ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

গবেষণা প্রবন্ধে জালিয়াতি জাবির তিন শিক্ষক-শিক্ষার্থীর!

ওয়ালিউল্লাহ, জাবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩০ ঘণ্টা, জুন ১, ২০১৫
গবেষণা প্রবন্ধে জালিয়াতি জাবির তিন শিক্ষক-শিক্ষার্থীর!

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের দুই শিক্ষক ও ফার্মেসী বিভাগের এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ‘ব্রিটিশ মাইক্রোবায়োলজি রিসার্চ জার্নাল’ এ গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশে জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে ‘আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) এর একজন জেষ্ঠ্য বিজ্ঞানী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।



খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক আফরোজা পারভীন, মো. মাহমুদুল হাসান এবং ফার্মেসী বিভাগের শিক্ষার্থী মো. রাকিব হাসানের বিরুদ্ধে ‘ব্রিটিশ মাইক্রোবায়োলজি রিসার্চ জার্নাল’ এ প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশে জালিয়াতির (সায়েন্টিফিক মিসকনডাক্ট) অভিযোগ করেছেন আইসিডিডিআরবি’র জেষ্ঠ্য বিজ্ঞানী ও এন্টেরিক অ্যান্ড ফুড মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবরেটরির প্রধান কায়সার আলী তালুকদার। গত ২২ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে পাঠানো একটি চিঠিতে তিনি জালিয়াতির দায়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান।

এঁদের মধ্যে আফরোজা পারভীন ও মাহমুদুল হাসান একই বিভাগের ৩১ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। পরবর্তীতে তাঁরা দুজন পর্যায়ক্রমে ঐ বিভাগে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। তাঁরা স্বামী-স্ত্রী এবং রাকিব নিজেকে মাহমুদুল হাসানের মামাতো ভাই বলে পরিচয় দেন।

প্রশাসন বরাবর দেওয়া চিঠিতে কায়সার আলী তালুকদার বলেন, ডায়রিয়া রোগের জন্য দায়ী ‘সালমোনেলা’ প্রজাতির ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকরী প্রতিষেধক তৈরির উদ্দেশ্য পরিচালিত গবেষণা সম্প্রতি প্রবন্ধ আকারে ‘ব্রিটিশ মাইক্রোবায়োলজি রিসার্চ জার্নাল’ এ প্রকাশ করেছেন আফরোজা পারভীন। জার্নালের ২০১৫ সালের ভলিউম ছয় ও ইস্যু নম্বর একের ৪১-৫৩ পৃষ্ঠায় এই প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে।

আইসিডিডিআরবি’র আর্থিক সহায়তায় তাঁর তত্ত্বাবধানে এই গবেষণা প্রকল্পটি পরিচালিত হয়েছে এবং প্রবন্ধ আকারে প্রকাশিত গবেষণাটির পরিকল্পনা করেছেন তিনি নিজে। কিন্তু গবেষণা প্রবন্ধটি আফরোজা পারভীন তাঁর অনুমতি ছাড়াই জার্নালে প্রকাশ করেছেন।

প্রবন্ধের পাণ্ডুলিপিতে গবেষণার নকশাকারী হিসেবে আফরোজা পারভীন ও মাহমুদুল হাসানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে তাঁরা দুজন গবেষণার পরিসংখ্যানিক বিশ্লেষণ, গবেষণার ক্রম, পাণ্ডুলিপির প্রথম খসড়া তৈরি ও প্রাসঙ্গিক সাহিত্য অনুসন্ধান করেছেন। পাশাপাশি গবেষণার বিশ্লেষণ ব্যবস্থাপনা ও সাহিত্য অনুসন্ধানকারী হিসেবে মো. রাকিব হাসানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

কায়সার আলী তালুকদারের অভিযোগ, উক্ত গবেষণার সঙ্গে মাহমুদুল হাসান ও রাকিব হাসান কোনভাবেই যুক্ত ছিলেন না। গবেষণার তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কায়সার আলী তালুকদার ও ইসরাত জাহান আজমীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। একই সঙ্গে সব সহ-লেখক এই গবেষণা প্রবন্ধটি পড়েছেন এবং এর চূড়ান্ত পাণ্ডুলিপিটি অনুমোদন করেছেন বলেও পাণ্ডুলিপিতে তথ্য দেওয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।

জানা যায়, প্রবন্ধে ২০০৭ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত আইসিডিডিআরবি’র নমুনা ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু আফরোজা পারভীন ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১২ এর মার্চ পর্যন্ত ওই ল্যাবরেটরিতে গবেষণা কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন। ২০১২ সাল পর্যন্ত কাজ করে তিনি কিভাবে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সংগৃহীত নমুনা পেলেন তা নিয়েও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন কায়সার আলী তালুকদার। আফরোজা পারভীন ২০০৮ সালের নভেম্বর থেকে ২০০৯ এর জুন পর্যন্ত প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সোহেল আহমেদ এবং কায়সার আলী তালুকদারের যৌথ তত্ত্বাবধানে গবেষণা শিক্ষার্থী ছিলেন।
চিঠি দেওয়ার বিষয় নিশ্চিত করে কায়সার আলী তালুকাদার বলেন, আমার আইন উপদেষ্টা বিষয়টি দেখছেন।

আফরোজা পারভীন বলেন, দীর্ঘ দিন অপেক্ষা করার পরও দুই তত্ত্বাবধায়কের সহযোগিতা না পেয়ে প্রবন্ধটি প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছি। গবেষনায় অন্য যে দুজনের নাম দেওয়া হয়েছে তারা আমাকে গবেষণায় সাহায্য করেছেন।

রাকিব হাসান বলেন, গবেষণার কিছু কাজ আমি করেছি। নাম দেওয়ার বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। এ বিষয়ে জানার জন্য মাহমুদুল হাসানকে দুই দফায় ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন ধরেন নি।

সোহেল আহমেদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের গবেষণা করার সুযোগ কম। তাই আমরা আমাদের ছাত্রদের বিভিন্ন জায়গায় গবেষণা করার জন্য পাঠাই। কিন্তু এই ধরণের ঘটনা আমাদের জন্য অসম্মানজনক। এতে আমাদের শিক্ষার্থীদের সততা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেন, বিষয়টি নিয়ে একটি চিঠি আমাদের কাছে এসেছে। আমরা খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করব।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩০ ঘণ্টা, জুন ১, ২০১৫
আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।