ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

দুর্নীতি কমিয়ে আনতে বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগে পরিবর্তন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৫
দুর্নীতি কমিয়ে আনতে বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগে পরিবর্তন ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: দুর্নীতি কমিয়ে আনতে বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগে পরিবর্তন আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) রাজধানীর পলাশীর ব্যানবেইস সম্মেলন কক্ষে বেসরকারি শিক্ষক নির্বাচন ও নিয়োগ সংক্রান্ত কর্মশালায় তিনি একথা বলেন।



শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ঘুষ, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি আমাদের সমাজে বড় ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এ ধরনের লেনদেনের সরাসরি অভিযোগ আমাদের কাছে আসে। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের স্বার্থে শিক্ষাকে এ ব্যাধি থেকে মুক্ত রাখতে হবে। এজন্য বিদ্যমান শিক্ষক নিয়োগ পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে, যেখানে দুর্নীতির সুযোগ কম থাকবে।

তিনি বলেন, বর্তমানে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শতভাগ টাকা দেয় সরকার। কিন্তু শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া সরকারের হাতে নেই।

মন্ত্রীরাও এ ধরনের লেনদেনের সঙ্গে জড়িত ইঙ্গিত দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নতুন যে পদ্ধতি কার্যকর হবে, সেজন্য আমাদেরও স্বচ্ছ হতে হবে। তা না হলে কোনো লাভ হবে না। কারণ, আমরা মন্ত্রীরাও ঘুষ নিয়ে যখন কোনো শিক্ষককে নিয়োগ দেই, তখন সেই শিক্ষক ঘুষের লাখ লাখ টাকা তোলার চাপেই থাকেন। এতে তার পক্ষে সুষ্ঠুভাবে শিক্ষাদান সম্ভব হয় না।

তিনি বলেন, আগে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ নিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা সিনিয়রদের বিবেচনা করতাম, আবার ওপরেরও চাপ থাকত। কিন্তু এটা পরিবর্তন করে দক্ষতার ভিত্তিতে নিয়োগ করতে হবে।

পরিবর্তিত পদ্ধতিতে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষমতা সরাসরি প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির হাতে থাকবে না জানিয়ে তিনি বলেন, এতে গভর্নিং বডির ক্ষমতা কমে যাবে, এ ধারণা পোষণ করার কিছু নেই। কারণ, শুধু শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া গভর্নিং বডির কাজ নয়, প্রতিষ্ঠানের গুণগতমান বৃদ্ধি করার অনেক কাজ রয়েছে তাদের। কারণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির ক্ষমতা, স্বার্থ, প্রতিযোগিতার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শিক্ষার মান উন্নয়ন।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের সংখ্যাতাত্ত্বিক উন্নতি হয়েছে, কিন্তু গুণগতমান বৃদ্ধি পায়নি। এটা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। সম্প্রতি কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু ছাত্ররা নয়, শিক্ষকরাও যা করছেন তা লজ্জাজনক। তাই জ্ঞানের সঙ্গে বিবেকেরও সমন্বয় ঘটাতে হবে।

কর্মশালায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচায অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, শিক্ষক নিয়োগ এখন টাকা তৈরির যন্ত্র (মানি মেকিং মেশিন) হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই পরিবর্তিত নিয়ম বাস্তবায়ন কঠিন হবে।  

তিনি বলেন, যেকোনো মূল্যে এটার পরিবর্তন করতে হবে। কারণ, বর্তমানে গভর্নিং বডি নিয়ে প্রচুর মামলা চলছে। তার অধিকাংশই দলীয় কর্মীদের বিভাজন। তাদের লক্ষ্য কীভাবে চেয়ারম্যান হওয়া যাবে।

তিনি বলেন, সম্প্রতি টাঙ্গাইলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা আমার নামে চিঠি পাঠিয়ে পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন। তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এটা শুধু কলেজে না, বিশ্ববিদ্যালয়েও হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান বলেন, টাকার মাধ্যমে শিক্ষক হওয়ার ফলে শিক্ষকদের ওপর এক ধরনের চাপ তৈরি হচ্ছে। কিন্তু বিদ্যমান আইনে তা রোধে আমাদের তেমন কিছুই করার নেই। তাই পরিবর্তন আনা হচ্ছে।

তিনি বলেন, নতুন নিয়মে চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষক নিয়ে তার তালিকা ডাটাবেইজ সিস্টেমে রাখা হবে। উপজেলা, জেলা কিংবা বিভাগ অনুযায়ী এটা হতে পারে। পাশাপাশি কেবল লিখিত নয়, শিক্ষক প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।

কর্মশালায় আরও বক্তব্য রাখেন বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) চেয়ারম্যান আশীষ কুমার সরকার, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৫
আইএএ/এসএন/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।