার ঘটনায় শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন। এ সময় প্রক্টর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বাইরে রেখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের শিক্ষাথী ও ছাত্রলীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম বিপুল, ছাত্রলীগ কর্মী আসিফ, শহীদ রফিক-জব্বার হলের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিঠুন কুণ্ডুকে নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেন।

অপরদিকে, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনার বিচার দাবি এবং দায়িত্ব পালনে প্রক্টরের ব্যর্থতাকে দায়ী করে ওই রাতেই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহমেদসহ অন্যান্য ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন এবং প্রক্টর অধ্যাপক তপন কুমার সাহার পদত্যাগ দাবি করে প্রক্টর অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেন।

পরে বর্তমান প্রক্টর পরিকল্পিতভাবে ছাত্রলীগের মধ্যে বিভেদ তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন জাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। সে সময় উপাচার্যের হস্তক্ষেপে বিষয়টি সমঝোতা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১২ সালের ২৮ এপ্রিল সাংস্কৃতিক কর্মীদের মারধরের ঘটনায় মিঠুন কুণ্ডুর বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও সে সময় তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবিরের প্রশাসন মিঠুন কুণ্ডুকে নির্দোষ ঘোষণা করেন।

যদিও তাকে আসামি করে মামলা করেন মারধরের শিকার সাংস্কৃতিক কর্মীরা। অভিযোগ রয়েছে, মিঠুন কুণ্ডুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা করার জন্যই সে সময় প্রশাসন তাকে নির্দোষ ঘোষণা করেছিল।

গত ৩ জুলাই দুপুর দেড়টার দিকে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ১৫/২০ জন শিক্ষার্থী আল বেরুণী (সম্প্রসারিত ভবন) হলের পরিসংখ্যান বিভাগের ৪২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রিয়াদকে পিটিয়ে আহত করেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আসিফের (রসায়ন বিভাগ, ৩৯তম ব্যাচ) নির্দেশে মারধর করা হয়েছে বলে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের কাছে অভিযোগ করেছেন আহত রিয়াদ।

সে সময় প্রক্টর তপন কুমার সাহা এ ঘটনার যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। একাধিক সহকারী প্রক্টর একাধিকবার প্রক্টরকে বিষয়টির ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন বলেও জানা গেছে।

এদিকে, বেশ কিছুদিন ধরে ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠনের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বাইরে এই গ্রুপটির বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে মূল কমিটিকে বিতর্কিত ও বিলুপ্ত করার উপায় হিসেবে সংঘর্ষের পরিকল্পনা করা হয়। গুরুত্ব বাড়ানোর লক্ষ্যেই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার দিনটিকে বেছে নিয়ে এই হামলা চালানো হয়েছে বলে ছাত্রলীগের নেতাদের মাধ্যমে জানা গেছে।

এছাড়া দায়িত্বশীল একটি পর্যায় থেকে নতুন কমিটি হলে তাদের ব্যাপারে সুপারিশ ও হামলার ঘটনার পর সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে বলে জুনিয়র নেতা কর্মীদের আশ্বাস দেন সিনিয়র নেতাকর্মীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহমেদ বলেন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড যারাই করুক, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মদদ দিচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধেও আমরা সোচ্চার।

তিনি বলেন, ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করে। এই আদর্শ থেকে বিচ্যুত হওয়া যাবে না। বিচ্যুত হলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অপরদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তপন কুমার সাহা বলেন, ৩ জুলাই মারধরের ঘটনার তদন্ত কাজ প্রায় ৮০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ছাত্রলীগের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির বিষয়ে তিনি বলেন, ছাত্রলীগ তাদের গতিতে চলবে। প্রশাসনও তাদের গতিতে চলবে। ছাত্রলীগের রাজনীতিতে আমি কোনো হস্তক্ষেপ করিনি। আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এসেছে, সেগুলো মিথ্যা।

বিভিন্ন হলে অস্ত্র মজুদের বিষয়টি তার কাছে কোনো তথ্য নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, তথ্য পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।