ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

প্রাথমিক শিক্ষক বদলিতে নতুন নীতিমালা

নূরনবী সিদ্দিক সুইন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৬ ঘণ্টা, জুলাই ৬, ২০১৫
প্রাথমিক শিক্ষক বদলিতে নতুন নীতিমালা

ঢাকা: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের বদলির ক্ষেত্রে নতুন নীতিমালা জারি করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

রোববার (৫ জুলাই’২০১৫) মন্ত্রণালয়ের বিদ্যালয়-২ শাখা থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে।



নতুন নির্দেশিকা জারির ফলে এর আগের সকল নীতিমালা, প্রজ্ঞাপন ও আদেশ বাতিল হয়ে গেছে। সদ্য জাতীয়করণকৃত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পদায়নের ক্ষেত্রেও নতুন নির্দেশিকা অনুসরণ করতে হবে।

তবে সদ্য জাতীয়করণকৃত এসব বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষকের নামে আদালত কর্তৃক বদলি স্থগিত থাকবে এমন নির্দেশনা থাকলে তিনি বদলির জন্য বিবেচিত হবেন না।

বদলি কর্তৃপক্ষ
জেলা প্র‍াথমিক শিক্ষা অফিসার তার নিজ অধিক্ষেত্রে একই উপজেলার মধ্যে সংশ্লিষ্ট উপজেলা শিক্ষা কমিটির সুপারিশক্রমে সহকারী শিক্ষকদের আন্ত:বদলির অনুমোদন দিতে পারবেন। পরে উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসার বদলি আদেশ জারি করবেন।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আন্ত: উপজেলা/থানার মধ্যে সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসারের সুপারিশক্রমে বদলি করতে পারবেন। সিটি কর্পোরেশন আওতাধীন থানার ক্ষেত্রেও তিনি এরুপ বদলি করতে পারবেন।

বিভাগীয় উপ পরিচালক তার নিজ অধিক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা/জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের সুপারিশক্রমে সহকারী শিক্ষকদের আন্ত:জেলা বদলি ও প্রধান শিক্ষকদের একই উপজেলা, আন্ত: উপজেলা ও আন্ত:জেলা বদলি করতে পারবেন।

জেলা প্র‍াথমিক শিক্ষা অফিসার ও বিভাগীয় উপ পরিচালকের সুপারিশক্রমে যেকোনো সময় প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের আন্ত:বিভাগ বদলি করতে পারবেন। একইভাবে তিনি সিটি কর্পোরেশন এলাকাধীন থানার ক্ষেত্রে সুপারিশক্রমে প্রধান শিক্ষকদের আন্ত:থানা/আন্ত: বিদ্যালয় বদলি করতে পারবেন।

সর্বোপরী প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জনস্বার্থে যেকোন শিক্ষককে যেকোনো কারণে বদলি করতে পারবে।

সিনিয়র সহকারী সচিব(বিদ্যা-২)জাজরীন নাহার স্বাক্ষরিত এ নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে, সাধারণভাবে প্রতি শিক্ষা বছরের জানুয়ারি-মার্চ মাসের মধ্যে একই উপজেলা/থানা, আন্ত:উপজেলা/থানা/, আন্ত:জেলা, আন্ত: সিটি কর্পোরেশন ও আন্ত:বিভাগ বদলি করা যাবে।

তবে যুক্তিসঙ্গত কারণে এ সময়ের মধ্যে বদলি করা সম্পন্ন না করা গেলে মন্ত্রণালয় কর্তৃক যেকোনো সময়ের মধ্যে বদলি কার্যক্রম সম্পন্ন করা যাবে।

একইভাবে যেসকল বিদ্যালয়ে ৪জন বা তার চেয়ে কম সংখ্যক শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন কিংবা শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত ১:৪০ এর বেশী রয়েছে সেক্ষেত্রে প্রতিস্থাপনপূর্বক সাধারণ বদলি করা যাবে।

উপজেলা/ থানার মধ্যে একইপদে একাধিক প্রার্থী থাকলে তাদের মধ্যে চাকরির জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে বদলি করা যাবে না।

কোটা অনুযায়ী উপর্যুক্ত প্রাথী না পাওয়ায় শুন্য পদ পূরণে নিজ উপজেলা/থানার বাইরে পদায়ন করা শিক্ষকরা নিজ উপজেলায়/থানার মধ্যে বদলি হতে চাইলে বদলি হতে পারবেন। এক্ষেত্রে চাকরির মেয়াদ বা বহিরাগত শিক্ষকের কোটা প্রযোজ্য নয়।

একইভাবে যাদের স্থায়ী ঠিকানা জেলা সদরের পৌরসভা, জেলা সদর বা সিটি কর্পোরেশন হওয়ার পরও পদ শুন্য না থাকায় বাইরে পদায়ন করা হয়েছে তারাও একইভাবে বদলি হতে পারবেন।

বদলির পর একবছর না যাওয়া পর্যন্ত কোনো শিক্ষক পুন:বদলির যোগ্য হবেন না।

কোনো শিক্ষকের স্ত্রী/স্বামী সরকারি বা আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলে তাকে স্ত্রী বা স্বামীর কর্মস্থলে বদলির সুযোগ দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। তবে এ সুবিধা কর্মজীবনে সর্বোচ্চ ২বার নেওয়া যাবে।

বদলির সাধারণ শর্তাবলী
সহকারী শিক্ষক পদে চাকরির মেয়াদ ন্যুনতম ২ বছর পূর্ণ হলে এবং পদ শুন্য থাকলে আন্ত: উপজেলা/থানা, আন্ত:জেলা, আন্ত: সিটি কর্পোরেশন ও আন্ত: বিভাগ বদলি করা যাবে। তবে এই ২ বছরের মধ্যে একই উপজেলায়/থানায় পদ শুন্য হলে বদলি হতে কোনো বাধা থাকবে না। এরুপভাবে বদলির এক বছর অতিক্রান্ত না হলে কোনো শিক্ষক পুন:বদলির জন্য বিবেচিত হবেন না।

প্রধান শিক্ষক বা সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি পেলে তার ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে।

প্রশাসনিক প্রয়োজনে বদলি
প্রশাসনিক প্রয়োজনে যেকোনো সময় যেকোনো শিক্ষককে বদলি করা যাবে। তবে এরুপ বদলির ক্ষেত্রে নিয়মিত সময়ে সংশিষ্ট উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসার/জেলা শিক্ষা অফিসার/বিভাগীয় উপ পরিচালকগণ স্ব স্ব কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে বদলি করবেন। তবে অন্য সময়ে অধিদপ্তরেরর মহাপরিচালকের অনুমোদনক্রমেই কেবল বদলি করা যাবে। প্রশাসনিক কারণে বদলি হলে একবছর অতিক্রান্ত না হলে আবারও বদলি হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন না।

সমন্বয় বদলি
শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত এবং শ্রেণিকক্ষ-ছাত্র অনুপাত ১:৪০ এর বেশী হলে কোনো শিক্ষককে সমন্বয়ের প্রয়োজনে বদলি করা যাবে না। একইভাবে ৫ বা তার কম শিক্ষক বিশিষ্ট বিদ্যালয় থেকে কোনো শিক্ষককে বদলি করা যাবে না। সমন্বয় বদলির ক্ষেত্রে  জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের পছন্দকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। জ্যৈষ্ঠ শিক্ষকগণ বদলি হতে ইচ্ছা পোষণ না করলে কনিষ্ঠদেরকে বদলি করা যাবে।

অবসর উত্তর ছুটিতে যাওয়ার এক বছর সময়ের মধ্যে কোনো শিক্ষককে সমন্বয়ের প্রয়োজনে বদলি করা যাবে না। ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম পর্যন্ত চালু রয়েছে এরুপ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রয়োজনে শিক্ষক বদলি পূর্বক সমন্বয় করা যাবে।

সংযুক্তি
প্রশিক্ষণে যাওয়া, মাতৃত্বকালীন ছুটিতে যাওয়াসহ নানা কারণে শিক্ষক স্বল্পতায় পাঠদান বিঘ্নিত হওয়ার কারণে মহাপরিচালক, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রস্তাবের ভিত্তিতে বা প্রশাসনিক প্রয়োজনে মন্ত্রণালয় যেকোনো শিক্ষককে যেকোনো সময় যেকোনো বিদ্যালয়ে সংযুক্তি দিতে পারবে। মন্ত্রণালয় ছাড়া বদলির অপর কোনো কর্তৃপক্ষ এমন সংযুক্তি দিতে পারবে না।

বৈবাহিক কারণে বদলি
চাকরি লাভের পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন এমন নারী শিক্ষক স্বামীর স্থায়ী ঠিকানায় বদলি হতে চাইলে শুন্য পদের বিপরীতে বদলি করা যাবে। তবে একটি শুন্য পদের বিপরীতে একাধিক আবেদনকারী থাকলে জ্যৈষ্ঠতার ভিত্তিতে বদলি করতে হবে। একইভাবে বিধবা বা তালাকপ্রাপ্তা শিক্ষিকাকে তার পিতার স্থায়ী ঠিকানায় বদলি করা যাবে।

অন্যান্য বদলি
কোনো শিক্ষক চাকরিরত অবস্থায় দুরারোগ্য ব্যাধিতে (ক্যান্সার, লিভার সিরোসিস, এইচআইভি পজিটিভ ভাইরাস)আক্রান্ত হলে কিংবা বাইপাস সার্জারি হলে উক্ত শিক্ষকের চিবিৎসার  সুবিধার্থে অন্যত্র বদলি করা যাবে। । তবে সিটি কর্পোশেন এলাকায় এরুপ বদলি প্রযোজ্য হবে না।

একইভাবে কোনো শিক্ষক দুর্গম এলাকায়(হাওর,বাওড়, চর, দ্বীপাঞ্চল)১০ বছর কর্মরত থাকলে ওই শিক্ষককে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুন্য পদ থাকা সাপেক্ষে একই উপজেলার সুবিধাজনক বিদ্যালয়ে বদলি করা যাবে। পদ শুন্য হওয়ার আগে অগ্রিম বদলির আদেশ দেওয়া যাবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৬ ঘণ্টা, জুলাই ০৬, ২০১৫/আপডেডেট-১৬০০ ঘণ্টা।
এনএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।