ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

পুনঃনিরীক্ষণে কোটি টাকার বাণিজ্য!

ইসমাইল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪২৭ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৪
পুনঃনিরীক্ষণে কোটি টাকার বাণিজ্য!

ঢাকা: পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল চ্যালেঞ্জ করে আসে না কাঙ্খিত ফল। পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করে টাকা গচ্চা দিয়ে আসছেন পরীক্ষার্থীরা।

আর এতে মোটা অঙ্কের টাকা চলে যাচ্ছে বোর্ড কর্তৃপক্ষের কাছে। এইচএসসি পরীক্ষার ফলের পর এবারও কোটি কোটি টাকা গচ্চা দিতে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

চলতি বছর প্রকাশিত উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর ‘অনাকাঙ্খিত’ ফল পেয়ে পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করেন শিক্ষার্থীরা। এবার পুনঃনিরীক্ষার আবেদন পড়েছে দুই লাখ ১৫ হাজার ৩৬০টি উত্তরপত্রের।

গত ১৩ আগস্ট আটটি সাধারণ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের ২০১৪ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। এবার গড় পাসের হার ৭৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ। সারাদেশে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭০ হাজার ৬০২ জন।

শিক্ষার্থীরা টেলিটক মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে ১৪ আগস্ট থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন জানান।

প্রতিটি বিষয় বা পত্রের জন্য ১৫০ টাকা ফি দিয়ে আবেদন করতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের। সে হিসেবে এবার মোট তিন কোটি ২৩ লাখ চার হাজার টাকা আয় করেছে ১০টি বোর্ড।
অকৃতকার্য হওয়া, প্রত্যাশার চেয়ে কম নম্বর পাওয়া পরীক্ষার্থীরাই এ আবেদন করেছেন বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।

গত বছর এইচএসসিতে আগের ফল চ্যালেঞ্জ করে ১০ বোর্ডে দুই লাখ ৩৬ হাজার ৮৮৮টি উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষার আবেদন পড়ে। চ্যালেঞ্জ করে মাত্র দুই হাজার ১৬৭ জন শিক্ষার্থীর ফলাফলে পরিবর্তন আসে।

অথচ প্রতিটি পত্রের জন্য ১৫০ টাকা হিসাবে দুই লাখ ৩৬ হাজার ৮৮৮টি উত্তরপত্রের জন্য শিক্ষার্থীরা ১০টি বোর্ডে জমা দিয়েছিলেন তিন কোটি ৫৫ লাখ ৩৩ হাজার ২০০ টাকা।

এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১২ সালে এইচএসসিতে ৬৩ হাজার ৮৯৪ জন পরীক্ষার্থী এক লাখ ৮১ হাজার ৮৭৭টি উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষার জন্য আবেদন করেছিলেন।
দিন দিন পরীক্ষার্থীর সংখ্যার পাশাপাশি উত্তরপত্র মূল্যায়নের এ সংখ্যাও বাড়ছে। কিন্তু হচ্ছে না পদ্ধতির পরিবর্তন।

বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ বিশাল অঙ্কের টাকা বরাদ্দ হয় শুধু উত্তরপত্রের নম্বর গণনার কাজে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। নম্বর গণনার নামে শিক্ষক নিয়োগ করা হলেও প্রতি উত্তরপত্রের জন্য ব্যয় হয় মাত্র আট টাকা।

বর্তমানে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোনো পরীক্ষার ফল চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করা হলে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে।

দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, আবেদনগুলোর জন্য প্রধান পরীক্ষকদের চিঠি দিয়ে সংশ্লিষ্ট উত্তরপত্রগুলো পুনঃনিরীক্ষণ করা হবে।

কিন্তু এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষাসহ অন্য পাবলিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে এ নিয়ম পুরোপুরি উল্টো। শুধু নম্বর গণনা না করে উত্তরপত্র পুনঃমূল্যায়ন করা হলে ফলাফলে আরও পরিবর্তন আসতে পারে বলে মনে করেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

বিভিন্ন বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকরা জানান, প্রচলিত পদ্ধতিতে ফল পুনঃনিরীক্ষায় তিনটি বিষয় দেখা হয়।
পুনঃনিরীক্ষায় উত্তরপত্রের ভেতরের নম্বরগুলো যোগ করে ওপরে তোলা হয়েছে কি-না, ওএমআর ফরমে বৃত্ত ভরাটে যতো নম্বর আছে ততো নম্বর দেওয়া হয়েছে কি-না এবং খাতার কোথাও নম্বর দিতে বাদ আছে কি-না।

বোর্ড সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, উত্তরপত্র পুনঃমূল্যায়নের প্রবিধান না থাকায় বর্তমানে শুধুই নম্বর গণনা করতে হয়। প্রবিধানমালা পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত এটা করা সম্ভব নয়।

এই পদ্ধতির কারণে পরীক্ষার উত্তরপত্র ‘পুনঃনিরীক্ষার’ নামে প্রতারিত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এতো টাকা আদায়ের কোনো যৌক্তিকতা আছে কিনা- তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

তবে নম্বর গণনার পাশাপাশি উত্তরপত্র পুনঃমূল্যায়ন হলে ফলাফলে আরও ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে বলে মনে করেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করে প্রত্যাশিত ফল না পাওয়া শিক্ষার্থীরা বলছেন, শুধু নম্বর গণনা না করে উত্তরপত্র পুনঃমূল্যায়ন করলে ফলাফলে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। এজন্য বর্তমান পদ্ধতির পরিবর্তন প্রয়োজন।

কিন্তু প্রবিধান পরিবর্তন করার কোনো পরিকল্পনা এই মুহূর্তে বোর্ডগুলোর নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এছাড়া দ্রুততম সময়ে ফল প্রকাশ এবং বিপুল সংখ্যক আবেদনের কারণে পুনঃমূল্যায়নও সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান একটি বোর্ডের চেয়ারম্যান।

আন্তঃশিক্ষা সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তাসলিমা বেগম বলেন, এবারও পূর্বের নিয়মে পুনঃনিরীক্ষণ করা হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৪২৬ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।