ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

সিলেটে ৬০০ বিদ্যালয়ে নেই খেলার মাঠ

নাসির উদ্দিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬১৫ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৫
সিলেটে ৬০০ বিদ্যালয়ে নেই খেলার মাঠ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সিলেট: দুধের স্বাদ যেমন পানিতে মেটে না, তেমনি খেলাধুলা ছাড়া পূর্ণতা পায় না শৈশব। যান্ত্রিক আগ্রাসনে ছেদ পড়েছে দুরন্ত শৈশবের চঞ্চলতায়।

শিক্ষার্থীদের জীবন এখন বিদ্যালয়ের চার দেয়ালে বন্দি। তাই ইট-পাথরে শৈশব-কৈশোর হয়ে উঠছে রংহীন, রসহীন।

শিক্ষাজীবনে চিত্ত-বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম খেলাধুলা। কিন্তু মাঠের অভাবে সিলেটের শিক্ষার্থীরা সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত। খেলাধুলার বিকল্প হিসেবে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে কম্পিউটার কিংবা মোবাইল গেম।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কম্পিউটার কিংবা মোবাইল গেম খেলতে গিয়ে শিশু কিশোরদের ইন্দ্রিয় এক স্থানে স্থির হয়ে থাকে। যার প্রভাব পড়ে মানসিক বিকাশেও।

এক সময় সিলেটের চারপাশে ছিল সবুজের সমারোহ। বিস্তৃত ছিল খেলার মাঠ। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলাতেও ছিল পারদর্শী। কিন্তু অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শিক্ষাব্যবস্থা বাণিজ্যিক হয়ে পড়ায় শিক্ষার্থীদের জীবন এখন চার দেয়ালে বন্দি।

শিক্ষার্থীদের সকালে ঘুমকাতুর অবস্থায় বিদ্যালয়ে ঢুকতে হয়। তারপর রুটিন মাফিক সারাদিনের কাজ। ফলে সিলেটের মতো দেশের বড় শহরের শিক্ষার্থীরা বেড়ে উঠছে চিত্ত-বিনোদন ও খেলাধুলা ছাড়াই।

সিলেট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, সিলেটের ১২টি উপজেলায় ৬০৫টি সরকারি-বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় খেলার মাঠ নেই।

এর মধ্যে সিলেট সদর উপজেলায় ১৩৯, দক্ষিণ সুরমায় ৬৩, ফেঞ্চুগঞ্জে ১৯, বালাগঞ্জে ৫২, বিশ্বনাথে ৪৭, গোলাপগঞ্জে ৫৩, বিয়ানীবাজারে ৬৫, গোয়াইনঘাটে ৩৭, জকিগঞ্জে ৪৯, কানাইঘাটে ৩৮, কোম্পানীগঞ্জে ২১ ও জৈন্তাপুর উপজেলায় ২২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অনুমতিপ্রাপ্ত ৬৬, স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ১৫৩ এবং এমপিওভুক্ত ৩৮৬ বিদ্যালয় রয়েছে।

বিধি অনুযায়ী, নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপনে মেট্রো এলাকায় দশমিক ২৫ একর, পৌর ও শিল্প এলাকাতে দশমিক ৩০ একর, মফস্বলে দশমিক ৭৫ একর জমি থাকা আবশ্যক। কিন্তু এ নিয়মের তোয়াক্কা না করেই সিলেটে অসংখ্য বিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে।

বিশেষ করে শিক্ষা বাণিজ্যের কারণে বাসা-বাড়িতে স্কুল কলেজ গড়ে ওঠায় শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে না মুক্ত আকাশ এবং সবুজ খেলার মাঠ।

জেলার বিভিন্ন স্থানে যে সব খেলার মাঠ বা খালি জায়গা দেখা যায়। সেখানে প্রতিনিয়তই গড়ে উঠেছে ইমরাত। ফলে খেলাধুলার পাশাপাশি শরীরচর্চা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।

সিলেটের ওয়েসিস হসপিটালের চিকিৎসক ডা. রেদওয়ান আফরোজ তানিন বাংলানিউজকে বলেন, টেলিভিশন বা কম্পিউটারের সামনে বেশিক্ষণ দৃষ্টি থাকলে ইন্দ্রিয় এক স্থানে স্থির হয়ে থাকে। বিশেষ করে শিশু -কিশোররা একাধারে এভাবে বসে থাকলে তাদের মনের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। কখনও মানসিক চাপ থেকে শিশু-কিশোররা অসুস্থ হতে পারে।

এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে খেলাধুলার বিকল্প নেই বলে মনে করেন তিনি।

নগরীর রায় নগরের বাসিন্দা রাজু আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, শৈশব-কৈশোরে পড়ালেখার পাশাপাশি বিদ্যালয়ে খেলাধুলা করেছি। কিন্তু আমার সন্তানরা সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

নগরীর উপশহর এলাকার আরেক অভিভাবক আব্দুস সাত্তার আজাদ বলেন, শিশুদের বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ নেই, এমনকি শরীরচর্চা (পিটি) করার স্থানও নেই। প্রতিযোগিতার পেছনে ছুটতে গিয়ে একঘেঁয়েমিতে কাটছে তাদের শৈশব। এর প্রভাব পড়ছে শিশুর মানসিক বিকাশে।

সিলেটের বাফুফে ফুটবল একাডেমির অর্গানাইজিং সেক্রেটারি এবং ডিস্ট্রিক্ট ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মাহি উদ্দিন সেলিম বাংলানিউজকে বলেন, খেলাধুলা শরীরচর্চা পড়ালেখার একটি অংশ। নগরীর সবকটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে কোনো খেলার মাঠে নেই। নেই হাঁটাহাঁটি করার মতো পর্যাপ্ত স্থানও।

মাহি উদ্দিন সেলিম বলেন, সরকার থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুমতি দেওয়ার আগে দেখা প্রয়োজন মাঠ ও গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা আছে কি না। স্কুল পর্যায় থেকে খেলোয়াড় সৃষ্টি না হওয়ায় আমরা খেলাধুলায় পিছিয়ে রয়েছি।

সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, নগরীতে স্কুল পর্যায়ে মাঠ থাকার নিয়ম-নীতি কেউ মানছে না।   তাই শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলা, শরীরচর্চা এবং সঠিক বিকাশের জন্য নীতি-নির্ধারকদের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

বাংলাদেশ সময়: ০৬১৪ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৫
এনইউ/টিআই/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।