ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় বললে মানুষ যেন চিনতে পারে

মুশফিক সৌরভ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫১ ঘণ্টা, জুলাই ১, ২০১৫
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় বললে মানুষ যেন চিনতে পারে ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বরিশাল: বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়কে (ববি) এমন এক অবস্থানে নিয়ে যাওয়া হবে যেন নাম বললেই মানুষ এ বিশ্ববিদ্যালয়টি চিনতে পারে। এমনই স্বপ্নের কথা জানিয়েছেন সম্প্রতি ববির উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. এস এম ইমামুল হক।



গত ৩১ মে ববিতে যোগ দেন তিনি। এরআগে গত ২৫ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ৪ বছরের জন্য তাকে এ পদে নিয়োগ দেন। দক্ষিণবঙ্গের সর্বোচ্চ এ বিদ্যাপীঠের বর্তমান অবস্থা, ভবিষ্য‍ৎ পরিকল্পনা, গবেষণা, আবাসন, সংকট ও সম্ভাবনাসহ নানা বিষয়ে কথা হয় নতুন উপাচার্যের সঙ্গে।

বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, এ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে তার পরিকল্পনা ও স্বপ্নের কথা। নতুন কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ সম্পর্কে ড. ইনামুল বলেন, কর্মক্ষেত্র ভালোই মনে হচ্ছে। এটা আরো ভালো করতে হবে এবং তার সুযোগও রয়েছে।

ববি নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয় নতুন তাই এর সম্প্রসারণ দরকার। দুই ধরনের সম্প্রসারণ, একটা কাঠামোগত অপরটা একাডেমিক। এরমধ্যে কাঠামোগত সম্প্রসারণ হচ্ছে আরো হবে, আর একাডেমিক সম্প্রসারণের জন্য আমাকে পরিকল্পিতভাবে এগোতে হবে।

তিনি বলেন, হুট করে কয়েকটা বিভাগ খুলে দিলাম, পরে দেখা গেলো আমি শিক্ষক পাচ্ছি না। চিন্তা-ভাবনা করছি আগামীতে হয়তো এই এলাকার উপযোগী কিছু বিভাগ খোলা হবে। এর মধ্যে একটা বিভাগ হলো কোস্টাল অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ (উপকূলীয় ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা গবেষণা)। তবে এর আগে আমি সিলেবাস ঠিক করবো। সেটা হয়ে গেলে কিছু শিক্ষক নিয়োগ করবো, তারপরে ছাত্র ভর্তি করবো। আমি ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়তে চাই না।

বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণা নিয়ে তিনি বলেন, বিজ্ঞানভিত্তিক যেসব বিভাগগুলো ইতোম্যধ্যে খোলা হয়েছে সেখানে গবেষণাগার দরকার। এসব  গবেষণাগারগুলো অগ্রধিকার ভিত্তিতে স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের দাবিতে ভাষার ওপর দক্ষতা বাড়াতে প্রাথমিকভাবে ল্যাংগুয়েজ সেন্টার খোলার চিন্তা রয়েছে। সেখানে শুরুতে হয়তো ইংরেজিসহ ২/৩টি ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা করবো। পরে  ধীরে ধীরে আরো সংযোজন করবো।

বিশ্ববিদ্যালয়কে ডিজিটালাইজড করা ও সরকারের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের অগ্রগতি সম্পর্কে তিনি বলেন,  ববি ইতোমধ্যেই ডিজিটাল, ‍কারণ এটা ডিজিটালাইজড করা হয়েছে। তবে অসুবিধা যেটা হচ্ছে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ নেই। পল্লীবিদ্যুৎ থেকে সংযোগ নেওয়া হলেও আধঘণ্টা পর পর লোডশেডিং হয়। ফলে ডিজিটাল পদ্ধতিতে আমি কাজ করতে পারছি না। এ সমস্যার সমাধান যতো দ্রুত করা সম্ভব সে চেষ্টা করছি।

শিক্ষার মান উন্নয়নে সিনিয়র শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনিয়র শিক্ষকের অভাব রয়েছে। কিছু সিনিয়র শিক্ষক যেভাবেই হোক বিভিন্ন বিভাগে ৬ মাসের জন্য হলেও এনে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা রয়েছে।

ববিতে নতুন অনুষদ ও বিভাগ খোলার বিষয়ে তিনি বলেন, নতুন অনুষদ খোলার কোনো সুযোগ নেই, যা ছিল হয়ে গেছে। আর বিভাগ চালু করার আগে সিলেবাস তৈরি ও শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। ববির পরীক্ষাবিধি চূড়ান্তের বিষয়ে তিনি বলেন,  গত ৭ জুন একাডেমিক কাউন্সিল করে পরীক্ষাবিধি চূড়ান্ত করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন নিয়োগ, সহকারী রেজিস্ট্রারকে মারধর, ছাত্রদের গ্রুপিং, হুটহাট পদোন্নতিসহ নানা বিতর্কিত বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অতীতে যেটা হয়েছে তা নিয়ে আমার কিছই করার নেই।   অতীতে যে কাজগুলো সঠিক হয়নি সে কাজগুলো করা থেকে বিরত থাকতে হবে আমাকে। দ্বিতীয়ত নিয়োগ ও পদোন্নতি নিয়মের মধ্যে থেকে করা হবে। আর উপযুক্ত ব্যক্তিকেই উপযুক্ত যায়গায় বসাতে হবে তা না হলে একটা প্রতিষ্ঠান ভালোভাবে চলে না।

‍স্থায়ী ক্যাম্পাসের কার্যক্রম কবে নাগাদ পুরোপুরি শুরু হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্থায়ী ক্যাম্পাস তো চালু হয়ে গিয়েছে, পুরোপুরি আসলে সময়ের ব্যাপার। এটা আমার হাতে নেই। নকশাঁ অনুযায়ী ভবনগুলোর  কাজ শেষ হতে সময় লাগবে। প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হবে আগামী বছর জুন মাসে।

এরপর বাকি কাজ। এটা নির্ভর করছে আর্থিক বিষয়ের ওপর। পুরোপুরি কাজ শেষ হতে আগামী ৪ বছরও লাগতে পারে আবার ৬ বছরও লাগতে পারে। চেষ্টা থাকবে যত দ্রুত সম্ভব ক্যাম্পাসের কাজ শেষ করার।

শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য পর্যাপ্ত পরিবহন ব্যবস্থা নেই। তিনি এ বিষয়ে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সবচেয়ে পুরাতন বিশ্ববিদ্যালয় সেখানেই কিন্তু আমরা পর্যাপ্ত পরিবহনের ব্যবস্থা করতে পারিনি। এটা সম্ভব নয়, যখন জনসংখ্যা বেড়ে যায় তখন সবার জন্য পরিবহন দেওয়া সম্ভব হয়না। তবে আমরা আরো দুটি বিআরটিসি বাসের জন্য বলেছি, হয়তো রোজার পর থেকে আমাদের পরিবহন পুলে এগুলো সংযোজিত হবে। আর হলগুলো চালু হয়ে গেলে ছাত্রদের চাপটা কমে যাবে।

শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কমকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন ব্যবস্থা কবে নাগাদ চালু হবে এর জবাবে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে দুটি ভবন হয়েছে, পরে আরো ভবন করা হবে। এটা সম্ভব হবে না হওয়ার কোনো কারণ নেই।

এর আগে একটি ঘটনায় কয়েক শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা সম্পর্কে উপাচার্য বলেন,  কেউ অন্যায় করলে তাকে শাস্তি দিতে হবে। শাস্তি বিভিন্নভাবে হতে পারে। যেহেতু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাই তাকে আমরা জেলখানায় পাঠাতে পারবো না। আমি চাইব না আমার সময়ে কেউ শাস্তি পাক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে জামায়াত-শিবির বা বিরোধী শক্তির বাঁধা সম্পর্কে তিনি বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয় চালু হয়েছিলো বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সময়কালে।   প্রথম উপাচার্য যে ছিলেন তিনি নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন ছিলেন। তাই তার হাত দিয়ে জামায়াত-শিবিরের কেউ নিয়োগ পেয়েছে তা আমি বিশ্বাস করতে চাই না।

ববিতে উপ উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা না হলেও চলে। কোষাধক্ষ্যকে প্রধান্য দেওয়া হচ্ছে। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ উপাচার্য দেরিতে আসে এতে অসুবিধা নেই। উপ উপাচার্য সময়মতোই আসবেন। বিদায়ী উপাচার্য একাই ২৩টি পদে ছিলেন এ সম্পর্কে তিনি বলেন, এটা সমর্থনযোগ্য নয়। আমি এটা পছন্দও করিনা। এটা সমাধানে যা দরকার সেটা আমি শুরুও করেছি।

ছাত্র রাজনীতি সম্পর্কে উপাচার্য বলেন, ছাত্র রাজনীতি অবশ্যই সমর্থন করি। তবে অসুস্থ ছাত্র রাজনীতি সমর্থন করিনা। ছাত্ররা যদি রাজনৈতিক বিষয়ে সচেতন না হয় তাহলে সমাজ এগোবে কেমন করে? তার মানে এই নয় টেন্ডারবাজি, লুটপাট করবে, এগুলো ছাত্র রাজনীতির অংশ নয়।

বরিশালের সামাজিক কার্যক্রম নিজেকে সম্পৃক্ত করার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি সামাজিক কর্মী, লায়ন্স মেম্বার। সুতরাং বরিশালে আমি যখন আছি এমনিতেই জড়িয়ে যাবো। এজন্য মানসিকভাবে আমি প্রস্তুত। ববিকে কোন অবস্থায় দেখতে চান জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি একটি উন্নত বিশ্ববিদ্যালয় দেখতে চাই, যেটি বিশ্বে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় বললে যেন লোকজন চিনতে পায়।

বরিশাল অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এ অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের জন্য আমার বক্তব্য একটাই, সরকারের যে উদ্যোগ, অর্থাৎ অঞ্চল ভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো করা হয়েছে। এর প্রধান কারন ওই এলাকার শিক্ষার্থীদেরকে উচ্চ শিক্ষার প্রতি আগ্রহী করা, আর নিজ এলাকায় থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারলে অর্থনৈতিক সাশ্রয়ও হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫১ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০১৫
এসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।